দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আজ আপনাদের জন্য রয়েছে তিন তিনবার ফাঁসির মঞ্চ হতে বেঁচে যাওয়া এক ব্যক্তির কাহিনী।
‘হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না’ এই কথাটি আমরা ছোট বেলায় থেকে শুনে আসছি। অর্থাৎ হাকিম মানে বিচারক যে নির্দেশ দেন তা কখনও নড়চড় হয়না। কিন্তু এর এক ব্যক্তিক্রম ঘটনাও এবার শোনা গেলো। সিনেমা-নাটকে মাঝে-মধ্যে আমার এমন কাহিনী দেখে থাকি। কিন্তু বাস্তব জীবনে কখনও এমন ঘটনার কথা শোনা যায়নি। তবে িএবার তাই শোনা গেলো। এক ব্যক্তি তিন তিনবার ফাঁসির মঞ্চ হতে বেঁচে গেছেন।
তিন-তিনবার চেষ্টা করেও কার্যকর করা যায়নি জন হেনরি জর্জ লি নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড। এজন্য দুনিয়ার বিরলতম সৌভাগ্যবানদের মধ্যে একজন হিসেবে তাকে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। তাকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়েও ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানো যায়নি। এই কাহিনী আজ হতে প্রায় ১৩০ বছর আগের।
জানা যায়, যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা লি কর্মরত ছিলেন রাজকীয় নৌবাহিনীতে। তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের চুরির অভিযোগ ছিল। কিন্তু প্রমাণের অভাবে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছিল না। ১৮৮৪ সালের ১৫ নভেম্বর ঘটলো এক ঘটনা। এতে লির বাঁচার আর কোনো পথ রইল না। ঘটনার দিন লি কাজ করছিলেন তার চাকরিদাতা এমি কিজের বাসায়। সেদিন বাড়িতে জন ছাড়া কেওই ছিল না। সেদিন সবকিছু আত্মসাৎ করতে এমি কিজকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেন লি। বিচারে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় লি’র অপরাধ। ফাঁসির রায়ও হয়।
তারপর ঘটে সেই আশ্চর্যজনক ঘটনা। ১৮৮৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য লিকে জেলখানা হতে নিয়ে যাওয়া হলো ফাঁসির মঞ্চে। গলায় দড়িও পরানো হলো, কিন্তু দেখা গেলো পায়ের নিচের যে ট্র্যাপডোর সরে ফাঁসি কার্যকর করবে, সেটা একেবারেই নড়ছে না!
বাধ্য হয়ে লিকেকে আবার জেলখানায় ফিরিয়ে নেওয়া হলো। প্রকৌশলীদের দিয়ে পরীক্ষা হলো ট্র্যাপডোর। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, তখন কোনো ত্রুটি পাওয়া গেলো না। এরপর লি’কে আরও দুবার ফাঁসি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু ফল সেই একই। লি উপস্থিত হলে যেনো ট্র্যাপডোরটা নিজের কাজই ভুলে যায়। কিন্তু অন্য সময় একেবারে স্বাভাবিক।
এমন এক অবস্থায় লি’র মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আশা বাদ দিতে হয় কর্তৃপক্ষকে। বাধ্য হয়ে যুক্তরাজ্যের হোম সেক্রেটারি উইলিয়াম হারকোর্ট লি’র মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। তখন লি ছিলেন ১৯ বছরের যুবক। ২২ বছর পর জেল হতে মুক্তি পান লি। এরপর তিনি পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানেই তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয় বাকি জীবন কাটানোর পর। এই ছিল তিন তিনবার চেষ্টা করেও ফাঁসি কার্যকর করা যায়নি যে ব্যক্তির- তার জীবন কাহিনী।