মাহবুবর রহমান সুমন ॥ ছোটবেলায় দু’একজনের অটোগ্রাফ নিয়েছিল। কিন্তু বাবা ইনামুল হক যেদিন বলেছিলেন, তুমি এমন কিছু করো যাতে সবাই তোমার অটোগ্রাফ নেবে, সেদিন থেকে আর অটোগ্রাফ নেয়নি ছোট্ট মেয়েটি। সেই মেয়েটি আর কেও নন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা।
শৈশবে সে স্বপ্ন দেখতো ডাক্তার হবে,কিন্তু তাতে যে অনেক পড়া। তারপর স্বপ্ন দেখতো নৃত্যশিল্পী হবে, কিন্তু তার বাবা যে স্বপ্ন দেখতেন মেয়ে হবে একজন গায়িকা তাই শৈশবে গান শেখা দিয়েই শুরু করে শৈশব জীবন ছোট্ট মেয়েটি তিশা।
বর্তমানে সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও মডেল নুসরাত ইমরোজ তিশা। শৈশবটা কেটেছে রাজশাহীতে। সেখানকার রিভারভিউ স্কুল ও পিএন গার্লস স্কুল দিয়েই শুরু হয় জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর শিক্ষা জীবন।
এরপর ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল ত্র্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেন। পরবর্তী সময়ে পড়েন ইনডিপেন্ডন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে মিডিয়া কমিউনিকেশন বিষয়ে।
১৯৯৩ সালে নতুন কুঁড়িতে দ্বিতীয় এবং ১৯৯৫ সালে গোল্ডকাপ জেতার পর সবার নজরে চলে আসেন ১৯৮৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীতে জন্ম নেয়া সেই নুসরাত ইমরোজ তিশা। বর্তমান সময়ে এতটাই নজরে এসেছেন যে, সাকিব আল হাসানের প্রিয় অভিনেত্রীর খেতাবটাও জিতেছেন তিনি।
সেই তিশা থেকে আজকের এই তিশা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান হলো তিশার বাবা ইনামুল হকের। কেননা তিনি সবসময় ‘তিশার বাবা’ নামে পরিচিত হতে চাইতেন বলেই আজ তিনি পরিচিত হতে পেরেছেন ‘তিশার বাবা’ নামে। নতুন কুঁড়িতে দ্বিতীয় হওয়ার মাধ্যমে তার টেলিভিশনে পদার্পণ। তখন শিশুলিল্পী হয়ে গান করতেন। তারপর শখের বসে অনন্ত হীরার ‘সাতগেড়ে কাব্য’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে পা রাখেন মিডিয়া জগতে। সেই থেকে আজও হেঁটে চলেছেন সেই ১৯৯৩ সালের নতুন কুঁড়িতে দ্বিতীয় হওয়া তিশা।
২০০৩ সাল থেকে অভিনয় নিয়ে প্রচুর ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তিশা। ‘এঞ্জের ফোর’ নামে একটি ব্যান্ডদলও গড়ে তুলেছিলেন সেই সময়। তবে বাবার মৃত্যুর পর থেকে গান করা ছেড়ে দিয়েছিলেন এই খ্যাত মডেল কন্যা। ছোট পর্দার নাটক দিয়েই শুরু আর সেই শুরু খ্যাতির। অসংখ্য নাটকে সফল অভিনয়ের পর ২০০৯ সালে প্রথম অভিনয় করেন চলচিত্রে। ‘রুবা হক’ চরিত্রে ‘থার্ড পারসোন সিঙ্গুলার নাম্বার’ চলচ্চিত্র দিয়েই পা রাখেন বড় পর্দায়। সেখানে সফল পারসোন হয়ে আরো কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিশা। সব কয়টি চলচিত্রই হয়েছে ব্যবসা সফল।
১৯৯৫ সালে প্রথম টেলিভিশনে আসা সেই তিশা এক ‘টেলিভিশন’ চলচ্চিত্রে সফল অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দিয়ছেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতকে। অভিনয় জগতের এই গর্ব তিশার প্রিয় চলচিত্র ‘বেবিজ ডে আউট’, ‘হোম ত্র্যালোন’, ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’।
এই খ্যাত অভিনেত্রীর প্রিয় অভিনেতা কে জানেন? তিনি হচ্ছেন মোশাররফ করিম। আর অভিনেত্রী? তিনি ত্র্যাঞ্জেলিনা জোলি। জানতে ইচ্ছে করে না এই প্রিয় তারকার প্রিয় গায়ক, গায়িকা, খেলোয়াড়, লেখক, বই, পোশাক, রং সম্পর্কে?
তিশার প্রিয় রং হচ্ছে সাদা, কালো ও লাল। বাঙালি এই নারী অভিনেত্রী শাড়িই প্রিয় পোশাক। আনিসুল হক, হুমায়ূন আহমেদ তার প্রিয় লেখক। আর বৃষ্টিবিলাস, প্রিয়তমেষু, পারাপার, সেই গুমের পর তার প্রিয় বই। তিশা খেলা প্রিয় না হলেও প্রিয় খেলোয়ার সাকিব আল হাসান।
এক সময় স্বপ্ন গায়িকা হওয়া অভিনেত্রীর প্রিয় গায়ক শূন্য (ব্যান্ড), গায়িকা সুমী (লালন) আর কনা। ব্যস্ত এই অভিনেত্রীর বেড়ানোর স্থান নিজের বাসা। ছোটবেলায় খুব কার্টুন দেখতেন তাই এখন অবসরে কার্টুন এবং রান্নার অনুষ্ঠান দেখে সময় কাটান তিনি। সামাজিক যোগাযোগ সাইটে তিনি বহুল আলোচিত হলেও নিজের কোন আইডি নেই এই অভিনেত্রীর।
২০১০ সালে তিশা নতুন জীবন শুরু করেন সফল পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সাথে। ছোট পর্দায় এই খ্যাত অভিনেত্রী জিতেছেন অসংখ্য পুরষ্কার। জিতেছেন CZFV পুরষ্কার, মেরিল-প্রথম আলো পুরষ্কার, চ্যানেল আই পুরষ্কার, এনটিভি পুরষ্কার। বাংলাদেশে ছোট পর্দাকে তিশা যেমনভাবে জনপ্রিয় করেছেন ঠিক তেমন তিশা ভক্তদের কাছে পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। Information: Interner