দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে বিগত ৭ বছরে ভয়াবহ ৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাণহানিসহ কয়েক শ’ কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। কেনো বার বার এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা?
রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের আগুন নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা নিয়ে ব্যবসায়ী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের মনে নানা প্রশ্নে সৃষ্টি করেছে। আধুনিক অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা সেখানে থাকা সত্বেও কেনো বার বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে।
এদিকে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে, তারা সবচেষ্টা করার পরও অতিরিক্ত ধোঁয়ার কারণে গতকালের (রবিবার) আগুন শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। অবশ্য আগুন বাড়তে দেয়নি তারা। এই ঘটনায় দু’জন আহত হলেও অগ্নিকাণ্ড ছিল ভয়াবহ। বসুন্ধরা সিটিতে বারবার আগুন লাগার কারণ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
সংবাদ মাধ্যমকে ফায়ার সার্ভিসের সাবেক উপ-পরিচালক সেলিম নেওয়াজ ভুঁইয়া জানিয়েছেন, বসুন্ধরা সিটির আগুন নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা আধুনিক হলেও ভেন্টিলেটিং সিস্টেম না থাকার কারণে তা ঠিক মতো কাজে আসছে না।
বারবার আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলেও বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে আধুনিক সব ধরনের ব্যবস্থায় তাদের রয়েছে। তবে গতকালের (রবিবার) আগুনে অতিরিক্ত ধোঁয়া থাকায় তারা তা ব্যবহার করতে পারেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে ফায়ার সার্ভিসের ২৯টি ইউনিট। আবার বসুন্ধরার নিজস্ব কর্মীরাও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। মার্কেটের পেছন দিক দিয়ে ভেতরে পানি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে বাতাসের কারণে কাজে ব্যাঘাত ঘটে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা।
মূলত বসুন্ধরার শপিং কমপ্লেক্সে পাশাপাশি দুটি ভবন। এগুলো হলো পান্থপথ সড়কমুখী ৮ তলা ভবন ও পেছনে রয়েছে ১৯ তলা ভবন। দুটি ভবনেই গত ৭ বছরে ভয়াবহ ৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে:
# ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ ভয়াবহ আগুনে সাত জনের মৃত্যু হটে, ওই ঘটনায় আহত হন শতাধিক ব্যক্তি। ওই অগ্নিকাণ্ডের পর শপিং মলটি প্রায় একমাস বন্ধছিল।
# ওই বছরেরই (২০০৯) আগস্টে আরও একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
# ৬ বছর পর ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বসুন্ধরা সিটিতে আবারও অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
# ঠিক ১ বছর পর গতকাল (২১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১ টায় আরও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো।
এক তথ্যে জানা যায়, ২০০৯ সালের ১৩ মার্চের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৭ জনের মৃত্যুর পর ফায়ার সার্ভিস তদন্ত করে। বসুন্ধরার অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থায় তখন বেশকিছু ত্রুটি ধরা পড়েছিল। তারজন্য পরামর্শও দিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস।
সেসব পরামর্শ গ্রহণ করা হয়েছিল কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে বসুন্ধরা সিটির ইনচার্জ টিআইএম লতিফুল হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, আমি ৪ বছর ধরে এখানে কাজ করছি। ফায়ার সার্ভিব যেসব বিষয় পরামর্শ দিয়েছে, সেগুলো মানা হয়েছে। আমাদের আধুনিক সব রকম অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা আগুন ৬ তলায় সি-ব্লকেই রেখেছি। আগুন বাড়তে দেইনি। আমাদের অন্তত ৬০ জন ফায়ার ফাইটার কাজ করছে।
বসুন্ধরার শপিং মলে অগ্নিনির্বাপক কোনও ত্রুটি ছিল কিনা? সে প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ রবিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি, আগুনের উৎসসহ ত্রুটি থাকলে তদন্ত কমিটি সেটি খুঁজে বের করবে।’
ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে শাকিল নেওয়াজ বলেন, সি-ব্লকে অন্তত একশ’ দোকান রয়েছে। সেখানকার কোনওটি আংশিক, কোনওটি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গতকাল (রবিবার) বেলা ১১.২৩ মিনিটে মার্কেটের লেভেল-৬-এর সি-ব্লকে ‘এমএস সুজ’ অথবা ‘খন্দকার সুজ’ নামের দুটি জুতার দোকান হতে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুটি দোকান পাশাপাশি। এই দোকান দুটি বন্ধ ছিল। আগুন লাগার পর থেকেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজ করেছে। তবে অগ্নিকাণ্ডের পরপর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় শপিং মল এবং আশেপাশের এলাকায় এতে কাজ করতে সমস্যা হয়েছিল।