ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ জ্বালানি তেল আমদানিতে অতিরিক্ত ব্যয় হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। প্রতিবছরই সরকার এই জ্বালানি ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিয়ে আসছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের জন্য বিভিন্ন ধরনের সাড়ে চার লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানিতে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে সাড়ে ২৯ কোটি টাকা। মূলত মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকায় বিশ্বে অপরিশোধিত এবং পরিশোধিত জ্বালানি তেলের প্রিমিয়াম বেড়ে যাওয়ার কারণে এ বাড়তি খরচ হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ পরিমাণ জ্বালানি তেল কিনতে সরকারের ব্যয় হবে ২ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। এ বিষয়ে আজ ৪ মার্চ জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়টি অনুমোদনের জন্য ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটিতে উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে সব ধরনের জ্বালানি তেলের জন্য আলাদা আলাদা প্রিমিয়াম নির্ধারিত হয়। এ প্রিমিয়াম নির্ধারিত হয় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভিত্তিতে। জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম নির্ধারিত হয় ইন্স্যুরেন্স, সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট, নিরাপদ পরিবহন চার্জ হিসাব করে। জানা গেছে, চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পেট্রো চায়না ইন্টারন্যাশনাল (সিঙ্গাপুর) প্রাইভেট লিমিটেড থেকে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের জন্য ডিজেল ৮০ হাজার মেট্রিক টন এবং অকটেন ১৬ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল ক্রয় করা হচ্ছে। গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশে সফররত পেট্রো চায়নার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরশেনের (বিপিসি) কর্মকর্তারা বৈঠক করে। বৈঠকে ডিজেলে প্রিমিয়াম নির্ধারিত হয় ব্যারেলপ্রতি ৩ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার। যা ২০১১ সালে ছিল ৩ দশমিক ৩০ মার্কিন ডলার। একইভাবে অকটেনের প্রিমিয়াম নির্ধারিত হয় ৭ দশমিক ২০ মার্কিন ডলার। যা ২০১১ সালে ছিল ৭ দশমিক ৫ মার্কিন ডলার।
সূত্র জানিয়েছে, প্রিমিয়াম বেশি নির্ধারিত হওয়ার কারণে ডিজেল ও অকটেন মিলিয়ে ৯৬ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল কিনতে গত বছরের শেষ ছয় মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ১১ কোটি ৬৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা বেশি ব্যয় বেড়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৭৯৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। ১৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিপিসির ৮১২তম পরিচালকমণ্ডলীর সভায় বিষয়টি অনুমোদন দেয়া হয়। মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পেট্রোনাস ট্রেডিং কর্পোরেশন (পেটকো) ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এমিরাটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (ইএনওসি) থেকে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের জন্য ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল আমদানি করা হবে। উভয় দেশ থেকে ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে হবে আগের চেয়ে বেশি প্রিমিয়ামে।
এ বিষয়ে বিপিসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ার পেটকো থেকে প্রথম ছয় মাসের জন্য ২ লাখ টন ফার্নেস অয়েল আমদানি করা হবে। জ্বালানি তেল আমদানিতে চলতি বছরের প্রিমিয়াম নির্ধারণে বিপিসির একটি প্রতিনিধি দল গত বছরের ৩ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে পেটকোর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে পেটকো ফানেস অয়েলের ব্যারেলপ্রতি প্রিমিয়াম ৫১ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলার প্রস্তাব করলে বিপিসির প্রতিনিধিরা অনেক বেশি বিবেচনায় তা গ্রহণ করেনি। পরে চলতি বছরের ৩ থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত পেটকোর প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে। এ সময় ৪ ফেব্রুয়ারি উভয় পক্ষের মধ্যে আবারও প্রিমিয়াম নিয়ে আলোচনা হলে ব্যারেলপ্রতি ৪০ দশমিক ৮০ মার্কিন ডলার প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয়। ওই কর্মকর্তা জানান, নির্ধারিত প্রিমিয়াম ধরে পেটকো থেকে ২ লাখ মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল কিনতে সরকারের মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ২৮৬ কোটি ১০ লাখ টাকা। আর বর্ধিত প্রিমিয়ামের কারণে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এশন ভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এমিরাটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (ইএনওসি) থেকে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের জন্য ৬০ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল আমদানি করা হবে। এর প্রিমিয়াম ধরা হয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৪০ দশমিক ৮০ মার্কিন ডলার। যদিও প্রথমে ইএনওসির পক্ষ থেকে শুরুতে প্রিমিয়াম প্রস্তাব করা হয়েছিল ব্যারেলপ্রতি ৫১ মার্কিন ডলার। পরে বিপিসির আপত্তির কারণে ১১ জানুয়ারি ব্যারেলপ্রতি ৪০ দশমিক ৮০ মার্কিন ডলার প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত এ প্রিমিয়ামে ৬০ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল কিনতে সরকারের ব্যয় হবে ৩৮৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাড়তি প্রিমিয়ামের কারণে ৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা বেশি ব্যয় হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানান। ২০১২ সালে প্রথম ছয় মাসে সারাদেশে ডিজেলের চাহিদা রয়েছে ২২ লাখ টন, ২ লাখ ২২ হাজার টন কেরোসিন, ১ লাখ ৮৩ হাজার টন জেট অয়েল ও ৫৭ হাজার টন অকটেনের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশে একমাত্র তেল শোধানাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি (ইআরএল) অপরিশোধিত তেল শোধন করে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে পাওয়া যাবে ১ লাখ ৮০ হাজার টন করে ডিজেল ও কেরোসিন। এছাড়া ইআরএলে অকটেন ও জেট অয়েল উৎপাদিত হয় না। ফলে দেশের চাহিদার সিংহভাগ জ্বালানি তেল বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। যদিও মাঝে সরকারের জ্বালানি ক্ষাতে ভর্তুকি কমে গিয়েছিল। কারণ গ্যাস পাম্প প্রতিষ্ঠার পর থেকে জ্বালানি তেল আমদানি অনেকটা কমে যায়। তবে গ্যাসের অতিরিক্ত দাম বাড়ানো এবং গ্যাসের গাড়ির দীর্ঘ স্থায়িত্ব নিয়ে সমস্যা থাকায় অনেকেই এখন জ্বালানি তেলই ব্যবহার করছেন। যে কারণে জ্বালানি তেল আমদানি আবার বেড়েছে। তথ্য সূত্র: দৈনিক যুগান্তর।