দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আবারও এরশাদ ‘নাটক’ জমতে শুরু করেছে। মন্ত্রিসভা থেকে দলের নেতাদের পদত্যাগের কথা বলেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। গতকালই সংবাদ মাধ্যমগুলোতে এমন খবর আসে। তবে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
গতকাল রবিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত দলের পার্লামেন্টারি বৈঠকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ. এম. এরশাদ মন্ত্রিসভা থেকে দলের নেতাদের পদত্যাগ করার কথা বলেন। তার এই বক্তব্যের সঙ্গে আবার একমত পোষণ করেছেন দলের পার্লামেন্টারি পার্টির প্রধান এবং বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ নিজেও। অবশ্য গতকালের বৈঠকে এই বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। পার্লামেন্টারি পার্টির পরবর্তী বৈঠকে এ বিষয়ে দলের মন্ত্রীরা নিজেদের সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে সবাই সম্মত হয়েছেন এমন কথায় জানানো হয়।
আজ সোমবার দশম সংসদের তৃতীয় অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে। এই অধিবেশনকে সামনে রেখেই জাপার পার্লামেন্টারি পার্টির ওই বৈঠক হয়। রওশন এরশাদের সভাপতিত্বে বৈঠকে এরশাদও যোগ দেন। বৈঠকে উপস্থিত জাপার একাধিক সংসদ সদস্য সংবাদ মাধ্যমকে জানান, দলের নেতাদের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের বিষয়টি উত্থাপন করেন এরশাদ নিজেই। এসময় এরশাদ বলেন, ‘আমরা যে বিরোধী দল, এটা দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না। আমরা সত্যিকারের বিরোধী দল হতে চাই। কিন্তু মন্ত্রিসভায় থেকে সত্যিকারের বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। আমি বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি, সবখানেই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছি, সরকারের সমালোচনা করছি। কিন্তু মানুষ আমাদের কথা শুনে হাসে, তারা আমাকে বলে-নিজেরা সরকারে থেকে আবার বিরোধিতাও করছে। আমাকে নিয়ে পত্র-পত্রিকায় কার্টুন ছাপা হচ্ছে। এটা আমার জন্য লজ্জার। সেজন্য আমি তোমাদেরকে বলবো (জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের) তোমরা অবিলম্বে সরকার থেকে বেরিয়ে এসো।’
এরশাদের এই বক্তব্যের পূর্ণ সমর্থন দিয়ে রওশন এরশাদ এ সময় বলেন ‘দলের চেয়ারম্যান যেটা বললেন, সেটি সত্য কথা। আসলে সরকারে থেকে কখনও বিরোধী দলের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করা যায় না। বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যেও বিভ্রান্তি রয়েছে। আবার আমাদের অনেক এমপি আমার কাছে অভিযোগ করেছেন যে, তারা দলের মন্ত্রীদের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না। যদি দলের কোনো উপকারে না-ই আসে, তাহলে আর মন্ত্রিসভায় থেকে লাভ কী? সেজন্য আমিও মনে করি, সরকার থেকে বেরিয়ে আসলে দলের জন্যও ভালো হবে। আমরা সত্যিকারের বিরোধী দল হিসাবে ভূমিকা পালন করতে চাই।’
একটি সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যম বলেছে, এরশাদ ও রওশনের বক্তব্যের পর এর জের ধরে জাপার এমপি এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘আমরা মন্ত্রী হয়েছি বলে যা খুশি তা করতে পারি না। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাছাড়া এটি জাপার সরকার নয়, সরকারের নেতৃত্বে আছে আওয়ামী লীগ।’ এ কথার পর এরশাদের উদ্দেশ্যে রাঙ্গা আরও বলেন, ‘স্যার আপনিও কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত, পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদায় রয়েছেন। সুতরাং সিদ্ধান্ত নিতে হলে সবকিছু ভেবে-চিন্তেই নেওয়া উচিত।’
মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের বিষয়ে আলোচনাকালে জাপার অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘সত্যিকারে যখন আমরা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেব, এটা নিয়ে তখন আলোচনা করাই ভালো। আগে থেকে এনিয়ে কথা বললে পত্র-পত্রিকায় নানাভাবে লেখালেখি হবে, এটা ঠিক হবে না।’
বেশ অনেকক্ষণ এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলেও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি গতকালের বৈঠকে। বৈঠকে আজকের সংসদ অধিবেশন এবং কি কি বিষয়ে সমর্থন করা যাবে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়।