দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ টাকা ছাড়া দুনিয়াকে টিকে থাকা কি সম্ভব? কখনই সম্ভব নয়। কিন্তু তা সম্ভব করেছেন এক স্কুল শিক্ষক। তিনি টাকা ছাড়া ১৬ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন!
টাকা ছাড়া ঘরের বাইরে এক পা বের হওয়া সম্ভব নয়। টাকা এই দুনিয়া চলা, এক কথায় অসম্ভব ব্যাপার। অথচ টাকা ছাড়া ১৫ বছর কাটিয়ে দিলেন এক স্কুল শিক্ষক। গত ১৬ বছর হাত দিয়ে টাকা ছুঁয়েও দেখেননি জামার্নির ওই স্কুল শিক্ষক। কোনো লেনদেনই করেননি অর্থমুদ্রা ব্যবহার করে। ৬৯ বছর বয়সী ওই জার্মান নারীর নাম হাইডমেরি শুয়ারমার। টাকা ব্যবহার না করে, কীভাবে টিকে আছেন তিনি এই প্রবল বাজার অর্থনীতির যুগে? সেই প্রশ্নের উত্তর বের করতেই এই প্রতিবেদন।
সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ২২ বছর আগের ঘটনা। তিনি বিয়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা হতে নিজেকে সরিয়ে রাখতে দুই সন্তানকে নিয়ে জার্মানির ডর্টমুন্ড শহরে স্থানান্তরিত হন হাইডমেরি। সেখানকার নতুন পরিবেশ বদলে দেয় তার জীবন ও বাস্তবতাও। ওই শহরে আশ্রয়হারা এক বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর কষ্ট ভীষণভাবে মর্মাহত করে তোলে হাইডমেরিকে। আর এ মর্মবেদনা হতে হঠাৎ করে হাইডমেরির মাথায় উদয় হয় নতুন এক উদ্ভট চিন্তার।
আর সেই থেকেই তিনি ভাবতে থাকেন। কোন ধরনের মুদ্রার লেনদেন ছাড়াই সমাজে যে ভালোভাবে টিকে থাকতে পারে আশ্রয়হীনরা সেটি তার মাথায় আসে। আর সে চিন্তাকে মাথায় রেখেই হাইডমেরি খুলে বসেন একটি বিনিময়ের দোকান। হাউডমেরির ওই দোকানে অর্থের বিনিময়ে নয়, বরং লেনদেন শুরু করেন বস্তুর বিনিময়ে বস্তু, সেবার বিনিময়ে সেবা, কাজের বিনিময়ে কাজ অথবা দক্ষতার বিনিময়ে দক্ষতা। ওই দোকানে পুরনো কাপড়ের বিনিময়ে রান্নাঘরের সরঞ্জামাদি কিংবা সীসার তৈরি জিনিসপত্রের বিনিময়ে গাড়ির সেবা এরকম নানান বিনিময়ের ব্যবস্থা রাখা হয় সেই দোকানে।
সংবাদ মাধ্যম বলেছে, এভাবে হাইডমেরির সেই ছোট্ট দোকানটিতে নিজেদের দক্ষতা এবং পুরনো জিনিসপত্রকে কাজে লাগানোর সুযোগ পেলেন বেকাররাও। তবে শুরুটা যে হাইডমেরির জন্য খুব সহজ ছিল অবশ্য তা নয়, বরং আশ্রয়হীনদের বিশ্বাসযোগ্যতা পেতে খানিকটা বেগ পেতে হয়েছে প্রথম দিকে। প্রথমে এ ধরনের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর এক নারী তাদের সত্যিকারের কষ্ট বুঝতে পারবেন সেটি বিশ্বাস করতে চাননি ঘরহারারা।
হাইডমেরি ‘গিভ এন্ড টেক’ দোকান খোলার আগে থেকেই জীবন যাপনে এক পরিবর্তন নিয়ে আসেন। ডর্টমুন্ড শহরে আসার পর শুরুতে হাইডমেরির মনে হল; প্রয়োজন নেই এমন অনেক জিনিস রয়েছে তার সংগ্রহে। তখন নতুন কোন কিছু কেনার আগে পুরনো জিনিস কাওকে বিলিয়ে দেওয়ার মাঝে সুখ খুঁজে বেড়াতেন তিনি। যে লোক রান্নাঘরে বাসন ধোয়া হতে শুরু করে ছোটখাটো নানা কাজ করে তার চেয়ে নিজের মর্যাদাকে কখনও উঁচু করে দেখতে চাননি হাইডমেরি। আর তাই বাসন ধোয়ার মতো কাজও করেছেন। এর জন্য তিনি পেতেন ঘণ্টা হিসেবে মজুরি।
এক সময় তিনি এক সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৯৫ সালেই প্রথম দিকের কথা। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন অর্থমুদ্রা ব্যবহার করবেন না। এক বছরের মাথায় জীবনের বাস্তবতায় তার সন্তানরাও ছাড়েন ডর্টমুন্ড শহর। এর পরপরই নিজের অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করে পুরোদস্তুর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু করেন তিনি। আর তখন হতে অর্থমুদ্রার ব্যবহার হতে নিজেকে একেবারে দূরে সরিয়ে রেখেছেন হাইডমেরি। ‘গিভ এন্ড টেক’ দোকানের নিয়ম নীতি হতে একটুও সরেননি তিনি। দোকানের সদস্যদের ছোট ছোট প্রয়োজন পূরণ করে নিজের আনন্দ খুঁজে পান তিনি। উপভোগ করেন জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত। শুধু তাই নয়, মুনাফার এই যুগে হাইডমেরির এই মানবিক উদ্যোগ, স্বপ্ন দেখা মানুষদের জন্য এক ছোট্ট আশার আলো। বেঁচে থাকার তাগিদে ক্ষুদে মানুষগুলো এই ‘গিভ এন্ড টেক’ দোকান হতে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছে। এগুলো দেখে হাইডমেরি নিজেও অভিভূত। অর্থের আদান-প্রদান হতে দূরে থেকে তিনি দীর্ঘ ১৬ বছর পুরো দস্তুর টিকে রয়েছেন এই সমাজে। তিনি একটি উদাহরণ।