দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অবশেষে দুনিয়ার মায়া কাটিয়ে চলে গেলেন বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। পরিবারের তরফ হতে ৭৬ বছর বয়সী এই বিজ্ঞানীর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করা হয়েছে। বুধবার ভোরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বিভিন্ন সময় তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়ানো হয়েছে। তবে এবার পরিবারের তরফ হতে ৭৬ বছর বয়সী এই বিজ্ঞানীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। আজ (বুধবার) ভোরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। খবর বিবিসির।
প্রফেসর হকিংয়ের সন্তান লুসি, রবার্ট ও টিম জানিয়েছেন যে, ‘আমরা আমাদের বাবাকে হারালাম। বুধবার ভোরটি ছিলো আমাদের জন্য বড় শোকের। মহান বিজ্ঞানীর কাজ রয়ে গেলো বিশ্বে। বহু বছর ধরে মানুষ উনাকে মনে রাখবেন। উনার অসাধারণ ব্যক্তিত্ব এবং রসবোধ বিশ্বের বহু মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।’
হকিংয়ের জন্ম হয় ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে। ফ্রাঙ্ক ও ইসোবেল হকিংয়ের চার সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সন্তান ছিলেন তিনি। ছেলেবেলা থেকেই বিজ্ঞান ও মহাশূন্য নিয়ে তার ছিল অদম্য আগ্রহ। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি কলেজে পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। পরে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কসমলোজি (বিশ্বব্রহ্মান্ডের বিজ্ঞান) নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি।
১৯৬৩ সালে ২১ বছর বয়সে পা দেওয়ার কয়েক দিন পূর্বে হকিং দুরারোগ্য মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হন। দুই বছরের বেশি তিনি বাঁচবেন বলে আশা ছিল না তাঁর চিকিৎসকদের। ডক্টরেট সম্পন্ন করতে পারবেন কি না তা নিয়েও সংশয় ছিল সকলের। তবে সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে তিনি শুধু পিএইচডি অর্জন করেছেন তাই নয়, এ পর্যন্ত সৃষ্টিজগতের রহস্য সন্ধানে কাজ করে চলেছেন নিরলসভাবে। এদিকে ধীরে ধীরে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে সারা দেহে। হকিং হয়ে পড়েন হুইলচেয়ারে আবদ্ধ। একপর্যায়ে কথা বলা কষ্টকর হয়ে ওঠে স্টিফেন হকিংয়ের জন্য। ১৯৮৫ সালে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন পুরোপুরিভাবে। এরপর হতে বিশেষ একটি কম্পিউটারের মাধ্যমে নিজের কণ্ঠ ফিরে পান স্টিফেন হকিং। মোটর নিউরণে আক্রান্ত হওয়ার কিছুদিন পূর্বে হকিং পরিচিত হন জেন ওয়াইল্ডের সঙ্গে। ১৯৬৫ সালে তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পূর্বে এই দম্পতির ৩টি সন্তান হয়। ১৯৯৫ সালে হকিং দ্বিতীয়বারের মতো বিয়ে করেন। ২০০৬ সালে ফের বিচ্ছেদ ঘটে তার।
স্নাতক সম্পন্ন হওয়ার পরও ক্যামব্রিজেই কাজ অব্যাহত রাখেন স্টিফেন হকিং। প্রথমে রিসার্চ ফেলো এবং পরে প্রফেসনাল ফেলো হিসেবে কাজ করেন তিনি। ১৯৭৪ সালে রয়্যাল সোসাইটিতে বরণ করে নেওয়া হয় হকিংকে। ১৯৭৯ তাকে ক্যামব্রিজের লুকবাসিয়ান প্রফেসর অব ম্যাথমেটিকস পদে নির্বাচিত করা হয়। বিশ্বের সব থেকে সম্মানিত অ্যাকাডেমিক পদ বলে বিবেচিত। এই একই পদে ২য় ব্যক্তি ছিলেন স্যার আইজ্যাক নিউটন।
স্টিফেন হকিং তার ক্যারিয়ারে গবেষণা করেছেন পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক সূত্রগুলো নিয়ে। গবেষণা করেছেন যার ওপর ভিত্তি করেই পরিচালিত হয় বিশ্বজগত। হকিং প্রস্তাব করেন যে, বিশ্বজগৎ যেহেতু শুরু (দ্য বিগ ব্যাং) রয়েছে বলে মনে করা হয়, কাজেই এর শেষও রয়েছে এমন সম্ভাবনাটিই বেশি। সতীর্থ কসমোলোজিস্ট রজার পেনরোজের সঙ্গে এক গবেষণায় হকিং দেখিয়েছেন, অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের থিওরি অব জেনারেল রিলেটিভিটি ইঙ্গিত দেয় যে স্পেস অ্যান্ড টাইমের শুরু বিশ্বজগতের জন্মের সময়। তার ইতি ঘটে ব্ল্যাক হোল কিংবা কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে। এর অর্থ হলো আইনস্টাইনের থিওরি এবং কোয়ান্টাম থিওরিকে একীভূত করতে হবে। এই দুই থিওরিকে একসঙ্গে করে হকিং ব্যাখ্যা করেছেন, ব্ল্যাকহোলগুলো আসলে সম্পূর্ণরূপে নীরব নয়। বরং তারা তেজস্ক্রিয়তা নি:সরণ করে থাকে। এটি ‘হকিং রেডিয়েশন’ নামে আখ্যা পায়। হকিং তাঁর গবেষণা হতে আরও বলেছেন যে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোনো সীমানা নেই।
পদার্থবিজ্ঞান ও মহাশূন্যবিজ্ঞানের জটিল সব বিষয়কে খুব সহজে সাধারণ মানুষের কাছে উপস্থাপন করার অসামান্য দক্ষতা রয়েছে স্টিফেন হকিংয়ের। এজন্য দারুণ জনপ্রিয় লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন তিনি। তাঁর লেখা বইগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সাড়া জাগানো হলো ‘কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ (আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম)।
দুরারোগ্য মোটর নিউরণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে সর্বকালের সেরা এই বিজ্ঞানি শারীরিকভাবে হুইল চেয়ারে আবদ্ধ হয়ে পড়েন। তবে তার মন, চিন্তাশক্তিকে আটকাতে পারেনি এই ব্যাধি। চিকিৎসকদের শঙ্কা ও সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত খুঁজে ফিরেছেন বিশ্বজগতের রহস্য। নিজের এই ব্যাধি নিয়ে হকিং বলেছিলেন, ‘নিজের এই শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে ক্ষুব্ধ হওয়াটা হবে সময়ের একটি অপচয়। জীবনকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমি সেদিক হতে খুব একটা খারাপ কিছু করিনি। আপনার জন্য মানুষের কোনো সময় থাকবে না, যদি আপনি সবসময় ক্ষুব্ধ থাকেন বা অভিযোগ করতে থাকেন।’ এমনভাবেই যুক্তিতর্ক দিয়ে জীবন চলার পথকে তিনি প্রশস্ত করেছেন।
উল্লেখ্য, স্টিফেন হকিংয়ের জন্ম হয় ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি অক্সফোর্ডশায়ারে। অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজে পড়াশোনা করেন তিনি। গবেষণামূলক বহু বই লিখেছেন স্টিফেন হকিং। পদার্থবিজ্ঞানের কঠিন বিষয়কে সহজ করে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন এই পদার্থবিজ্ঞানী। বিভিন্ন সময় তাঁর গবেষণা ও নানা যুক্তিমূলক বক্তব্য বিশ্ববাসীকে প্রলুব্ধ করেছে।
অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের পর তাকেই সব থেকে প্রতিভাবান পদার্থবিজ্ঞানী বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিরহস্য, এর আকার, বিগব্যাং হতে শুরু করে ব্ল্যাকহোল পর্যন্ত হকিংয়ের গবেষণা মহাশূন্যবিজ্ঞানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।
This post was last modified on মার্চ ১৪, ২০১৮ 3:24 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সংবাদমাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায়, অদ্ভুত ওই ঘটনাটি…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫ খৃস্টাব্দ, ৭ চৈত্র ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মনের মধ্যে কথা চেপে না রেখে, তা খোলাখুলি বলে দিলেও…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কিউআর কোডের মাধ্যমে প্রতারণা দিন দিন যেনো বেড়েই চলেছে। এমনি…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কাজের মধ্যেই কাঁধে ব্যথা। বা ঘুম থেকে উঠেই ঘাড়ে যন্ত্রণা।…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমান সময়ের ছোট পর্দায় আলোচিত এক অভিনেত্রী পারসা ইভানা। মার্কিন…