দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ উপকূলের দিকে আরও এগিয়ে আসায় দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, এটি কাল বুধবার দুপুরের পর আঘাত হানতে পারে।
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড়টি শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এক হাজার ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে এক হাজার ২৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং মংলা থেকে এক হাজার ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি এখন ঘনীভূত হয়ে সামান্য উত্তর দিকে সরে গেছে। এটি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মিয়ানমারের দিকে এগিয়ে আসছে। আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা বলেছেন, যে কোনো সময় এটি দিক পরিবর্তন করতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে আঘাত হানতে আগামী বুধবার পর্যন্ত সময় লাগবে। ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ ধেয়ে আসায় সুন্দরবন থেকে টেকনাফ পর্যন্ত উপকূলীয় ১৫ জেলার লাখ লাখ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় প্রশাসন জরুরি বৈঠক করছে। বৈঠকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে সব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে শুকনো খাবার, পানিসহ ত্রাণসামগ্রী। তৈরি রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যরাও। সুন্দরবনজুড়ে জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জরুরি বৈঠক শেষে অ্যাকশন অ্যালার্ট-২ জারি করেছে। খোলা রাখা হয়েছে উপকূলের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলো। উপকূলের নিম্নাঞ্চলের লোকজনকে দ্রুত সরিয়ে আনতে নৌযানও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ সতর্কবার্তা প্রচার করা হচ্ছে। সাগর উত্তাল থাকায় শত শত মাছধরার ট্রলার উপকূলে আশ্রয় নিচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন
ঘূর্ণিঝড় মহাসেন ধেয়ে আসার খবরে উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত নিয়েছে প্রশাসন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে কমিটি গঠন, জেলা সিভিল সার্জনের ২৮৩টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতি টিমে একজন করে ডাক্তার,একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও একজন পিয়ন রয়েছে। স্থানীয় স্কুল-কলেজ এবং সরকারি স্থাপনাগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তার সতর্ক বার্তা
ঘূর্ণিঝড় মহাসেন আঘাত হানলে বেশি লোকসানের শিকার হবে কৃষকরা। এ আশঙ্কায় কৃষকদেরকে বোরো ধান আগেই কাটতে প্রয়োজনীয় বার্তা পাঠানো হয়েছে। তবে ধান কাটার উপযুক্ত সময় হওয়ার পরও অনেক ধান আধাপাকা রয়ে গেছে। কৃষকরা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ইতি মধ্যে ধান কাটতে শুরু করেছে। তবে কৃষকরা জানান, দুদিনের মধ্যে তাদের চাষাবাদের কিছু অংশ কাটা হলেও ধান না পাকার কারণে অনেক জমিনের ধান কাটা যাবে না। এতে করে কৃষকদের বড় ধরনের লোকশানের আশংকা রয়েছে।
উপকূলের মানুষ আতঙ্কগ্রস্থ
ঘূর্ণিঝড় মহাসেন উপকূলীয় এলাকায় আঘাত করলে জলোচ্ছ্বাসে আনোয়ারা, মহেশখালী, বাঁশখালী, কতুবদিয়া, সীতাকুন্ড, পতেঙ্গা, কক্সবাজার ও সন্দ্বীপ এলাকার নিম্ন অঞ্চল গুলো পস্নাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। এদিকে শহর রক্ষার ২৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যাওয়ার কারণে শহরের অস্তিত্ব রক্ষার শংকায় রয়েছে। এতে করে মানুষের মনে বিভিন্ন ধরনের আতংক বিরাজ করছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আতঙ্কগ্রস্থ না হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।