দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাভার ট্র্যাজেডি’র রানা প্লাজার ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে অসীম সাহসের সাথে যে একাই ৩০ জন মানুষকে উদ্ধার করেছিলেন সেই বাবুর কথা কি মনে আছে ? সেই ওমর ফারুক বাবুর লাশ ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওয়ার্ড থেকে নিখোঁজের দু’দিন পর হাসপাতালে কর্তব্যরত আনসার সদস্যদের নিরাপত্তা জোনে উদ্ধার করা হয়েছে !
তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মঙ্গলবার সকালে সেখানেই তার লাশ পাওয়া যায়।
নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, যেখানে ওমর ফারুকের লাশ পাওয়া গেছে, সেই স্থানটি আনসার সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে। প্রবেশপথের কলাপ্সিবল গেটে তালা ঝুলানো থাকে। সেখানে কিভাবে সে ঢুকেছে?
নিহতের পরিবার ও স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা তাকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে। তবে এ ব্যাপারে আনসার কমান্ডার আব্দুল খালেক ও সহকারি কমান্ডার আবু তালেব কোন তথ্য দিতে পারেনি। ওই নিরাপত্তা জোনের প্রবেশ গেটের চাবি আনসার সদস্য জাহেদের কাছে থাকে বলে জানান হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।
মৃতের স্ত্রী আইরিন আক্তার জানান, সাভারের রাজাসন এলাকায় থাকতেন ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি বাবু। রানা প্লাজা ধসের পর তিনি আরও অনেকের মতো সেখানে উদ্ধারকর্মী হিসেবে কাজ করেন।
এর পর থেকে তার মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তিনি আতঙ্কে ঘুমাতে পারেন না, মাঝেমধ্যে ভয়ে শিউরে ওঠেন। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর পর গভীর রাতে ঘুমের মধ্যেই ‘বাঁচাও’ বাঁচাও বলে আর্ত চিৎকার দিয়ে জেগে উঠতো। এভাবেই তার স্বামী ওমর ফারুক বাবু আতঙ্কিত হয়ে ক্রমেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে !
পহেলা মে’ একই অবস্থা বিরাজ করলে তিনি স্থানীয় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ওই চিকিৎসকের পরামর্শে ২মে’ তিনি তার স্বামীকে সাথে নিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। ওইদিন চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে মেডিসিন ইউনিটের ৩১৫ ওয়ার্ডে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখানে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ওয়ার্ডের বেডে রেখে নিয়মিত চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। তার সেবায় তিনিও হাসপাতালে ওই ওয়ার্ডের বেডে দিনরাত স্বামীর শয্যাপাশে থাকতেন। ওমর ফারুককে হাসপাতালে ভর্তির পর প্রতিদিনই ননদ-ভাসুরসহ নিকটাত্মীয়রা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিতেন। তিনি আরো বলেন, ঘটনার দিন গত রোববার ৫মে’ বিকেল সোয়া ৩টায় তিনি তার স্বামীকে বেডে রেখে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যান। বিকেল সাড়ে ৩টায় তিনি ওয়ার্ডে ফিরে দেখেন বেডের মধ্যে স্বামী ওমর ফারুক নেই !
এরপর বিষয়টি বাবুর আত্মীয়দের জানান তার স্ত্রী আইরিন। খবর পেয়ে বাবুর বড় বোন হেনা ঢাকায় ভাইকে খুঁজতে আসেন। কিন্তু সন্ধ্যান মেলেনি।
তবে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সোহেল রানা বলেন, নিহতের গলায় দঁড়িবাঁধার মতো গভীর ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা পুলিশের।। ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ তার লাশ মর্গে পাঠিয়েছে।
উল্লেখ্যঃ গত ২৪ এপ্রিল সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে ৮তলা ভবন বিশিষ্ট ‘রানা প্লাজা’ ধসে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হওয়ার পর থেকে তার স্বামী ওমর ফারুক বাবু সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবিদের সাথে ধ্বংসস্তুপে আটকে পড়া তৈরি পোশাক কারখানার কর্মীদের উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে আসছিল, একাই উদ্ধার করেছিলেন অসীম সাহসের সাথে প্রায় ৩০ টা লাশ ।
তথ্যসুত্রঃ সমকাল