দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। একজন মানুষ শুধু জীবদ্দশায় অন্যের উপকারে আসে তা নয়, আধুনিক যুগে বিজ্ঞানের কল্যাণে মৃত্যুর পরও একজন মানুষ পারে আরও কয়েক জন মৃত্যু পথযাত্রিকে বাঁচাতে। বলা হচ্ছে, একজন মৃত ব্যক্তি পারেন সাত জনের জীবন বাঁচাতে।
লিভার, কিডনি, হার্ট, অগ্নাশয় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তবে আশার কথা হল এইসব অঙ্গ প্রতিস্থাপন করে আক্রান্ত রোগীকে বাঁচান সম্ভব। আক্রান্ত রোগীরাও আশায় বুক বেঁধে থাকে হয়তো একজন উপযুক্ত অঙ্গদাতা তার জীবন রক্ষা করবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা হয়ে ওঠে না।
মৃত্যুর পর পরই মানবদেহে পচন ধরে। তাই দ্রুত সৎকারের ব্যবস্থা করতে হয়। মানুষটি শুধুই স্মৃতি হয়ে থাকে। কিন্তু সেই দেহটি অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে ৭ জন মৃত্যুপথযাত্রীকে স্মৃতি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এমনটাই জানিয়েছেন দিল্লীর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। দিল্লীর একজন সার্জেন্ট ডাঃ সমীরণ নন্দি বলে ন,অঙ্গ দানে মানুষের প্রান বাঁচানো সহজ এবং কম ব্যয়বহুল হয়। কারন অঙ্গ দানে একটা প্রান বাঁচছে, অথচ দাতা ব্যক্তির কোন ক্ষতি হচ্ছে না। কারন তিনি মৃত।
অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য (কিডনি ছাড়া) ব্যক্তিকে ব্রেন ডেড হতে হয়। তবে জীবিত অবস্থায়ই একটি কিডনি দান করা যায়। তাও হয় খুব সামান্য, বিশেষ করে নিকট আত্মীয়ের ক্ষেত্রে। হার্ট, লিভার, ফুসফুস, কিডনি, অগ্নাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র ইত্যাদি প্রতিস্থাপনের জন্য রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বজায় রাখতে হয়। কিন্তু সচেতনতার অভাবে অঙ্গ প্রতিস্থাপন সম্ভব হয় না। মৃত ব্যক্তির পরিবারকে ঐ সময় প্রতিস্থাপনের কথা বলা যায় না, আবার অনেক সময় তারা অঙ্গ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। কিছু কিছু সময় অঙ্গ প্রতিস্থাপনের উপযোগী থাকে না। লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হলেও নানাবিধ কারণে হাজারেরও কম প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়।
কিছু কিছু দেশ যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ক্রোয়েশিয়া, স্পেন ইত্যাদি অঙ্গ প্রতিস্থাপনের হার অনেক বেশি। ক্রোয়েশিয়া ৩৬.৫ শতাংশ, স্পেন ৩৫ শতাংশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২৬ শতাংশ অঙ্গ প্রতিস্থাপন করে থাকে। সেই তুলনায় এশিয়ার দেশগুলোয় এই হার অনেক কম। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র গড়ে বছরে ৬০০০ লিভার প্রতিস্থাপন করে সেখানে ভারত মাত্র ২৪০০ টি প্রতিস্থাপন করে। মোট জনসংখ্যার তুলনায় তা খুবই সামান্য। যদিও ভারত পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ।
বাংলাদেশে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে অঙ্গ প্রতিস্থাপন শুরু হলেও তা সীমিত পর্যায়ে। কারণ হিসেবে বলা যায় সাধারণ মানুষের প্রতিস্থাপন সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব, পাশাপাশি চিকিৎসকেরাও এ ব্যাপারে সচেতন নয়। মৃত ব্যক্তির অঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রসার লাভ করলে সীমিত ব্যয়ে অনেক রোগীর জীবন বাঁচান সম্ভব। জীবিত অবস্থায় অঙ্গদানে অনেক সময় দাতার জীবনহানির ঝুঁকি থাকে।