দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সভ্য সমাজে এমন ঘটনার কথা কখনও শোনা গেছে কিনা সন্দেহ। কারণ দীর্ঘ ৫ বছর ধরে এক মা ও তার সন্তানকে আটকে রাখা হয়েছিল। অবশেষে ৫ বছরের বন্দীদশা হতে মুক্ত হলেন মা ও তার সন্তান।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, ঘটনাটি ঘটেছে ফেনী শহরে। সেখানকার রামপুর শাহীন একাডেমী সড়কের জনাকীর্ণ এলাকার বিশালাকার একটি বাড়ির কক্ষে ৫ বছর ধরে আটকে রাখা হয় ওই মা ও তার শিশু সন্তানকে। পরে পুলিশ তাদের বন্দীদশা হতে মুক্ত করে।
আটকে থাকার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় দৈনিক ফেনীর সময় পত্রিকায় গত মঙ্গলবার সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হলে জেলার সর্বত্র আলোড়ন সৃষ্টি করে। নজরে আসে পুলিশ সুপার মো: রেজাউল হকের। তাঁর নির্দেশে দুপুরে শুরু হয় অভিযান। সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মুহাম্মদ শামসুল আলম সরকারের নেতৃত্বে ফেনী মডেল থানার ওসি মো: মাহবুব মোর্শেদসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ অভিযান চালায়। একপর্যায়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির আশঙ্কায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরিফুল আলম তানভীর, ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: অসিম কুমার সাহার নেতৃত্বে মেডিকেল টিম, স্টেশন অফিসার মো: জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে ফায়ার বিগ্রেড দলও ঘটনাস্থলে পৌঁছে। রহস্যময় ওই বাড়ির আশপাশে বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এমনকি দূর-দূরান্ত হতে ছুটে আসা সাধারণ মানুষের ভিড় জমে যায়।
বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে শুরু হয় শ্বাসরুদ্ধকর সেই অভিযান। ফায়ার সার্ভিস দল একেএকে ৩টি দরজা কেটে ভেতরে ঢুকে মা জাহারা বেগম রোজী (৪৫) এবং শিশু মেহেদী ইসলাম জিমুনকে (১১) সেখান থেকে উদ্ধার করে। উদ্ধারের পর তাদের দুজনকে ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাদের দেখতে হাসপাতালে যান পুলিশ সুপার মো: রেজাউল হক পিপিএম।
হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, দীর্ঘদিন ঘরে বন্দী থাকায় দুজনই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদেরকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক হবে। তাদেরকে পুলিশ পাহারায় হাসপাতালের একটি কেবিনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়।
দৈনিক ফেনীর সময় পত্রিকার সংবাদটি ছিল এমন:
“শাহীন একাডেমী সড়কে মামার কারাগারে বন্ধী জীমুনের আকুতি ‘পড়তে চাই, আমি মুক্তি চাই’”
বিশেষ প্রতিনিধি : বাবার কাঁধে চড়ে শিশু ছেলের আদালতে হাজিরা কিংবা কারাভোগের নানা কাহিনী শোনা গেলেও এবার মামার কারাগারে মা সহ এক হতভাগ্য শিশুর ৫ বছর বন্ধী জীবনের চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা গেছে। ফেনী শহরের রামপুর শাহীন একাডেমী সড়কের জনাকীর্ণ এলাকায় বছরের পর বছর বিশালাকার একটি বাড়ীর কক্ষে মামার নিষ্ঠুরতার শিকার ওই মা ও শিশুর খোঁজ নেয় না কোন আত্মীয়-স্বজনও। দীর্ঘ ৫ বছরে এক মিনিটের জন্যও মা-ছেলে সূর্যের আলো দেখেনি। অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। গতকাল মঙ্গলবার ওই বাড়ীতে গিয়ে জানা গেছে এ নির্মম কাহিনী।
স্থানীয়রা জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্স শেষ করে ইডেন কলেজে শিক্ষকতা করেছেন জাহানআরা বেগম রোজী (৪৫)। স্বামী উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আবুল কালাম আজাদ ভূঞা। বর্তমানে তিনি সিলেট সদর উপজেলায় কর্মরত বলে জানা গেছে। একমাত্র ছেলে মেহেদী ইসলাম জীমুন এর জন্মের কিছুদিন পর ভেঙ্গে যায় আজাদ-রোজীর সংসার। সেই সাথে যেন রোজী ও তার একমাত্র সন্তানের সব স্বপ্নেরও মৃত্যু ঘটে। খড়গ নেমে আসে মা-ছেলের জীবনে। ২০০৯ সালের শেষ দিকে তাদের শহরের শাহীন একাডেমী রোডের পৈত্রিক বাসার একটি কক্ষে আটক করে রাখে রোজীর বড় ভাই শেরশাহ। তিনি ঢাকার ইস্কাটনে ব্যবসা করেন বলে জানা গেছে। ২ ভাই ৬ বোনের মধ্যে অপর ভাই শাহেনশাহ মানসিক ভারসাম্যহীন। এক বোন ইতিমধ্যে মারা গেছেন। বড় ভাইয়ের ভয়ে অন্য চার বোনের কেউই রোজীর খোঁজ নিতে আসে না। তাদের তিনজন ঢাকায়, অপরজন ফেনী শহরেই বসবাস করেন। তিনি শহরের রামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। শহরের বিশাল বাড়ীতে ২ টি পাকা ঘরের একটিতে দীর্ঘদিন ধরে তালা ঝুলে। এই ঘরে শেরশাহ মাঝেমধ্যে আসতেন বলে স্থানীয়রা জানান। অন্যঘরের ২ টি কক্ষ ভাড়া দেয়া হয়। ভাড়ার ৪ হাজার টাকা দিয়ে চলে রোজী ও তার সন্তানের ভরন-পোষন সব। ভাড়াটিয়ারা জানায়, তালাবন্ধ ওই কক্ষের জানালা দিয়ে চাল-ডাল সহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য দিয়ে থাকেন। এতে মা-ছেলের অর্ধাহারে-অনাহারে কোনরকম দিন কাটে। ভাড়াটিয়ারা না থাকলে ওদের মাঝে মাঝে না খেয়েই থাকতে হয়। ভুতুড়ে ওই কক্ষের ভিতরে একটি লাইট থাকলেও পাখাটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। কক্ষে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস না থাকায় উৎকট গন্ধ বের হয়। ফুটফুটে জিমুন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটে। এক প্রতিবেশী জানায়, একসময়ে ছেলেটি বেশ চঞ্চল ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন বন্ধী থাকায় ধীরে ধীরে শারিরীক প্রতিবন্ধী হয়ে যাচ্ছে। তারা আরও জানায়, সব হারিয়ে রোজিও এখন মানসিক প্রতিবন্ধী। কেউ আসলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। তবে জিমুন ভিতর থেকে কথা বলার চেষ্টা করে। পাশ্ববর্তী ভাড়াটিয়াদের থেকে জানালা দিয়ে সংগ্রহ করে পত্রিকা ও নানা রকম বই পড়ে। একজন ভাড়াটিয়া জানায়, জিমুন অত্যন্ত মেধাবী। কোন ধরনের বই পেলে সহজে মুখস্ত হয়ে যায়। এ প্রতিবেদককে জিমুন জানায়, পড়াশোনার প্রবল আকাঙ্খা থাকলেও সে প্লে-নার্সারীর পর আর পড়তে পারেনি। কথা বলতে চাইলেও মায়ের বাধায় জিমুন থেমে যায়। একপর্যায়ে একটি চিরকুট ধরিয়ে দেয়। এতে লেখা রয়েছে- ‘আমি মেহেদি ইসলাম। আমার আম্মুর সাথে ২০১০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ৫ বছর যাবত আমার মামা অন্যায়ভাবে আটকে রেখেছে। পড়তে চাই, আমি খেলতে চাই। আমি মুক্তি চাই।’
This post was last modified on নভেম্বর ২৭, ২০১৪ 1:13 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শীতকালে চামড়ায় টান ধরা নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে সমস্যা…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অসতর্কতাবশত: হাত থেকে পড়ে গেলেও ফোনের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ওজন কমাতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করা যাবে না, কারণ তাড়াহুড়া করলেই…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দেশের অন্যতম ওটিটি প্লাটফর্ম আইস্ক্রিনে স্ট্রিমিং হতে চলেছে সুপারস্টার শাকিব…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠের কাছ থেকে ফ্ল্যাট উপহার নেওয়া, সাংবাদিককে হুমকি…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ হাতিশালের মধ্যে ঘুমোচ্ছে পুচকে একটি বাচ্চা হাতি। শাবকের ঘুম ভাঙাতে…