দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভারতের ওড়িশা রাজ্যের বাসিন্দা ধন মাঝির কথা সকলের মনে আছে। গতমাসে স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে ১০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন তিনি। তাকে সাহায্য পাঠিয়েছেন বাহরাইনের প্রধানমন্ত্রী!
স্ত্রীর লাশ ঘাড়ে করে বহন করছিলেন ধন মাঝি। পাশে চোখ মুছতে মুছতে হাঁটছিল তার মেয়ে। সেদিন রাজ্যের হান্ডির হাসপাতাল হতে ৬০ কিলোমিটার দূরে গ্রামের বাড়িতে মৃত স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনো গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারেননি তিনি। অনেক অনু্রোধেও গাড়ি দেয়নি হাসপাতাল থেকে। কারণ তার ভাড়া দেওয়ার মতো কোনো টাকা ছিলো না।
প্রায় দশ কিলোমিটার মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে হাঁটার পরে এক স্থানীয় টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকের চোখে পড়েন তিনি। তিনিই জেলাশাসকের কাছে ফোন করে গাড়ি আনাবার ব্যবস্থা করেন। সংবাদ মাধ্যমে সেই খবর বিশ্বজুড়ে প্রচারিত হয়। সেই ধন মাঝি আবারও সংবাদে এসেছেন।
তার দুর্দশার এই খবর সংবাদপত্রে পড়ে জানতে পারেন বাহরাইনের রাজা হামাদ বিন ইশা আল খলিফা। ধন মাঝির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। দিল্লির বাহরাইন দূতাবাসে পৌঁছায় রাজার পাঠানো প্রায় ৯ লক্ষ টাকার চেক। সেই চেক নিতেই গত বৃহস্পতিবার জীবনে প্রথমবার বিমানে চেপে দিল্লি গিয়েছিলেন ধন মাঝি!
আগে বাহরাইনের প্রধানমন্ত্রীও অর্থ সহায়তা করেছেন। আবার ওড়িশার কয়েকজন বিধায়কও তার হাতে টাকা তুলে দিয়েছেন। সাহায্য পেয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকেও। রাজধানী ভুবনেশ্বরে আদিবাসী শিশুদের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব নিয়েছে ধন মাঝির তিন মেয়ের আজীবন পড়াশোনার। মেয়েদের সেই স্কুলে ভর্তি করে দিয়েই দিল্লির বিমান চড়েন তিনি। রাজার চেক নিতে যাওয়ার সময়েও তার পরনে ছিল নীল লুঙ্গি আর একটা পুরনো জামা। কাঁধে সেই গামছা।
বাহরাইন দূতাবাস সংবাদ মাধ্যমকে ধন মাঝি নীল রঙের চেকটা দেখান। ব্যাংক অফ বাহরাইন অ্যান্ড কুয়েতের ওই চেকে লেখা টাকার পরিমাণটা ৮,৮৭,৯৪৯।
সংবাদ মাধ্যমকে ধন মাঝি বলেছেন, এই সব টাকাই তিনি ব্যাংকে দীর্ঘমেয়াদী আমানত হিসাবে রাখবেন, যাতে তার মেয়েদের পড়াশোনার জন্য খরচ করতে পারেন। তার মেয়েদের পুলিশ কিংবা চিকিৎসক বানানোর ইচ্ছা ধন মাঝির।