দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশে অনেক কিছুই সম্ভব। একটি ব্রিজের খুঁটি বানানো হয়েছে বালির বস্তা দিয়ে! কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়ায় বালির বস্তা দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ একটি ব্রিজ রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ!
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এমন একটি খবর পড়ে যে কেও বিস্মিত হবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ ব্রিজের খুঁটির কাজ করতে গিয়ে বালির বস্তা দিয়ে ঠেস দেওয়া হয়েছে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়ায়। বালির বস্তা দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ একটি ব্রিজ রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে স্থানীয় সড়ক ও জনপদ বিভাগ। সেজন্য ওই ব্রিজের তলদেশে দেওয়া হয়েছে শত শত বালির বস্তা। এই বালির বস্তা দিয়েই খুঁটির কাজ চালানো হচ্ছে।
গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্বাক ভূমিকায় পালন করছেন। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) বলছে, পুনঃনির্মাণ কাজের বাজেট না পাওয়া পর্যন্ত বালির বস্তা দিয়েই যান চলাচল অব্যাহত রাখতে হবে।
আজকের কথা নয় ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাতামুহুরী ব্রিজের রিলিং ভেঙে নিহত হন ১৮ জন যাত্রী। এরপর হতে ব্রিজটি ঝঁকিপূর্ণ ঘোষণার দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল হতে। এরপর পার হয়েছে দীর্ঘ চার বছর! কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা না করেই যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রেখেছেন। সম্প্রতি ওই ব্রিজটির মাঝখানে নতুন করে নিচু হয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বিঘ্নও ঘটছে। যেকোনও সময় ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, প্রাণ যেতে পারে বহু মানুষের।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে আরও জানা যায়, দীর্ঘ অর্ধশতর বেশি বছর পূর্বে অর্থাৎ ১৯৬০ সালে চকরিয়ায় মাতামুহুরী ব্রিজটি নির্মিত হয়। এর মেয়াদকাল একশ’ বছর ধরা হলেও তার আগেই ব্রিজটির বিভিন্ন স্থান ফাটল ধরে এবং ভেঙে পড়ে ও নিচুও হয়ে যায়। বড় আকারের ফাটলও ধরেছে কয়েকটি স্থানে। ব্রিজের ঠিক মাঝখানে বড় ধরনের গর্ত হওয়ায় পাটাতনের মাধ্যমে জোড়াতালি দিয়ে যানবাহন চলাচলা চালু রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এতে কোনও যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়ি ব্রিজে উঠলেই ব্রিজটি কেঁপে উঠে, তখন আতঙ্ক শুরু হয় যাত্রীদের মধ্যে। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে লাখ লাখ মানুষ। এসব সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে সম্প্রতি সেতুর পিলারও নিচু হয়ে যায় এবং ফাটল ধরে। যে কারণে বালির বস্তার ঠেস দিয়ে রাখতে হয়েছে।
সওজ এর সংশ্লিষ্ট সূত্র সংবাদ মাধ্যমকে জানায়, প্রায় ৪ বছর পূর্বে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতুর মাঝখানের ঢালাইয়ের একটি অংশে সামান্য নিচু হয়ে দেবে যায়। ওই সময় ভারী বৃষ্টিতে একটু একটু করে বড় অংশ নিচু হয়ে গেছে। এরপর নিচু হওয়া ক্ষতস্থানে লোহার পাটাতন দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। তবে সেই পাটাতন অপেক্ষাকৃত একটু উচুঁতে স্থাপন হওয়ায় ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে পর্যটকবাহী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারালে পাশের রেলিং ভেঙে নিচে নদীর চরে পড়ে যায়। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় অন্তত ১৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। এরপর সড়ক ও জনপথ বিভাগ ভেঙে যাওয়া রেলিং মেরামত এবং নিচু হয়ে যাওয়া অংশ আবারও রিপিয়ারিং করে যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন করার চেষ্টা চালায়। এভাবে ঝুঁকির মধ্যেই দীর্ঘদিন ধরে যানবাহন চলাচল করে আসছে এই ব্রিজটি দিয়ে।
চকরিয়া উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু এহছান মোহাম্মদ আজিজুল মোস্তফা ওই সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে ঝুঁকি এড়াতে সেতুর নিচে মাটির ওপর হতে গার্ডারের তলানী পর্যন্ত বালুর বস্তা দেওয়া হয়েছে। চলছে বালুর বস্তার চারিদিকে ইটের গাঁথুনি দেওয়ার কাজও, যাতে করে বালুভর্তি বস্তা সরে যেতে না পারে। এছাড়াও সেতুর ওপর দিয়ে যাতে দশ টন ওজনের বেশি পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করতে না পারে, সেজন্য সেতুর দুই দিকে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে।’
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম মাতামুহুরী ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে বলেচেন, ‘জোড়াতালি দিয়ে যান চলাচল করছে। সওজের পক্ষ হতে আমাকে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানানো হয়। এই বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের ওসিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে করে মাতামুহুরী ব্রিজ দিয়ে ১০ টনের অধিক ওজনের পণ্য বোঝাই যানবাহন চলাচল না করে। এই বিষয়টি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় উত্থাপন করা হয়েছে।’