দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনি যদি শোনেন তেল-গ্যাস ছাড়ায় চলবে গাড়ি তাহলে অবশ্যই আশ্চর্য হবেন। কিন্তু ঘটনাটি সত্যি। বগুড়ার আমির হোসেন এমন এক বিস্ময়কর গাড়ি উদ্ভাবন করেছেন যে, তেল-গ্যাস ছাড়াই চলবে ৮০ কিমি বেগে!
তেল-গ্যাস ছাড়াই চলবে- এমন গাড়ি উদ্ভাবন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বগুড়ার এক যন্ত্রকৌশলী আমির হোসেন। পরিবেশবান্ধব এই গাড়ির কয়েকটি মডেল ইতিমধ্যেই চলাচল করছে বগুড়া এবং সিলেট শহরে। আমির হোসেন উদ্ভাবন করেছেন ইলেকট্রিক টারবাইন সিস্টেমের গাড়ি। নাম দিয়েছেন ‘রফ-রফ তাহিয়া’, যার প্রকৃত অর্থ হলো ‘সুন্দর ও দ্রুততম যান’।
ক্রমান্বয়ে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি এবং পরিবেশ দুষণের কারণে তিনি দীর্ঘদিন চিন্তামগ্ন ছিলেন কিভাবে একটি জ্বালানি সাশ্রয় ও বায়ুদূষণ রোধের যান তৈরি করা যায়। তার দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার ফসল আজকের এই ফলাফল। এক বছরের চেষ্টায় ২০১২ সালে পুরোপুরি সফল হন আমির হোসেন। তাঁর উদ্ভাবিত ৫ আসনের ২৫০ কেজি ওজনের গাড়িটি চলতে তেল-মবিল-গ্যাস কিছুিই লাগে না। পরিবেশবান্ধব গাড়িটি আরোহীদের নিয়ে চলতেও পারে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার বেগে । বগুড়া থেকে ঢাকায় আসা যাওয়া করতে গাড়ীটির খরচ পড়বে মাত্র ৮ টাকা। গাড়ীটির বিশেষত হল সাধারণ ব্যাটারী চার্জ গাড়ী চালালে ব্যাটারীর চার্জ এক সময় শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এ গাড়ি চলার সময় একই সঙ্গে ব্যাটারিও চার্জ হয়ে যাবে। সব মিলিয়ে ২৫ টাকায় চলবে পুরো আট ঘণ্টা।
গাড়ির ভিডিও দেখুন
গাড়িটির গতিশক্তির উৎস হিসেবে রয়েছে ৬০ ভোল্টের একটি ইলেকট্রিক টারবাইন মোটর। মোটরটি চলে একটি দেড় বাই ২ ইঞ্চির কার্বন দিয়ে। টানা ৮ ঘণ্টা চলার পর এই কার্বন ক্ষয় হয়ে যায়। তখন এটি পরিবর্তন করে আবার নতুন আরেকটি লাগিয়ে নিতে হয়। আর তাই খুব সামান্য পয়সা খরচ করতে হয়। আবার পরিবর্তন করতেও সময় লাগে মাত্র ২ মিনিটের মতো। এই কার্বনটির দাম মাত্র ২৫ টাকা। ধোঁয়াবিহীন হওয়ার কারণে গাড়িটিকে পরিবেশবান্ধব গাড়ি বলা হচ্ছে।
আমির হোসেন ও তার বিস্ময়কর গাড়ি ‘রফ-রফ তাহিয়া’
গাড়িটি চালানোও খুব সহজ। অটোপুশে চাপ দিলেই ঘুরতে থাকে গিয়ার হুইল। তখন গতি পায় এরসঙ্গে লাগানো চাকাগুলো। এরপর এক্সিলারেটর এবং ব্রেক দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় এর গতি। চালকের সামনে একটি মনিটরও রয়েছে। এই মনিটরে গাড়ির গতি এবং অন্যান্য তথ্য দেখা যায়। গাড়ির বিভিন্ন ইলেকট্রনিক লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য রয়েছে ডায়নামা নিয়ন্ত্রিত একটি ব্যাটারি। হেডলাইট, ব্যাকলাইট এবং ব্রেকলাইটও শক্তি পায় এ ব্যাটারি থেকে। প্রচলিত মোটরযানের মতো ‘রফ-রফ তাহিয়া’য় জটিল ইঞ্জিনিয়ারিং ফাংশন নেই বলে এটি ঝুঁকিমুক্ত। আবার যান্ত্রিক কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেই বললেই চলে।
বর্তমানে ৩টি মডেলে এই গাড়ি বানানো হয়েছে। এরমধ্যে দুটি কার এবং একটি বাস। এখন বগুড়া এবং সিলেটে চলছে ৬টি ‘রফ-রফ তাহিয়া’। প্রচলিত ৫ আসনের বিদেশী গাড়ির দাম কমপক্ষে ১০ লাখ। অথচ ‘রফ-রফ তাহিয়া’ কিনতে খরচ পড়বে মাত্র ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা।
আমির হোসেনের মতো মানুষ বাংলাদেশের মফস্বল শহরেও যে আধুনিক এবং দৃষ্টিনন্দন গাড়ি তৈরি করতে পারেন তা প্রমাণ করেছেন। তবে প্রচেষ্টার সঙ্গে দরকার পৃষ্ঠপোষকতা। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের সাধারণ মানুষও আমির হোসেনের এই ‘রফ-রফ তাহিয়া’ গাড়ি কিনতে পারবেন। এটিই বা আামদের জন্য কম কিসের?
আমির হোসেন এখন কাজ করছেন ৪ সিলিন্ডারবিশিষ্ট ৪৫০ সিসির সিএনজি মোটরসাইকেল নিয়ে। সরকারি সহযোগিতার অভাব জানিয়ে আমির সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এই উদ্ভাবনের পরও ব্যাংক তাঁকে সহযোগিতা করছে না। সহযোগিতা পেলে দেশকে দেখিয়ে দিতে পারবেন- আমরা বাঙালিরাও পারি। আমাদের মেধা আছে, আমরাও পরিশ্রম করে অনেক কিছুই করতে পারি।’ তিনি গাড়িটির সরকারি অনুমোদন ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।