দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জীবন সঙ্গী। সারা জীবনের জন্য যে আপনার জীবন সঙ্গী হবে সে কেমন চরিত্রের বা তার সবকিছু কেমন সেটি জানা অত্যন্ত দরকারি একটি বিষয়। তাই আপনার জীবন সঙ্গী খুঁজে নিন অংক কষে!
তবে যদি অংক কষেই সঙ্গী নির্বাচন করতে হয় সেক্ষেত্রে যারা অংকে কাঁচা তারা সাবধান। কারণ অংকে কাঁচা হলেই বিপদ। এই কথাটা প্রেমিক-প্রেমিকাদেরও সব সময় মাথায় রাখা উচিত। এটি কোনো ঠাট্টার কথা নয়।
আপনার মনের মতো জীবনসঙ্গী খুঁজে পেতে গণিতই যেকোনো মানুষকে সাহায্য করতে পারে। এমনই বার্তা দিচ্ছেন গণিতজ্ঞ হানা ফ্রাই।
টড বুকস সিরিজে তাঁর সাম্প্রতিক বই ‘দ্য ম্যাথামেটিক্স অফ লাভ: প্যাটার্ন প্রুফস্ অ্যান্ড দ্য সার্চ ফর দ্য আল্টিমেট কোয়েশ্চেন’-এ হানা দেখিয়েছেন যে, কীভাবে গণিতের ফর্মুলা আপনাকে সাহায্য করতে পারে প্রেম নামে এই আবহমান রহস্যময় অনুভূতিটির পাঠোদ্ধার করতে। বিষয়টি একটু জটিল মনে হলেও আপনি ভেবে দেখুন।
ওই গণিতেজ্ঞের মতে, স্রেফ প্যাটার্ন দেখে অংক কষে খুঁজে নিতে পারবেন মনের মতো সঙ্গী। যার সঙ্গে সারা জীবন সুখে শান্তিতে আপনি কাটিয়ে দিতে পারেন। এই মহিলা গণিতজ্ঞ ঠিক তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন। সারা বিশ্বের সবাইকে অবাক করে ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডনের সেন্টার ফর অ্যাডভ্যান্স স্পাসিয়াল অ্যানালিসিসের বিজ্ঞানী হানা বলেছেন যে, অংক কষে প্রেম হয়। যদিও এই বইয়ের শুরুতেই তার সাফাই ও জীবনের অধিকাংশ বিষয়ের মতোই প্রেমেরও বেশ কিছু ক্ষেত্রে চেনা ছক খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
তিনি এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন যে, গণিত এক ছক চেনারই খেলা-
আবহাওয়ার আগাম হদিশ দেওয়া
শেয়ার বাজারের ওঠা
নাম ভবিষ্যতবাণী
গ্রহ-নক্ষত্রের গতিবিধি
একটা শহরের ছড়িয়ে পড়ার পরিমাপ।
দুনিয়া জুড়েই এই সব বিষয়বস্তু ঘোরে, ওঠে, পড়ে- ঠিক তেমনিভাবেই চলে প্রেমের ওঠাপড়া।
কাজেই অন্য বিষয়গুলির মতো math-for-love প্রেমের ক্ষেত্রে একই ধরনের ফর্মূলা প্রয়োগ করে ভবিষ্যত্বাণী করা সম্ভব। সেই ছকটা একবার বুঝে নিতে পারলেই কেল্লাফতে বলে মনে হয়েছে গবেষক হানার।
কেমন হবে সেই ছক? লক্ষ্য করা যাক অনলাইন ডেটিংয়ের দিকটা। প্রচলিত ধারণা, প্রোফাইল ছবি যত সুন্দর হবে জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। কিন্তু হানার মতে, এমন ধারণাটা মোটেই ঠিক নয়।
গণিত বলছে, বরং বাকিদের হতে যদি কেও আলাদা হয়, এমন কী যা প্রচলিত ধারণায় অনেকে পছন্দ করে না তেমন কোনো বিষয়টিকেই গর্বের সঙ্গে তুলে ধরতে হবে। যেমন: টাক আছে? ভালো। ভয়ানক দেখতে ট্যাটু? আরও ভালো।
তিনি উল্লেখ করেছেন, ডেটিং সাইটে লক্ষ্য করা গেছে মোটামুটি সাধারণ ভালো দেখতে লোকজনের থেকে স্বতন্ত্র কোনো বৈশিষ্ট্য আছে এমন লোকজনের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। এই ধরনের লোকদের সঙ্গে ভাব জমাতে বেশি উৎসাহী বোধ করেন বেশিরভাগ মানুষ। এর পিছনে কারণ হলো- বেশি সুন্দর দেখতে ছবির ক্ষেত্রে অনেকেরই আশংকা থাকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে যাওয়ার।
আবার আলাপ পর্বের পরে প্রশ্ন থেকে যায় সঙ্গী নির্বাচন নিয়ে। গবেষক হানার মতে, প্রথম জীবনে আসা মানুষটিকেই বিয়ে করে সংসার করা একধরনের বোকামি। তবে অনেকের প্রশ্ন জাগতে পারে, কতটা পথ পেরোলে তবেই মনের মানুষ পাওয়া যাবে? এক্ষেত্রে গবেষক হানার ফর্মুলা অনুযায়ী, জীবনে আসা প্রথম ৩৭ শতাংশ মানুষকে অল্প সমস্যাতেই কাটিয়ে দিন। কোনোভাবেই আপস করবেন না। আর এই সময়টা পেরিয়ে যাওয়ার পর প্রথম যে মানুষটিকে মনে ধরবে, তার সঙ্গেই দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের কথা ভাবা উচিত।
তবে বর্তমানে এতে ঝুঁকি প্রচুর। কারণ আপনার জন্য একদম উপযুক্ত মানুষটির সঙ্গে আপনার দেখা হলো ওই প্রথম ৩৭ শতাংশের মধ্যে। অথবা ধরুন ৩৭ শতাংশ পার হওয়ার পর যিনি এলেন, তিনি আবার একেবারে মনের মতো হলেন না। তাহলে কি করবেন?
গবেষক হানার ব্যাখ্যা হলো, এরকম ঝুঁকি তো জীবনে নিতেই হবে। কিন্তু তার সমীক্ষা গবেষণায় এই ৩৭ শতাংশের ফর্মুলার থেকে উপযুক্ত প্যাটার্ন নাকি প্রেমের ক্ষেত্রে একেবারে পাওয়া যায়নি। আসলে যে কোনো মানুষের সহ্যশক্তি তথা পছন্দের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পরিণত হওয়ার জন্য এই সময়টা তাদের দিতেই হবে।
আর সম্পর্ক টেকানো কী কর্তব্য? সাধারণ মত হলো, যেসব দম্পতি ছোটখাটো বিষয়ে ঝগড়া করেন না, একে অন্যকে অনেকটা জায়গা দেন, কেবলমাত্র তারাই সম্পর্ক টেঁকাতে সক্ষম হন।
গবেষক হানার অবশ্য এ বিষয়ে অভিমত হলো, বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ঝগড়া মেটানোর পদ্ধতি। তিনি লক্ষ্য করেছেন, সেই সব দম্পতিই দীর্ঘমেয়াদী সুখী হয়, যারা একে অন্যের অভিযোগ সম্পর্কে অত্যন্ত সংবেদনশীল। সেক্ষত্রে তারা যেমন ঝগড়া করেন, ঠিক তেমনি আবার ঘুমোবার আগে সেই ঝগড়া মিটিয়েও ফেলতে পারেন।
গবেষক হানার মতামত কতখানি কার্যকরি তা অবশ্য নির্ভর করবে আপনার এবং আপনার সঙ্গীর জীবনের চলাচল বা সকল আচার-আচরণের উপর। কারণ মানুষ এই পৃথিবীতে জন্মের পর এক এক পরিবেশে বেড়ে ওঠে। আর তাই পরিবেশের ওপরও অনেকটা নির্ভর করে তার চারিত্রিক গুণাবলির বিষয় বা আচার-আচরণ। তাই গবেষণার বিষয়গুলো যেমন গুরুত্ব দেওয়া উচিত তেমনি পারিপার্শিক বিষয়গুলো ভাবা উচিত বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।