বাঙালি বিজ্ঞানী অনিতার এইডসের ওষুধ আবিস্কার!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এইডস নিয়ে গবেষণার শেষ নেই। এই মারণব্যধির ওষুধ আবিষ্কারের জন্য বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছেন। তবে এবার বাঙালি বিজ্ঞানী অনিতা এইডসের ওষুধ আবিস্কার করে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন!

এইডস ভাইরাস ঠেকানোর ওষুধ আবিস্কার করেছেন বাঙালি বিজ্ঞানী অনিতা সরকার। ডেঙ্গুর পর তাহলে কী এবার এইডসের টিকাও আমাদের হাতে আসতে চলেছে? বাঙালি অনিতার এই আবিষ্কার সমগ্র বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে।

এইডসের মতো একটি মারণব্যাধি যে গত দু’-তিন দশক ধরে গোটা বিশ্বের মানুষের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। এই ভাইরাস ‘এইচআইভি-পজিটিভ’ রাক্ষসের মতোই বাড়ে অনেক সংখ্যায়। অত্যন্ত দ্রুত হারে, নিমেষের মধ্যেই বাড়ে এই ভাইরাসটি। ডেঙ্গু, ফ্লু’র (ইনফ্লুয়েঞ্জা) চেয়ে এইডস ভাইরাসের ‘মিউটেশন রেট’ অনেক বেশি বলেই এটা হয়ে থাকে। সে কারণে এতোদিন এই মারণব্যধিকে রোখার পথ খুঁজে বের করতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের।

Related Post

তবে দীর্ঘদিনের গবেষণার ফলশ্রুতিতে অন্ধকারে এবার কিছুটা হলেও আলোর দেখা মিলেছে! মার্চের শেষে বিজ্ঞান জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশিত হয়েছে একটি গবেষণাপত্র। এই গবেষণাপত্রের শিরোনাম ছিলো- ‘এইচআইভি-ওয়ান ব্রডলি নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি প্রিকার্সার বি সেল্‌স রিভিলড বাই জার্মলাইন-টার্গেটিং ইমিউনোজেন’। ক্যালিফোর্নিয়ার ‘স্ক্রিপ্‌স রিসার্চ ইনস্টিটিউটে’র কম্পিউটেশনাল বায়োলজিস্ট উইলিয়াম শিফের নেতৃত্বে ওই গবেষক দলে রয়েছেন একমাত্র ভারতীয় বাঙালি অনিতা সরকার।

অনিতা সরকারের জন্ম কোলকাতায়। স্কুলজীবনের বেশির ভাগ সময় তিনি থাকতেন ন্যাশনাল লাইব্রেরি ক্যাম্পাসে। পরে সেখান থেকে তিনি চলে যান মহেশতলায়। সেন্ট পল্‌স ও সেন্ট টেরেসা স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে জুলজিতে অনার্স নিয়ে স্নাতক হন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় হতে। দিল্লিরই জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় হতে অনিতা বায়োইনফর্মেটিক্সে স্নাতকোত্তর স্তরের পাঠ শেষ করে পিএইচডি করেন ফ্রান্সের গ্রেনোবল হতে। অনিতা সরকারের প্রথম পোস্ট ডক্টরাল থিসিসটির কাজ চলছে এখন ক্যালিফোর্নিয়ার স্ক্রিপ্‌স রিসার্চ ইনস্টিটিউটে। স্ক্রিপ্‌স রিসার্চ ইনস্টিটিউটে চলছে এইডস সংক্রান্ত গবেষণার কাজও।

সহযোগী গবেষক ক্যালিফোর্নিয়ার লা হোয়ায় ‘স্ক্রিপ্‌স রিসার্চ ইনস্টিটিউটে’র স্ট্রাকচারাল বায়োলজিস্ট অনিতা সরকার বলেছেন, ‘‘শরীরে ভাইরাসের মতো শত্রুরা হামলা চালালে তাদের রুখতে প্রাকৃতিকভাবেই শরীরে কিছু অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে থাকে। বিশেষ বিশেষ ভাইরাসের হানাদারি রোখার জন্য বিশেষ বিশেষ অ্যান্টিবডি। যেমন ধরুন তরোয়ালের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ঢাল কিংবা বর্ম লাগে। অপরদিক বুলেট-বৃষ্টি হতে বাঁচতে লাগে বুলেট-প্রুফ জ্যাকেট। প্রতিরোধের ধরনটা মোটামুটি একই রকম হলেও তার হাতিয়ারটা হয় পৃথক পৃথক।’’

স্ট্রাকচারাল বায়োলজিস্ট অনিতা সরকারের কথায়, ‘‘গত ৩০ বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, খুব অল্প সংখ্যক এইচআইভি-পজিটিভে আক্রান্ত মানুষ এমন বিশেষ ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম। এমন অ্যান্টিবডির সংখ্যা এবং ভাইরাসের ‘মিউটেশন রেট’-এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাদের দ্রুত পরিবর্তনের ক্ষমতা এইচআইভি ভাইরাসকে শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে দেবে না। গবেষকরা চেষ্টা করছেন যে, এইচআইভি-পজিটিভ ভাইরাস রোখার জন্যেও আমাদের শরীরে গড়ে ওঠে বিশেষ এক ধরনের অ্যান্টিবডি। গবেষকরা চেষ্টা করছেন, এমন একটা টিকা বানাতে যা দেহে ওই ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি করে রাখে। যে কারণে সুস্থ মানুষের শরীর ওই মারাত্মক ভাইরাসের হানাদারিকেও রুখতে পারে।’’ যা দিয়ে বানানো হচ্ছে এইডস ভাইরাসের টিকা।

অণুবীক্ষণের তলায় এইডস ভাইরাস। যেভাবে এইডস ভাইরাস ঠেকানোর প্রক্রিয়াকে জোরদার করা হচ্ছে। অনিতা বলেছেন, ‘গবেষকরা চেষ্টা করছেন, যাদের এইডস হয়নি, তাদের শরীরে ওই প্রতিরোধ ব্যবস্থাটাকে কৃত্রিমভাবে জোরদার করে তুলতে। আমরা কম্পিউটেশনাল ডিজাইন ও স্ট্রাকচারাল বায়োলজির মাধ্যমে এইচআইভি ভাইরাসের প্রোটিনের একটি অংশ বানিয়েছি।

‘যেটা আমাদের ‘জার্মলাইন’ ( যেগুলি আমাদের শরীরে জন্মের সময় থেকেই থাকে) অ্যান্টিবডিগুলোকে শনাক্ত করে। যাতে করে সেগুলিকে এইচআইভি প্রতিরোধ করার মতো করে গড়ে তুলতে পারে। সে কারণে ওই ভাইরাসের হানাদারি রোখার জন্য এবার আমরা আগেভাগেই তৈরি থাকতে পারবো।’ কিন্তু আমাদের শরীরে কী ওই ‘জার্মলাইন অ্যান্টিবডি’গুলি পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে?

এ বিষয়ে অনিতা বলেছেন, ‘আমাদের গবেষণায় আমরা দেখেছি যে, সাধারণ সুস্থ-সবল মানুষের শরীরে এই জার্মলাইন অ্যান্টিবডিগুলো থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ওই ‘ডিজাইনড্‌ প্রোটিন’ ও আ্যান্টিবডিগুলির গঠন দেখে আমরা নিশ্চিত, সাধারণ মানুষের মধ্যে এইচআইভি-র হানাদারি রোখার ক্ষমতা রয়েছে। আমাদের এই ‘ডিজাইনড্‌ প্রোটিন’ আগামী দিনে এইচআইভি রোখার জন্য টিকা তৈরির ক্ষেত্রে একটি বড় হাতিয়ার হয়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। বলা যায়, এই সম্ভাবনা যথেষ্টই।’ এই গবেষণার রিপোর্ট সমগ্র বিশ্ববাসীকে নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে তাতে সন্দেহ নেই। হয়তো একদিন দেখা যাবে টীকা আবিষ্কারের ফলে এই মারণব্যাধিকে আমরা সত্যিই জয় করতে সামর্থ হয়েছি!

This post was last modified on এপ্রিল ১০, ২০১৮ 7:02 অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ইন্টারন্যাশনাল ডিজ্যাবিলিটি আর্ট ফেস্টিভ্যাল

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অন্তর্ভূক্তিমূলক থিয়েটার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিল্পীদের নিয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টার…

% দিন আগে

বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন শাকিব খান!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা শাকিব খান। অপু বিশ্বাস ও বুবলীকে…

% দিন আগে

৬ মাসে ইসরায়েলি বর্বরতায় গাজায় নিহত ১৩ হাজার শিশু

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গাজা উপত্যকায় গত ৬ মাসে নিহত শিশুদের সংখ্যা আঁতকে উঠার…

% দিন আগে

আপনার চরিত্র কেমন তা আপনার আঙুলের আকৃতিই বলে দেবে!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনার ব্যক্তিত্ব কীরকম তা বলে দিতে পারে আপনার আঙুলের আকৃতি!…

% দিন আগে

সিলেটের মালিনিছড়া চা বাগানের দৃশ্য

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১…

% দিন আগে

খালি পেটে পাকা পেঁপে খাওয়া কী আদৌ শরীরের জন্য ভালো?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পেঁপেতে উপস্থিত ‘পেপসিন’ ও ‘প্যাপাইন’ নামক উৎসেচকগুলো পরিপাকে বিশেষ সহায়ক।…

% দিন আগে