দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঘন কুয়াশার এক অন্যরকম আবহাওয়া। যে আবহাওয়ার কথা এখনও কেও ভুলতে পারে না। এবার লন্ডনের ‘কিলার ফগের’ সেই রহস্য উদঘাটিত হয়েছে!
ঘোলাটে এক গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য রীতিমতো নামকরা স্থান হলো এই লন্ডন। তবে আজ নয়, সেই ১৯৫২ সালের কুয়াশার কথা কেও বোধহয় কখনও ভুলতে পারবে না। রীতিমতো সেই প্রাণঘাতী কুয়াশার কারণ সম্পর্কে এখনও রহস্যই রয়ে গেছে। তাহলে কেনো হয়েছিল এমনটি?
১৯৫২ সালের ডিসেম্বর মাসের কথা। ৫ দিন ঘন কুয়াশা ঢেকে ফেলে পুরো লন্ডনকে। যখন এই রহস্যময় কুয়াশা সরে গেলো, তখন এর প্রভাবে অন্ততপক্ষে দেড় লাখ মানুষ হাসপাতারে ভর্তি হলেন। ৪ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন সে সময়। তবে কী ছিলো ওই কুয়াশায়?
গবেষকদের মতে, ওই কুয়াশার প্রভাবে ১২ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছিলো। হাজার হাজার পশু মারা গিয়েছিলো। তাই এটাকে ‘কিলার ফগ’ বলা হতো। প্রকৃতির এই অতি গোপন ঘটনা রহস্যই রয়ে যায়। তবে কারণ তো কিছু না কিছু অবশ্যই রয়েছে। বিজ্ঞানীরা তা বের করার প্রয়াস চালিয়েছেন দীর্ঘদিন যাবত।
দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা কিলার ফগ নিয়ে অনেক মাথা ঘামিয়েছেন। তাদের ধারণা ছিলো, ঘন কুয়াশার সঙ্গে পোড়া কয়লার ধোঁয়া মিশে একে প্রাণঘাতী করে দিয়েছিলো। কুয়াশা তো সব সময় থাকেই, তাই বলে কী কুয়াশা মানুষের মরণ ডেকে আনবে? বিজ্ঞানীরা এটি মানতে নারাজ। চীন, আমেরিকা ও ব্রিটেনের গবেষকরা একযোগে সেই কারণ বের করার পেছনে লেগে রয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে। তারা চীনের দুটো ঘনবসতিপূর্ণ শহর বেইজিং ও জিয়ানের আবহাওয়া নিয়ে গবেষণাও চালিয়েছেন। তারা নিজেদের গবেষণাগারে সেই কুয়াশা সৃষ্টি করেন গবেষণার জন্য।
টেক্সাসের এঅ্যান্ডএম ইউনিভার্সিটির অ্যাটমোস্ফিরিক বিজ্ঞানী ও প্রধান গবেষক রেনি ঝ্যাং বলেছেন, লন্ডন কুয়াশার অন্যতম উপাদান ছিলো সালফেট। সালফিউরিক এসিডের উপাদান সৃষ্টি হতো সালফার ডাইঅক্সাইড। এটি নির্গত হয় মূলত পুড়তে থাকা কয়লা হতে। তিনি জানান, আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, কয়লা পোড়ার সময় অপর আরেকটি উপাদান নির্গত হয় যার নাম নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড। এটিই প্রাকৃতিক কুয়াশায় মিশে যেতে পারে। আবার সালফার ডাইঅক্সাইড হতে সালফেট কুয়াশাকে প্রাণঘাতী করতে আরও বেশি কাজ করেছে। লন্ডন কুয়াশায় আরও অনেক ধরনের উপাদান ছিলো। কিছু এসিডিক উপাদানও ছড়িয়ে পড়ে।
জানা যায়, ১৯৫২ সালের ওই কিলার কুয়াশার কারণেই তৈরি হয় ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট। ১৯৫৬ সালে এটি পাস করে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। এই কুয়াশাকে ইউরোপের ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক বায়ু দূষণের ঘটনা বলে প্রকাশ করা হয় সে সময়।
চীনের অনেক শহরেও বায়ু মারাত্মক দূষিত থাকে। এই বায়ু অনেকটা লন্ডনের কিলার ফগের মতোই। তবে চীনের কুয়াশা ও কিলার ফগের কুয়াশার পার্থক্য হলো, চীনের কুয়াশায় বিরাজ করে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপাদান। এর সালফেটে থাকে কেবলমাত্র অ্যামোনিয়া। চীনে মূলত সালফার ডাইঅক্সাইড নির্গত হয় পাওয়ার প্ল্যান্ট হতে। নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড নির্গত হয় পাওয়ার প্ল্যান্ট ও অটোমোবাইল হতে। অ্যামোনিয়া আসে সারের ব্যবহার এবং অটোমোবাইল হতে।
ঝ্যাং আরও জানান, আমরা অবশেষে ১৯৫২ সালের লন্ডনের সেই ভয়াল ‘কিলার ফগের’ রহস্য ভেদ করতে সমর্থ হয়েছি। পাশাপাশি বায়ু দূষণ রোধের কিছু পন্থাও বের হয়ে এসেছে এই গবেষণা থেকে। এগুলো চীনের জন্যও প্রযোজ্য হবে। নাইট্রোজেন অক্সাইড ও অ্যামোনিয়ার নিঃসরঃণ কমিয়ে আনার মাধ্যমে কেবল সালফেট গঠন হ্রাস করা সম্ভব। গবেষণাপত্রটি প্রোসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস জার্নালে প্রকাশিত হয়।