দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এমন মিল কখনও দেখা যায় না। অন্তত একটি পরিবারে এতোগুলো মানুষ একই পেশায় তাও আবার বৈমানিক! এমনই একটি ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এমন একটি পরিবার পাওয়া গেছে যে পরিবারের সকলেই বৈমানিক!
পরিবারের সকলেই বৈমানিক শুধু তাই নয়, পেশাদার বৈমানিক হওয়ার ঐতিহ্য এই পরিবারের তিন প্রজন্মের মধ্যে রয়েছে! সব মিলিয়ে ১০০ বছরের পারিবারিক ঐতিহ্যও বলা যাবে। আজ রয়েছে এমনই এক পরিবারের গল্প। এই গল্প ভারতের ভাসিন পরিবারের। এই পরিবারের দাদা, বাবা, মা, ছেলে ও মেয়ে সবাই পেশায় বৈমানিক।
বৈমানিক পেশায় এই পরিবারের অগ্রদূত হলেন ক্যাপ্টেন জেয় দেব ভাসিন। তিনি ১৯৫৪ সালে ভারতের ৭ জন কমান্ডারের মধ্যে ছিলেন একজন। পেশাদার বৈমানিক হিসেবে নিজের পরিবারের নাম উজ্জ্বল করেছিলেন তিনি। তবে সেখানেই থেমে থাকেননি। তার ছেলেও বড় হয়ে নাম লিখিয়েছেন বৈমানিকের খাতায়। শুধু তার ছেলে ক্যাপ্টেন রোহিত ভাসিনই নন, তার পুত্রবধুও নিবেদিতা জেইনও একজন বৈমানিক হিসেবে পরিবারের ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যান।
মাত্র ২০ বছর বয়সে নিবেদিতা ১৯৮৪ সালের ২৪ জুন ভারতের বিমান সংস্থার কাছ থেকে তার প্রথম নিয়োগপত্রটি পেয়েছিলেন। ২৬ বছর বয়সে নিবেদিতাই পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ বৈমানিক যিনি কমান্ডার হিসেবে বোয়িং ৭৩৭-তে যোগদান করেন। এরপর তিনি এয়ারবাস-৩০০ এর কমান্ডার হয়েছিলেন।
নিবেদিতা শুধু এটুকুতেই থেমে ছিলেন না। তিনি বিশ্বের প্রথম শতভাগ নারী ক্রু নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করেছিলেন। মোট কথা হলো, বৈমানিক হিসেবে তার সফলতার কথা বলেও শেষ করা যাবে না।
রোহিত এবং নিবেদিতার সন্তানরাও থেমে থাকেননি। তারাও তাদের পরিবারের ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিতে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছেন। তাদের সন্তানরা হলেন: রোহান ভাসিন এবং নীহারিকা ভাসিন। সন্তানদের এমন সাফল্যে গর্বিত ভাসিন পরিবারের সকলেই। রোহিত ভাসিন এবং নিবেদিতা জেইন দম্পতির মেয়ে নীহারিকা সম্প্রতি এয়ারবাস-৩২০ এর কমান্ডারের দায়িত্ব পেয়েছেন। ঠাকুরদা, বাবা-মা এবং বড়বোনের দেখা দেখি ছেলে রোহানও বৈমানিক হয়েছেন!
রোহান এবং নীহারিকার বৈমানিক বাবা-মা বেশিরভাগ সময়ই বাড়ির বাইরে বাইরেই থাকতেন। সন্তানদের তেমন একটা সময় দিতেও পারতেন না তারা। তারপরও এর কোনো মন্দ প্রভাব কখনই তাদের ওপর পড়তে দেননি এই বৈমানিক দম্পতি। বরং তারাও তাদের বাবা-মার পরিশ্রম দেখে নিজেদের জীবনের লক্ষ্যকে সাজিয়েছেন ঠিক সেভাবে। বাবা-মার মতো নিজেরাও পাইলট হবার স্বপ্ন দেখতেন খুব ছোটোবেলা থেকেই। অন্য কোনো পেশার কথা তারা কখনও ভাবতেও পারেননি। শুধুমাত্র নিজেদের বাবা-মাকে অনুসরণ করেই তারা বৈমানিক হবার জন্য একান্ত চেষ্টা করে গেছেন ছোট থেকেই। সম্প্রতি তিনি বোয়িং-৭৭৭ এর কমান্ডার হয়েছেন । এতে পরিবারের সবাই খুবই খুশি। পিতা-পুত্র দুজনই বোয়িং-৭৮৭ এ প্রায় ১০ বার একসঙ্গে পাইলট ও কো-পাইলট হিসেবে উড়ানোর সুযোগও পেয়েছেন তারা!
একটি সত্য বিষয় হলো কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের এক অনবদ্য মিশেলে তৈরি যেনো এই পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষ। এরকমটা হলে যে সফলতা আসে সেটাই প্রমাণ করে দিয়েছেন তারা পুরো পরিবারের সকলে মিলে। সমগ্র বিশ্বকেই তারা একবার মনে করিয়ে দিলেন- পরিশ্রমের সঙ্গে নিজের লক্ষের দিকে কেও দৃঢ়ভাবে এগুতে থাকলে তাকে আটাকাতে পারে না কেও, লক্ষ্যে সে পৌঁছাবেই!