দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পৃথিবীতে যুগে যুগে কতো কিই না আবিষ্কার হবে। বিজ্ঞানীরা পড়েছেন এবার মহাকাশের মহাখাদক ‘ব্ল্যাকহোল’ নিয়ে। আসলে ‘ব্ল্যাকহোল’ কী?
আলোর কণার ওপর মহাকর্ষ বল আসলে কীভাবে কাজ করে সেটি সেটি বের করতে বিজ্ঞানীদের বহু বছর লেগেছে। একটি নক্ষত্র যদি যথেষ্ট পরিমাণ বড় হয়, তার ঘনত্ব যদি নির্দিষ্ট হয়, সেক্ষেত্রে তার থেকে যে আলোর কণা নির্গত হয়ে থাকে সেটি সেই নক্ষত্র ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারে না। নক্ষত্রের মহাকর্ষ বলের প্রভাবে সেটি আবারও নক্ষত্রের বুকেই ফিরে আসবে। টেনিস বল শূন্যে ছোঁড়ার মতো ব্যাপার অনেকটা। আলোকরশ্মি যদি বেরিয়ে আসতে না পারে, শুধু তাই নয়, সেই নক্ষত্র আমাদের দৃষ্টিগোচরও হবে না।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, ব্ল্যাকহোল যদি নাই দেখা যায় তাহলে ‘ব্ল্যাকহোল’ যে রয়েছে, সেটি বিশ্বাস করবেন কীভাবে? তবে বিশ্বস বড় কথা নয়, বড় কথা হলো প্রমাণ।
এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে ‘ব্ল্যাকহোল’ থিয়োরি কী ভুল, নাকি এটি আইনস্টাইনের থিয়োরি..? প্রকৃত কথা হলো কোনোটিই ভুল নয়। এর সঠিক সমাধান রয়েছে আইনস্টাইনের স্পেশাল থিয়োরি অব রিলেটিভিটিতে।
এর থিয়োরিতে আইনস্টাইন বলেছেন, নক্ষত্রের মতো বিশাল ভরের বস্তু পাশ দিয়ে যখন যায়, তখন আলোকরশ্মির গতিপথ বেঁকে যায়। ব্ল্যাকহোলেও নাকি একই ব্যাপার ঘটে। দূরের কোনো নক্ষত্রের আলো ব্ল্যাকহোলের গায়ে এসে পড়বে, সেটিরও কোনো উপায়ও নেই। ব্ল্যাকহোলের মহাকর্ষ বলের প্রভাবে বেঁকে অন্যদিকে ঘুরে যায় সেই আলো, ব্ল্যাকহোলের শরীর স্পর্শ করার কোনো সাহস যেনো সেসব আলোর নেই!
যেমন ধরুন আমরা মনে করি A হলো দূর আলোকরশ্মি আর B হলো কাছের আলোকরশ্মি। A ব্লাকহোলের মহাকর্ষীয় সীমার পাশদিয়ে অতিক্রমের সময় বেঁকে যাচ্ছে। অপরদিকে B মহাকর্ষীয় সীমার ভেতরে ঢুকে পড়ছে, তবে সেটি বেরুেতে পারছে না। দূরের কোনো নক্ষত্র হতে এসে ব্ল্যাকহোলের শরীর স্পর্শ করার পূর্বেই বেঁকে যাওয়া সেই আলোকরশ্মিই হলো বিজ্ঞানীদের সাদাছড়ি। বেঁকে যাওয়া এই আলোর গতি-প্রকৃতিই মূলত ‘ব্ল্যাকহোল’ র অস্তিত্বের ঘোষণা দেয়।
মজার তথ্য হলো, আইনস্টাইন যখন তার জেনারেল থিয়োরি অব রিলেটিভিটি প্রকাশ করলেন তখন অনেকেই সেটি গ্রহণ করেননি। তখন প্র্যাকটিক্যালি প্রমাণ করার প্রয়োজন দেখা দেয়। এমন এক পরিস্থিতিতে একদল বিজ্ঞানী সিদ্ধান্ত নিলেন যে, সেটি তারা পরীক্ষা করে দেখবেন। সেই যে, বিশাল ভরের কোনো বস্তু কিংবা নক্ষত্রের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আলোর গতিপথ যে বেঁকে যায়। তারা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে বিশ্বের দুই প্রান্তে গেলেন নানা রকম বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি নিয়ে। তারপর সূর্যগ্রহণের দিন দু’দলই পরীক্ষায় নেমে পড়লেন। পৃথক-পৃৃথকভাবে করা এই পরীক্ষায় দুই দলের ফলই এলো এক। অর্থাৎ আইনস্টাইনের ভবিষ্যদ্বাণীই সঠিক, এই পরীক্ষা চালানোর কারণে ওই বিজ্ঞানীদল রাতারাতি বিখ্যাত বনে গেলেন।