দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নারীর ক্ষমতায়নকে সামাজিক উন্নয়নের সূচক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেই উন্নয়ন সূচকের হাত ধরেই জাতীয় সংদের স্পিকার নির্বাচিত হলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সোমবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনের পশ্চিম ব্লকের ৯ম তলায় সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের ২০তম জরুরি সভায় এই অনুমোদন দেয়া হয়।
কেবলমাত্র মানবেতর অবস্থা থেকে নারীর মুক্তি বা নারী উন্নয়নের জন্যই নয়, পৃথিবী মুখোমুখি এমন সকল সমস্যার সমাধানে প্রধান ও প্রথম ধাপ হিসাবে নারীর ক্ষমতায়নকে প্রয়োজনীয় বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। কেবল আন্তর্জাতিক পরিসরে নয়, বাংলাদেশেও স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পরিসরে যে কোনো নীতি নির্ধারনী আলোচনায় বা সমস্যা সমাধানে নারীর ক্ষমতায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই গুরুত্ব বিবেচনার ভিত্তিতেই প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহে শিরিন শারমিনকে সরাসরি স্পিকারের দায়িত্ব দেয়া হয়; প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেই সভায় শিরিন শারমীন চৌধুরীর নাম প্রস্তাব করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং পরবর্তীতে তা সবাই সমর্থন করেন ।
বৈঠক শেষে সৈয়দ আশরাফ এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, দেশের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নারী অধিষ্ঠিত হতে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী এবং সংসদ উপনেতা নারী। নারী স্পিকার হওয়ায় নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নে আরেক ধাপ অগ্রগতি হলো। আশা করেন, তিনি যোগ্যতা এবং দক্ষতার পরিচয় দেবেন ।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী হলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী, উচ্চ শিক্ষিত ও বিশ্বের কম বয়সী স্পিকার। বিশ্বের কয়েকটি রাষ্ট্রের মধ্যে সিঙ্গাপুরের পার্লামেন্টে হালিমা ইয়াকুব , আবুধাবির ডেপুটি স্পিকার ডা. আমাল আল-কুবাইসি, ভারতের লোকসভায় প্রথম নারী স্পিকার মীরা কুমার সহ কয়েকটি দেশে নারী স্পিকার রয়েছে।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী’র সংক্ষিপ্ত জীবনি :
বর্তমানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী ১৯৬৬ সালের ৬ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নোয়াখালীর জেলার চাটখিলের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন জাঁদরেল সিএসপি অফিসার। পরে তিনি বাংলাদেশ সরকারের সচিব হন। মা প্রফেসর নাইয়ার সুলতানা বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য ছিলেন।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ছাত্রজীবনে একজন মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৮৩ সালে ঢাকা বোর্ডে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথম স্থান লাভ করেন।
১৯৮৫ সালে এইচএসসি একই বোর্ডে মানবিকে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও ১৯৯০ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম এ ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট হন।
২০০০ সালে তিনি ইউকে থেকে ইউনির্ভাসিটি অব এসেক্স আইনে পিএইচডি লাভ করেন। এলএলএম পাশ করার পর তিনি ১৯৯২ সালেই বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে তালিকাভুক্ত আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মানুষের সাংবিধানিক বিভিন্ন বিষয়ে সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। বহু জাতীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সেমিনার সম্পর্কিত মানবাধিকার বিষয়গুলির ওপর সেমিনারে অংশ নিয়েছেন। তার মধ্যে ছিল দক্ষিণ এশিয়ার দারিদ্র দূরীকরণ উল্লেখযোগ্য।
২০০৮ সালে শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য গঠিত প্যানেল আইনজীবী হিসেবে কাজ করার পর শেখ হাসিনার সুনজরে আসেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান!
উল্লেখ্য স্পিকার হিসেবে শপথ নেয়ার আগে তাকে মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করতে হবে।গত ২৪ এপ্রিল স্পিকার আবদুল হামিদ এডভোকেট রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেয়ার পর পদটি শূন্য হয় ।
শিরিন শারমিন চৌধুরী স্পিকার নিবার্চিত হচ্ছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে তার জন্মস্থান ও সংসদীয় এলাকা নোয়াখালীর চাটখিল, সোনাইমুড়িতে আনন্দের বন্যা বইছে।