দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমান সময়ে সেলফি খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে কম-বেশি সবাই সেলফি শেয়ার করছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে বানররাও পিছিয়ে নেই। তারাও সেলফি শেয়ার করছে। অবাক করা বিষয় হলেও ঘটনা সত্য।
দাঁত বের করে বড় বড় চোখে খুবই স্বাভাবিক ভাবে প্রথম সেলফি তোলে একটি নারী বানর। সে যদি জানতো ইন্টারনেটে লাখ লাখ বার দেখা হয়েছে তার ছবি তবে নিশ্চয়ই খুশি হত।
ঘটনাটি ঘটে সুলায়েসি দ্বিপে। পুরস্কার জেতা বৃটিশ বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রগ্রাহী ডেভিড স্ল্যাটারের ক্যামেরায় প্রথম সেলফি তোলে এই বাঁদর। ডেভিড ওই দ্বিপে যান এই কালো ঝুঁটিত্তয়ালা ছোটো লেজওয়ালা বানর জীবন যাপনের ছবি ক্যামেরায় ধারণ করতে। প্রথম দিকে ক্যামেরার ফ্ল্যাশ দেখে ভয় পেলেও পরবর্তিতে খুবই স্বাভাবিক হয়ে যায় প্রাণিগুলো। তারা ডেভিডের বিভিন্ন সামগ্রী এদিক থেকে ওদিক নিতে থাকে। এমনকি ক্যামেরাও সরিয়ে ফেলে। কিভাবে ছবি তুলতে হয় তাও তারা আয়ত্ত্ব করে ফেলে।
কি করে দেখার জন্য ডেভিড ত্রিপদী স্ট্যানের সাথে ক্যামেরা আটকে দেয় যাতে বানরদের এটি সরাতে না পারে। পরে তিনি সরে যান। অবাক হয়ে খেয়াল করলেন বানরেরা নিজেদের ছবি তুলছে। অধিকাংশ ছবি নারী বানরদের তোলা হলেও সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছিল একটি পুরুষ বানর। প্রায় একশটি ছবি তোলা হয়। এরমধ্যে মাত্র চারটি পরিষ্কার ছবি পাওয়া গেছে।
পরে ডেভিড ছবিগুলো ইন্টারনেটে প্রকাশ করলে তা আলোড়ন ফেলে। ফিডব্যাকে তারা জানায়, ছবিগুলো তাদের অনেক হাসিয়েছে। সমস্যা হচ্ছে ছবিগুলোর স্তত্বাধিকার ডেভিডের নয়। কেননা এগুলো তুলেছে বাঁদরেরা। তাই অনেক অর্থ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হলেন তিনি। তবে এটা নিয়ে ডেভিডের খুব একটা আফসোস নেই। অর্থ পেলে তিনি বন্য প্রাণী রক্ষা কমিটিকে দিয়ে দিতেন।
সেলফি দেখে যতটা হাসি আসুক না কেন, এই নিরীহ প্রাণীর জীবন ধারণের প্রকৃত ঘটনা শুনলে সবারই খারাপ লাগবে। মানুষ মাংসের জন্য এই বাদরগুলো শিকার করে। বর্তমানে দ্বিপে ৪০,০০০ থেকে ৬০,০০০ বাঁদর আছে। গত চল্লিশ বছরে প্রায় ৮০% বাঁদর শেষ হয়ে গেছে। যে পুরুষ বাঁদরটি ছবি তুলেছিল তাকে ডেভিড এক ভয়াবহ ফাঁদ থেকে রক্ষা করেছিল। মাত্র এক প্যাকেট সিগারেটের বিনিময়ে ছাড়িয়ে নিয়েছিলেন তিনি। এদের জীবনের মূল্য এতটাই কম।
৪৯ বছর বয়সের ডেভিড স্ল্যাটার গত ১৫ বছর ধরে বন্য প্রাণীর ছবি তুলছেন। তার জীবনে এটা অন্য রকম ঘটনা। মানুষের মনকে আলোড়িত করে এমন ছবি পেতে একজন ক্যামেরাম্যানকে লাখ লাখ বার বাটন চাপতে হয়। তাই তিনি কৃতজ্ঞতা আর ধন্যবাদ জানিয়েছেন এই বাঁদরগুলোকে। আবার ওই দ্বিপে যাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন তিনি।
নিরীহ এই বাঁদরগুলোকে রক্ষার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ডেভিড। সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার আবেদনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সচেতনতা সৃষ্টির জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
সেলফি তোলার এই ঘটনায় একটা ব্যাপার স্পষ্ট। মানুষের সাথে প্রাণীগুলোর অনেক মিল রয়েছে। এগুলোর বুদ্ধিমত্তাও উঁচুমানের। পৃথিবী থেকে এ পর্যন্ত অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই বাঁদরগুলোও হয়তো এক সময় হারিয়ে যাবে। তখন তাদের তোলা এই সেলফি দেখে কেবল আফসোসই হবে।
তথ্যসূত্রঃ dailymail