দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ উত্তরার দুই ভাই-বোনের আত্নহত্যা নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কেনো দুই ভাই-বোন আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নিলো সে প্রশ্ন এখন তদন্তকারীদের মধ্যেও ঘুরপাক খাচ্ছে। আসলে এর নেপথ্যে কি? সে প্রশ্ন সামনে রেখেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
কি কারণে ঘটলো এমন ঘটনা? হতাশা, মাদক সংক্রান্ত কোনো বিষয়? নাকি বাবা-মা’র বিচ্ছেদ? উত্তরায় সাংবাদিক দম্পতির দুই সন্তানের আত্নহত্যার কারণ এখনও জানা যায়নি। আত্নহত্যার আগে ইংরেজিতে ৬ পৃষ্ঠার নোট লিখে গেছে তারা।
গত সোমবার রাত ১২টায় উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের গাউসুল আজম রোডের ১১ নম্বর বাড়ির ৫ম তলার পৃথক ২ রুম হতে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক জয়শ্রী জামান এবং সাংবাদিক আলিমুল হক টিপুর মেয়ে চিরশ্রী জামান (১৮) ও ছেলে মোহাম্মদ বিন আলীম (১৫) এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে দু’জনের লাশ গতকাল আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পুলিশ ঘটনস্থল হতে ইংরেজিতে লেখা ৬ পৃষ্ঠার একটি নোট উদ্ধার করে। ওই নোটের শিরোনাম ছিল ‘দি ডিপারচার’। পুলিশ জানিয়েছে, পারিবারিক অশান্তির কারণেই ভাই-বোন একসঙ্গে আত্মহত্যা করেছে। বাবার পরকীয়া প্রেমের পরে বিয়ে এবং তার পরবর্তী নানা বিষয় নিয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে পুলিশ ধারণা করছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যম বলেছে, মৃত্যুর আগে দুই ভাই-বোন যে নোট রেখে গেছে, সেখানে একটি জায়গায় তারা লিখেছে-‘আমরা এমন দেশে যাচ্ছি সেখান হতে আর ফেরা হবে না।’ অন্যটিতে লিখা হয়েছে-‘আমি যা কিছু দেখেছি, যা জেনেছি, আর কেও তা দেখবে না- জানবে না।’
উল্লেখ্য, নিহত দুই ভাই-বোন ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করতো। তাদের বাবা আলিমুল হক বর্তমানে চীনে রয়েছেন। সেখানে আলিমুল হক রেডিও বেইজিংয়ে কাজ করেন। নিহতদের বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়েছে বেশ আগেই। আলিমুল হক টিপু এক সময় দৈনিক ইত্তেফাকে কাজ করতেন। তিনি দিগন্ত টিভির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই টিভিতে কাজ করার সময় প্রেম করে এক সংবাদ পাঠিকাকে বিয়ে করেন আলিমুল হক। বিষয়টি ওই সময় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।
পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যম জানায়, চিরশ্রী ‘ও’ লেভেল পাস করেছে ও আলীম নবম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। পুলিশের মনে করছে, তাদের জীবনে নানা ছন্দপতনের তথ্য জেনেছে পুলিশ। বাবা দেশের বাইরে এবং মা কর্মক্ষেত্রে থাকায় তারা অভিভাবকদের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ে। যে কারণে চিরশ্রী এবং আলীম মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে হতাশা দানা বাঁধে। এক পর্যায়ে হতাশা হতে মুক্তির জন্যেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে।
নিহতদের মা জয়শ্রী জামান পুলিশকে বলেছেন, চিরশ্রীর সঙ্গে ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে মোবাইল ফোনে কথা হয় জয়শ্রীর। ওই সময় বাসার বাইরে ছিলেন তিনি। রাত ১১টা ২০ মিনিটে বাসায় ফিরেই পৃথক ২ রুমে চিরশ্রী এবং আলীমের মৃতদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তিনি। পরে পরিবারের লোকজন বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। তবে পুলিশ এখনও নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারছে না। তদন্ত হলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।