দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কোটিপতির সন্তান হয়ে, বিলাসবহুল জীবন যাপন করেও অনেকেই যে ফলাফল করতে পারেন নি, কিন্তু এইচএসসিতে ৮৪ শতাংশ নম্বর পেয়েছে ৫ বাড়িতে কাজ করা শালিনী।
কোটিপতির সন্তান হয়েও আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন উল্লেখযোগ্য ফলাফল করতে পারেন না। বিলাসবহুল জীবন যাপনও তাদেরকে এতোটা মনোযোগী করতে পারেনি। যা করেছে ভারতের শালিনী। এক বেলা খেয়ে না খেয়ে সে পড়ালেখা করেও ফলাফল করেছে অনেক ভালো। অভাবের সংসারে নিজের রোজগারের টাকা সংসারে ঢালার পরও দাঁতে দাঁত চেপে চালিয়ে গিয়েছে পড়ালেখা। দৃপ্ত সেই মুখে হাসি ফুটেছে এবার। গত মঙ্গলবার ৮৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে আইএসসি (এইচএসসি) পাশ করেছে ভারতের বেঙ্গালোরের শালিনী।
এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শালিনী জানায়, ‘আমি বাড়িতে বাড়িতে জামাকাপড় কাচতাম, বাসন মাজতাম।’ ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখা শালিনীর বাবা অচল হয়েছেন এক দুর্ঘটনায়। হাসপাতালে কাজ করে, কাপড় কেচে সংসার চালান মা বিজয়া। তার ছোট ভাই সূর্য ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। এই পরিবার এখন স্বপ্ন দেখে শালিনীর চোখেই। এই সাক্ষাৎকারের সময় শালিনী অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলেন।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ৫টি বাড়িতে কাজ, তাহলে পড়াশোনা করার সময় কীভাবে পেতো শালিনী? প্রশ্নের উত্তরে শালিনী বলেছেন, ‘প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৪টার সময় ঘুম থেকে উঠতাম। তারপর রঙ্গোলি দিতে যেতাম, সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলতো সেই কাজ। তারপর অন্য একটি বাড়িতে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ঘর পরিষ্কার এবং কাপড় কাচার কাজ করতাম। তারপর আরেকটি বাড়িতে বাসন মাজতাম, কাপড় কাচার কাজ করতে করতে বেজে যেতো প্রায় ৯টা। তারপর জলখাবার খেয়ে নিয়ে আরও ২ বাড়ির কাজ করতাম। পড়ার সময় পেতাম শুধু রাতেই।’
শালিনী তামিল মাধ্যমের স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেও পরে আবার কন্নড় মাধ্যমের স্কুলে ভর্তি হন। এরপর ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল হতে দ্বাদশ শ্রেণীর পড়াশোনা শেষ করলো শালিনী। তার মা বিজয়া পড়াশোনা করেছে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত, বাবা নিরক্ষর। কিন্তু বাবাই শালিনীর অনুপ্রেরণা।
পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর মুখে হাসি ফুটেছে শুধু শালিনীই নয় তার পুরো পরিবারের। লক্ষ্য স্থির থাকা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কেবল শালিনীই জানে আসলে কোন পরীক্ষায় সে উত্তীর্ণ হলো সে। ১৭ বছর বয়সী শালিনীর স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হওয়া।
জীবন যুদ্ধে প্রতিনিয়ত নানা প্রতিকূলতা পাড়ি দেওয়া শালিনী আমাদের এই সমাজের জন্য একটি উদাহরণ। কারণ ইচ্ছা-শক্তির কাছে সব অপশক্তিই পরাজিত হয়। যে প্রমাণ শালিনীই দিলো। তথ্যসূত্র: এনডিটিভি