দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সম্রাট শাহজাহানের তাজমহলের খ্যাতি দুনিয়া জোড়া। পৃথিবীর নানা প্রান্ত হতে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক আসেন ভারতে। সেই তাজমহল বিক্রির কথা শুনলে যে কেও আশ্চর্য হবেন সেটিই স্বাভাবিক।
হয়তো অনেকেই ভাবতে পারেন টাকা দিয়ে তো সবকিছুই কেনা যায় তাহলে তাজমহল কেনো কেনা যাবে না? কারণ টাকা দিয়ে তো কতো কিছুই করা সম্ভব। যদি তাজমহলটাও সত্যিই কেনা যেতো! তবে সত্যিই ওই ব্যবস্থা করে দিতেন এক ভদ্রলোক! তার নাম নটবরলাল। তিনি সম্রাট শাহজাহানের তাজমহল বিক্রি করেছেন তিনবার, লালকেল্লা বিক্রি করেছেন দুইবার আর রাষ্ট্রপতি ভবন বিক্রি করেছেন একবার!
শুধু কি তাই, ৫৪৫ সদস্য নিয়ে ভারতের পার্লামেন্ট ভবনটাও বিক্রি করেছিলেন নটবরলাল! ভারত স্বাধীন হওয়ার পরের পাঁচ দশক নটবরলাল নামটি ছিল ঠগবাজির এক জ্বলন্ত প্রতীক। মানুষ ঠকিয়ে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিতে দারুণ সীদ্ধহস্ত ছিলেন।
নিজের এমন নানা ঠকবাজ কর্মকাণ্ডে ভারত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন নটবরলাল। তবে তার এই নামটিও আসল নাম নয়। ৫০টিরও বেশি ছদ্মনাম ছিল তার। মিথিলেশ কুমার শ্রীবাস্তব তার প্রকৃত নাম।
জানা যায়, বিহারের সিওয়ান জেলার বানগ্রা গ্রামে তিনি ১৯১২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মানুষকে প্রতারিত করার যেনো নিত্য নতুন বুদ্ধির ভাণ্ডার ছিল তার কাছে। শুধু তাই নয়, জনপ্রিয় মানুষদের সই নকল করাতে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন ওই ব্যক্তি।
মূলত পেশাগত জীবনে একজন আইনজীবী ছিলেন তিনি। তবে ওই পেশায় তিনি কখনও স্থিত হননি। বরং বেছে নিয়েছিলেন মানুষকে ঠকানোর এই কাজটি। সই জাল করতে পারতেন খুব ভালো। তাই একেই বেছে নেন তিনি মূলধন হিসেবে।
আশ্চর্যের বিষয় হলো তাজমহলসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিক্রির জন্য বিদেশিদের কাছে তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। আর বিক্রির প্রমাণ হিসেবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও দিতেন তিনি! আর এই কাগজপত্রে থাকতো ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদের স্বাক্ষরও!
কথার ভঙ্গি এবং প্রতারণার অভিনব কারসাজিতে নিজেকে প্রায় অধরা করে তুলেছিলেন নটবরলাল। টাটা, বিড়লা ও ধীরুভাই আম্বানির মতো শিল্পপতিরা ছিলেন নটবরের শিকারের তালিকার মধ্যে। সমাজসেবী হিসেবে তিনি হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা। এ ছাড়া দোকানমালিকদের ভুয়া চেক দিয়ে লাখ লাখ টাকা ঠকিয়েছেন নটবরলাল।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, ভারতের ৮টি প্রদেশে অন্তত ১০০টির মতো মামলা ছিল নটবরের বিরুদ্ধে। এসব মামলায় ১১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিলো তার। পুলিশ আটক করেছিল নটবরলালকে। তবে জেল হতে ৮বার পালিয়েছেন তিনি। জেল খেটেছেন অন্তত ২০ বছর।
জানা যায়, তিনি ১৯৯৬ সালে ৮৪ বছর বয়সে শেষবারের মতো গ্রেফতার হন। তবে অসুস্থতার কারণে নটবরলালকে কানপুর জেলখানা হতে নয়াদিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস হাসপাতালে রাখা হয়।
নটবরলাল কবে মারা গেছেন সে সময় নিয়েও আছে হরেক রকম তথ্য। তার আইনজীবীরা বলেছেন, ২০০৯ সালের ২৫ জুলাই তিনি মারা যান। তবে তার ভাই গঙ্গা প্রসাদ শ্রীবাস্তবের দাবি হলো, ১৯৯৬ সালেই নটবরের মৃত্যু হয়েছিলো!