দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পলিথিন বর্জ্য আমাদের পরিবেশদূষণের একটি বড় কারণ। এই দুষণ আমাদের জীবন-যাত্রাকে ব্যাহত করছে। তবে এবার নতুন এক গবেষণা সেই দুষণমুক্ত পরিবেশ গঠনে সহায়তা করবে। উদ্ভাবন করা হলো পলিথিন বর্জ্য থেকে জ্বালানি তেল তৈরি হবে।
আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে যেসব উপাদান তারমধ্যে পলিথিন অন্যতম। তবে এই পলিথিন বর্জ্য থেকে খুবই সস্তায় জ্বালানি তেল উৎপাদন করা সম্ভব বলে জানানো হয়েছে। এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন জামালপুর সদর উপজেলার কুচঝগড় এলাকার ২৫ বছর বয়সী তরুণ তৌহিদুল ইসলাম।
নতুন এই প্রযুক্তিতে পলিথিন বর্জ্য থেকে তৈরি হবে জ্বালানি তেল। এই তেল উৎপাদনে লিটারপ্রতি খরচ মাত্র ৭০ পয়সা হতে দুই টাকা! তেল বেরোনোর পর যে কালি বের হয়, সেটিও ব্যবহার করা যায় ফটোকপির মেশিনের কালি হিসেবে!
ময়মনসিংহ শহরের জিমনেসিয়ামে বিভাগীয় ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় তৌহিদুল ইসলামের উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি প্রদর্শন করা হচ্ছে। ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ১১ মার্চ থেকে তিন দিনব্যাপী এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় নানা উদ্ভাবন ঠাঁই পেলেও পলিথিন বর্জ্য হতে জ্বালানি তেল বের করার বিষয়টিই সবার দৃষ্টি কেড়েছে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ভালোভাবে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে এই প্রযুক্তি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কি না সেটি।
তৌহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে জৈবযৌগ নিয়ে পড়াকালে এ বিষয়ে তাঁর আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ওই বছর ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষায় তিনি সফলও হন। পরের বছর বিজ্ঞান মেলায় পুরস্কার পান তিনি। এরপর ৫/৬ বছর বিষয়টি নিয়ে আরো ভালোভাবে গবেষণা করেন। ২০১৫ সালে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে তিনি সফলও হন।
তৌহিদুল ইসলাম আরও জানান, তাঁর মেশিনটি মূলত একটি বড় বালতির মতো চেম্বারমাত্র। যেখানে পলিথিন ভরে লোহার ঢাকনা দিয়ে চাপা দেওয়া হয়ে থাকে। তারপর দেওয়া হয় আগুনের তাপ। পলিথিন গলে বাষ্প হয়ে ২ ফুট/২ ফুট ও ৬ ফুট দৈর্ঘ্যের মোট তিনটি পাইপ খণ্ডের ভেতর দিয়ে আসার পর তেল বের হতে থাকে। মূলত তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে কোন জাতীয় তেল হবে। ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তাপ দিলে সেখান থেকে পেট্রোল জাতীয় তেল বের হয়। এরও দ্বিগুণ তাপ দিলে ডিজেল জাতীয় এবং আরো বেশি মাত্রায় তাপ দিলে সেখান থেকে বের হয় কেরোসিন জাতীয় তেল। এক হাজার কেজি পলিথিন থেকে অর্ধেক পরিমাণ তেল আহরণ করা সম্ভব। এতে খরচ পড়ে লিটারপ্রতি ৭০ পয়সা থেকে দুই টাকার মধ্যে। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে তাপ দিতে হয়। পুরো তেল বের হতে প্রায় তিন ঘণ্টার মতো সময় লাগে।
উদ্ভাবক তৌহিদুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে আরও জানান, তিন বছর ধরে তিনি এই তেল ব্যবহার করে আসছেন। এই তেল দিয়েই মোটরসাইকেলও চালাচ্ছেন। তাঁর তেমন কোনো ভালো মেশিন নেই। বাসায় ব্যবহার করা মেশিনটি লাখ টাকা দামের। যদি সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিয়ে তিনি একটি মেশিন বানাতে পারতেন, তাহলে প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার কেজি পলিথিন থেকে প্রায় এক হাজার কেজি তেল আহরণ করতে সমর্থ হতেন। অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় তিনি ভালো মেশিনও কিনতে পারছেন না। তিনি মনে করেন এই প্রযুক্তি সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কাজে লাগানো যেতে পারে। সেজন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।