দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রাচীন মিশরীয়রা মৃত্যুর পর এক ধরণের পাত্রের মধ্যে সমাহিত করতেন বলে সম্প্রতি গবেষণায় এমন এক তথ্য উঠে এসেছে!
ওই গবেষণায় বলা হয়, মিশরীয়দের বিশ্বাস ছিলো পাত্রের মধ্যে সমাহিত করলে তাদের নাকি পুনর্জন্ম হবে। প্রাচীনকালে মিশরে পাত্রের মধ্যে সমাধিস্থ করা এক ধরনের দারিদ্র্যতার প্রতীক হিসেবেই নাকি বিবেচনা করা হতো। তবে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ম্যাককুয়েরি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, পাত্রগুলো শুধু মৃতদের শেষবারের মতো সমাধিস্থ করার বিষয় ছিলো তা নয়। এগুলোর ব্যবহার করতো এক ধরনের বিশ্বাসে, যা তাদের নির্দেশ করতো যে তারা তাদের মৃত্যুর পর পুনরায় জন্মাবেন!
প্রাচীন মিশরে পুনর্জন্মের জন্যই যে শুধুমাত্র পাত্রের মধ্যে সমাহিত করা হতো তা নয়। অনেক সময় সমাধির ক্ষেত্রে ডিম্বাকৃতির এক রকমের বস্তুই মূলত ব্যবহার করা হতো।
গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংকুচিত অবস্থায় কিংবা ঘুমন্ত অবস্থায় পাত্রের মধ্যে সমাধিস্থ করার যে চিত্র দেখা গেছে সেটি এবং ডিম্বাকৃতি বস্তুর মধ্যে সমাধিস্থ করার পার্থক্য নির্ণয় করাটা বেশ কঠিন কাজ। সমাধিস্থ করার যে প্রতীকী চিত্র পাওয়া গেছে তার বিষয়বস্তু বের করার জন্য আরও অনেক গবেষণা প্রয়োজন বলে গবেষকরা মনে করছেন।
গবেষণায় বলা হয়, যেহেতু শিশু এবং নবজাতকরা মারা গেলেও তাদের প্রায় সময়ই পাত্রের মধ্যে সমাহিত করা হতো সে কারণে গবেষকরা প্রথমে এগুলোকে তেমন একটা গুরুত্বই দেননি।
গবেষক দলের পাওয়ার ও ট্রিসটেন্ট জানান, এভাবে পাত্রের মধ্যে শিশু এবং মৃত নবজাতকদের সমাধিস্থ করা এটা নির্দেশ করে না যে, তাদের শুধুই উচ্ছিষ্ট হিসেবে বিবেচনা করা হতো। প্রাচীন মিশরীয়রা প্রায় সময় সবকিছুই পুনরায় ব্যবহার করতেন। এমনকি তখনকার উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন লোকরাও তাদের পরিবারের কেও মারা গেলে তাদের পুরোনো কফিনেও সমাধিস্থ করতেন।
পাওয়ার এবং ট্রিসটেন্ট বর্ণনা করেন যে, প্রাচীন মিশরে যখন কোনো বস্তু কোনো কাজের জন্য টেকসই না হতো, তখন তারা সেটি ফেলে দিতেন না। এটাকে বরং পুনরায় মেরামত করা হতো কিংবা এটার আকৃতি পরিবর্তন করে ভবিষ্যতের জন্য সেটি সংরক্ষণ করা হতো।
শুধুমাত্র শিশু এবং নবজাতকই নয়, অনেক প্রাপ্ত বয়স্কদেরও পাত্রের মধ্যে সমাধিস্থ করা হতো। পাত্রের মধ্যে সমাহিত করার অনেক নিদর্শন নীলনদের তীর এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় পাওয়া গেছে। গ্রেকো-রোমান সময় ৪টি এলাকায় প্রাপ্ত বয়স্কদের সমাধিস্থ করা হতো। গবেষকদের ধারণা, কুয়ারি শহরসহ নীলনদের পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি শহরে ৫টি প্রাপ্ত বয়স্কদের সমাধির নিদর্শন পাওয়া যায়।
মিশরীয়দের মতে, ওই সময়ে যারা মৃতদেহ পুনর্জন্মের জন্য পাত্রের মধ্যে সমাধিস্থ করতেন তারা ছিলেন দারিদ্র। তবে বিষয়টি নিয়ে একমত নন গবেষকরা। তারা জানিয়েছেন, যারা মৃতদের পাত্রের মধ্যে সমাধিস্থ করতেন তারা যে আদতেও দরিদ্র সেটা বলা সম্ভবত ঠিক হবে না। এক শিশুকে পাত্রের মধ্যে সমাধিস্থ করা হয়েছিল যে পাত্রের মধ্যে অনেক মূল্যবান জিনিসপত্রও পাওয়া যায়।