দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গতকাল সোমবার আবারও মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। নাটোরের বড়াইগ্রামে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে অন্তত ৩৫ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। এমন এক পরিস্থিতিতে দেশের সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা এবং চালকদের প্রশিক্ষণ ও সচেতন করে তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে।
গতকালও ঘটে গেলো স্মরণকালের আরেক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। প্রাণ দিতে হলো অন্তত ৩৫ জনকে। আরও বহু মানুষকে হয়তো সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করতে হবে। সিরাজগঞ্জ-নাটোরের বনপাড়া রোডে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার হাটি কুমরুল এলাকার রেজুর মোড়ে দুটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে অন্তত ৩৫ জনকে প্রাণ দিতে হলো। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অর্ধ শতাধিক যাত্রী।
ওই দুর্ঘটনায় কেয়া পরিবহন ও অপর একটি বাস মুখোমুখি সংঘর্ষের কারণে দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে ২০ জন ও পরে আরও ১৫ জনের মৃত্যু ঘটে।
এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটেছিল গতকালকের ঘটনায়। ১০ জনের মৃতদেহ মেলে দোমড়ানো বাসের মধ্য থেকে। আবার বাকিদের মৃতদেহ পাওয়া যায় রাস্তা ও মাঠে। দুর্ঘটনায় ছিটকে পড়ে কারো মাথায় আঘাত লাগে কেও গাড়িতে পিসে গেছেন। সব মিলিয়ে এক বিভৎস দৃশ্যের অবতারণা ঘটেছিল গতকালকের ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায়।
বারংবার দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে মানুষ। দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তারা কারণ উল্লেখ করে রিপোর্টও দেন এবং তদন্ত কমিটি কিছু সুপারিশও করে কিন্তু বাস্তবায়ন হতে দেখা যায় না। এই অবস্থা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের অকাশ মৃত্যু ঘটছে, বহু মানুষ সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। আর আমরা সেটি দেখছি। এটি বড়ই লজ্জার বিষয়।
দুর্ঘটনার কারণগুলো অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেখানে জরুরি, সেখানে দুর্ঘটনার পর তদন্ত রিপোর্টগুলো সব সময় ধামাচাপা পড়ে যায়। তদন্ত কমিটি অনেক ক্ষেত্রে সড়কের বাঁককে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। অনেক সময় চালকের অনভিজ্ঞতাকে দায়ি করেন। আবার কখনও পুরোনো বাতিল পরিবহনকেও দায়ি করে থাকেন। কিন্তু কারণগুলো বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হলেও শেষ পর্যন্ত ফাইল বন্দি হয়ে পড়ে এসব রিপোর্ট।
এমন অনেক ঘটনায় রয়েছে যেগুলো সড়ক দুর্ঘটনার মুল কারণ। সেগুলোর দিকে আজ নজর দেওয়া জরুরি। নাটোরের গতকালের যে রোডে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেটি নতুন একটি হাইওয়ে। এটি সম্ভবত বাংলাদেশের একমাত্র টোল রোড। কিন্তু টোল রোড হওয়ার পরও এই রোডটির বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও কিছুদিন আগে রোডের সংস্কার কাজ করা হয়েছে। তারপরও যে রোড থেকে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা আয় হয় সে রোড কেনো ভাঙ্গা-চোরা থাকবে?
গতকাল এই রোডে দুর্ঘটনার পর অনেক টিভি চ্যানেলের আলোচনায় বলা হয়েছে এই রোডে নাটোর যাওয়ার দিকে বামদিকে নীচে পৃথকভাবে সংযুক্ত রয়েছে একটি সড়ক। যাতে ছোট গাড়িগুলো ওই সড়ক দিয়ে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে। করেও তাই। কিন্তু বড় গাড়ি চলাচলে যে হাইওয়েটি রয়েছে সেটি বেশ চওড়া হলেও এতে কোনো ডিভাইডার নেই। এই সড়কটি স্টেট সোজা হওয়ায় গাড়ির স্পিরিট থাকে সব সময় বেশি। আর ডিভাইডার না থাকায় প্রায়ই ঘটছে এমন দুর্ঘটনা। সিরাজগঞ্জ মোড় হতে বোনপাড়া মোড় পর্যন্ত পুরো রাস্তায় দরকার ডিভাইডার। তা নাহলে এমন মর্মান্তিক ঘটনা হয়তো আমাদেরকে আরও দেখতে হবে।
আমরা কেওই চাইনা এমন দুর্ঘটনা আরও ঘটুক। চালকদের সচেতন করে তোলা, রোড ডিভাইডারসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই সড়কের দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব। সারা দেশের দুর্ঘটনা কমাতে চালকদের প্রশিক্ষণ ও সচেতন করে তোলাও জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। আর যেনো অকালে কেও প্রাণ না হানার সেই অঙ্গীকার আমাদের সবার মাঝেই ছড়িয়ে পড়ুক।