দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ হাজার বছর ধরে এভাবেই বসে আছে এক নারী। এক হাত দিয়ে হাঁটু পেঁচিয়ে ধরে, অন্য হাতটি বুকের ওপর আলতো করে রাখা রয়েছে। হাজার বছর ধরে এভাবে বসে থাকা এই নারীকে ফ্রান্সের লিওতে প্রদর্শন করা হবে।
এক হাত দিয়ে হাঁটু পেঁচিয়ে ধরে, অন্য হাতটি বুকের ওপর আলতো করে রাখা রয়েছে। গলা হতে দুই হাঁটুর নিচ দিয়ে লম্বা কাপড়ের বাঁধন। আবার মাথাটি হাঁটুর দিকে ঝোঁকানো। মাথাভরা চুল ঝুলে রয়েছে ঘাড়ে ও কপালে। এভাবেই বসে রয়েছে হাজার বছর ধরে। তবে সে বসে থাকা এক প্রাণহীন অবস্থায়।
পেরুর রাজধানী লিমার অদূরে পাচাকামাক সমাধিস্থলে ১ হাজার বছরেরও আগে এভাবেই বসিয়ে দেওয়া হয় ওই লাশটিকে। তার নামধাম কোন কিছুই জানার কোনো পথ নেই। থাকার কথাও নয়।
১৪৩৮-১৫৩৩ খৃস্টাব্দে মধ্যযুগীয় সেই প্রসিদ্ধ ইনকা সভ্যতার আগে, কোনো এক সময়ে তাকে খাড়াভাবে বসিয়ে মমি করে রাখা হয়েছিল। তবে বিজ্ঞানের কল্যাণে জানা সম্ভব হয়েছে বয়স। যখন তাকে সমাধিতে বসিয়ে দেওয়া হয়, তখন এই নারীর বয়স ছিল ৫০ বছর।
ইতিহাস ঘেটে দেখা যায়, সেই সময় ইনকা সভ্যতার রাজধানীর নাম ছিল কুসকো। এটি হচ্ছে আজকের দিনের লিমা। ইনকা সভ্যতার পূর্বে সেখানে ছিল মাত্র কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। এরা ‘পাচা কামাক’ নামের ভগবানের উপাসক ছিলেন।
এদের বিশ্বাস ছিল, ‘পাচা কামাক’ পৃথিবীর প্রথম মানব এবং মানবী সৃষ্টি করেছে। এরা ভগবানের সন্তুষ্টি লাভের জন্য জীবিত মানুষ বিসর্জন দিতো বলে নৃবিজ্ঞানীদের ধারণা।
জানা যায়, কুসকো (লিমা) হতে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে ৬শ’ হেক্টর এলাকাজুড়ে ছিল ইনকা জনপদের সমাধিক্ষেত্র। বেলজিয়ামের একদল নৃবিজ্ঞানী ২০১২ সালে এটি উদঘাটন করেন। এরপর সেখানে অসংখ্য মমি করা মরদেহের কঙ্কাল পাওয়া যায়।
এইসব মমি করা কঙ্কাল উদ্ধারের শেষ নজিরত হচ্ছে ৫০ বছর বয়সি এই নারী। যাকে সেখানকার সমাধিতে বসিয়ে রাখা হয়। এই মমিটি আগামী সপ্তাহে ফ্রান্সের লিওতে প্রদর্শন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। মমিটি যাতে নষ্ট না হয়, তাই হুবহু সংরক্ষণে কাজ করছেন সেখানকার উদ্ধারকারীরা। এটি পৃথিবীর হাজার বছরের ইতিহাস সংরক্ষণে বিশেষ কাজে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।