দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভাইরাস হলো একটি ডিএনএ সমৃদ্ধ প্রোটিনের আবরণ। মজার বিষয়টি হলো ভাইরাসের মাধ্যমে ছড়ানো রোগের ক্ষেত্রে ভাইরাস কোন বাহক নয়। এটি মানবদেহ বা প্রানীর দেহে প্রবেশ করে তার প্রতিলিপি তৈরি করে। এই প্রতিলিপি তৈরির সময় মানবদেহ কিংবা প্রাণীর নিজস্ব কোষের গঠন ভেঙ্গে ফেলে।
আজ আমরা পাঠকদের জন্য তুলে ধরবো পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক ভাইরাসগুলোর কথা। তাহলে চলুন জেনে নিই সেই ভাইরাসগুলো সম্পর্কে।
১. মারবুর্গ ভাইরাস
পৃথিবীর সবচেয়ে বিপদজ্জনক ভাইরাসের নাম বলতে গেলে প্রথমেই আসে মারবুর্গ ভাইরাসের নাম। জার্মানির লান নদীর নিকটবর্তী শহরের নামে নামকরণ করা হয়েছে এই ভাইরাসের। হেমোরেজিক জ্বর করার ক্ষেত্রে এই ভাইরাসটি বেশ মারাত্মক। এই ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত জ্বরের ক্ষেত্রে প্রায় ৯০ শতাংশ মৃত্যুর আশংকা থাকে।
২. এবোলা ভাইরাস
এবোলা ভাইরাসের নামটি এসেছে আফ্রিকার বুন্ডিবিগিয়ো দেশের একটি স্থান থেকে। আসলে এখানেই প্রথম এই ভাইরাসটি সনাক্ত করা হয় বলে এটিকে এই জায়গার নাম অনুসারে নামকরণ করা হয়। বর্তমানে গিনি, সিয়েরালিওন এবং লাইবেরিয়াসহ আফ্রিকার অনেক দেশেই এই ভাইরাসটি মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই নিয়ে সতর্ক বার্তা জারি করা হয়েছে।
৩. বার্ড ফ্লু
চীনের হাঁস-মুরগীর খামারে এই ভাইরাসটি প্রথম দেখ দেয়। বলা হয়ে থাকে উত্তরমেরুতে থাকা পরিযায়ী পাখিদের মাধ্যমে এই ভাইরাসটি চীনের দেশে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে চীনের হাঁস মুরগীর সংস্পর্শে থাকা মানুষ এটি দ্বারা আক্রান্ত হয়। এশিয়াতে এই ভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা বেশি কেননা এই অঞ্চলের মানুষগুলো হাঁস মুরগীর সংস্পর্শে বেশি থাকে।
৪. লাসা ভাইরাস
নাইজেরিয়ার এক সেবিকা প্রথম এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন। ইদুর জাতীয় প্রাণীর মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়। বিজ্ঞানীদের ধারণা পশ্চিম আফ্রিকার প্রায় ১৫ শতাংশ ইদুরেই এই ভাইরাসটি রয়েছে। এটি একবার সংক্রমিত হতে শুরু করলে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে।
৫. মাচুপো ভাইরাস
বলিভিয়ার হেমোরেজিক জ্বরের ক্ষেত্রে দায়ী হলো মাচুপো ভাইরাস। এটি বলিভিয়ায় ‘ব্লাক টাইপুস’ হিসেবেও বেশি পরিচিত। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মাত্রাতিরিক্ত জ্বর হয় এবং সঙ্গে শুরু হয় মারাত্মক রক্তপাত। সংক্রামক এই ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটাতে পারে, ফলে এটি মহামারীতে রূপ নিতে পারে।
৬. কিয়াসানু ফরেস্ট ভাইরাস বা কেএফডি
১৯৫৫ সালে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলবর্তী বনভূমিতে প্রথম কিয়াসানু ফরেস্ট ভাইরাস বা কেএফডি ভাইরাস আবিষ্কৃত হয়। ধারণা করা হয় ইঁদুর, পাখি এবং বন্য শুকর কেএফডি ভাইরাস বহন করে থাকতে পারে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ইদুররা বাঁশের ফুল খেতে শুরু করে। এটি ভারতের একটি অঞ্চলের মানুষের প্রিয় খাবার। ফলে তাদের ঘরে হামলা করে ঝাঁকে ঝাঁকে ইঁদুর।
৭. ডেঙ্গু
ডেঙ্গু সারাবিশ্বে পরিচিত একটি মারাত্মক ভাইরাস। মশা বাহিত এই ভাইরাসে প্রতি বছর পর্যটনের জন্য বিখ্যাত থাইল্যান্ড এবং ভারতের মতো দেশে প্রায় ৫০ থেকে ১০০ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হন। তবে পর্যটকদের চেয়ে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য এই ভাইরাস বড় হুমকি। আমাদের দেশেও গ্রীষ্মকালীন সময়ে এই ভাইরাসে আক্রান্তের প্রকটতা দেখা যায়।
করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯)
করোনা ভাইরাস রোগ ২০১৯ বা কোভিড-১৯ মানুষের একটি সংক্রামক ব্যধি যা গুরুতর তীব্র শ্বাসযন্ত্রীয় রোগলক্ষণসমষ্টি সৃষ্টিকারী করোনা ভাইরাস ২ (সার্স-কোভ-২) নামক এক ধরনের ভাইরাসের আক্রমণে হয়ে থাকে।
এই ব্যাধিটি সর্বপ্রথম ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহানে শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালের প্রারম্ভে ব্যাধিটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং বৈশ্বিক মহামারীর রূপ ধারণ করেছে।
ব্যধিটির সাধারণ উপসর্গ হিসেবে জ্বর, সর্দি এবং শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে মাংসপেশীর ব্যথা, বারবার থুতু সৃষ্টি ও গলায় ব্যথা দেখা যেতে পারে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপসর্গগুলো নমনীয় আকারেই দেখা যায়, তবে কিছু গুরুতর ক্ষেত্রে ফুসুফুস প্রদাহ (নিউমোনিয়া) এবং বিভিন্ন অঙ্গের বিকলতাও দেখা যায়।
সংক্রমিত হবার পরে এই ব্যাধিতে মৃত্যুর হার গড়ে ৩.৪%, যেখানে ২০ বছরের নিচের রোগীদের মৃত্যুর হার ০.২% এবং ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে রোগীদের প্রায় ১৫%। এই রোগ সাধারণত সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সৃষ্ট বায়ুকণা থেকে ছড়ায়।
এছাড়া সংক্রমিত ব্যক্তির জীবাণু হাঁচি-কাশির কারণে বা জীবাণুযুক্ত হাত দিয়ে স্পর্শ করার কারণে পরিবেশের বিভিন্ন বস্তুর পৃষ্ঠতলে লেগে থাকলে এবং সেই ভাইরাসযুক্ত পৃষ্ঠতল অন্য কেও হাত দিয়ে স্পর্শ করে নাকে-মুখে-চোখে হাত দিলে করোনা ভাইরাস নাক-মুখ-চোখের শ্লেষ্মাঝিল্লী দিয়ে দেহে প্রবেশ করে থাকে। আক্রান্ত হওয়ার ২-১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়; গড়ে ৫ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা যায়।
সাধারণত নাক বা গলার শ্লেষা পরীক্ষাগারে নিয়ে বিপরীত প্রতিলিপিকরণ পলিমার শৃঙ্খল বিক্রিয়ার (rRT-PCR) মাধ্যমে রোগনির্ণয় করা হয়ে থাকে। এছাড়াও স্বাস্থঝুঁকি, বক্ষের সিটি চিত্রগ্রহণের (সিটি স্ক্যানের) মাধ্যমে ফুসফুস প্রদাহের (নিউমোনিয়ার) উপস্থিতি ও উপসর্গ থেকেও ব্যাধিটি নির্ণয় করা যায়। এটি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।
This post was last modified on জানুয়ারী ১৬, ২০২৪ 3:39 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ১৬ কার্তিক ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত হওয়ার পর কোন কোন ওষুধ আপনি খাবেন?…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার গুলশানে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ৫০১তম পরিচালনা…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মুক্তির মাত্র ১ দিন বাকি থাকতেই বলিউডের ‘ভুলভুলাইয়া ৩’ ও…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ তিনটার দিকে হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন বাংলাদেশ নারী…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বেসিস-এর নতুন সভাপতি হলেন এম রাশিদুল হাসান এবং জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি…