দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আজ ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের আজকের এইদিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে ঘাতকরা নির্মমভাবে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে হত্যা করে। জাতি আজ শ্রদ্ধাভরে দিনটি পালন করছে।
ইতিহাসের শোকাবহ ১৫ আগস্ট আজ। ১৯৭৫ সালের এই দিনে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারবর্গকে নির্মমভাবে খুন করা হয়। আজ জাতীয় শোক দিবস। ইতিহাসের বেদনাবিধুর ও বিভীষিকাময় এক দিন হলো আজকের এই ১৫ আগস্ট। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকী।
১৯৭৫ সালের এইদিন অতিপ্রত্যুষে ঘটেছিল ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক ঘটনা। সেনাবাহিনীর কিছু উচ্ছৃঙ্খল ও বিপথগামী সৈনিকের হাতে সপরিবারে প্রাণ দেন বাঙালি জাতির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সন্তান, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৫ আগস্টের নৃশংস হামলার ঘটনায় আরও যারা প্রাণ দেন তারা হলেন: বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, ভাই শেখ নাসের ও কর্নেল জামিল, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, শহীদ সেরনিয়াবাত, শিশু বাবু, আরিফ রিন্টু খানসহ অনেকেই। আগস্ট মাসটি তাই বাংলাদেশের মানুষের কাছে শোকের মাসে পরিণত হয়।
ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাসভবনে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হলেও সেদিন আল্লাহর অসীম কৃপায় দেশে না থাকার কারণে প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং অপর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। সেই সময় স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে জার্মানিতে সন্তানসহ অবস্থান করছিলেন শেখ হাসিনা। শেখ রেহানাও ছিলেন বড় বোনের সঙ্গেই।
যে কারণে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির সবচেয়ে হদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী শোকের দিন আজ ১৫ আগস্ট। প্রতিবছর ১৫ আগস্ট আসে বাঙালির হৃদয়ে শোক ও কষ্টের দীর্ঘশ্বাস হয়ে। পুরো বাঙালি জাতি আজ গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় সঙ্গে শ্রেষ্ঠ সন্তানকে স্মরণ করছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যে পালিত হচ্ছে জাতির পিতার শাহাদাতবার্ষিকী। দিবসটি উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট অতিপ্রত্যুষে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে কাপুরুষোচিত আক্রমণ চালায় ঘাতকদের একটি দল। সেই নারকীয় হামলার পর দেখা গেছে, ভবনটির প্রতিটি তলার দেয়াল, জানালার কাচ, মেঝে ও ছাদে রক্ত, মগজ ও হাড়ের গুঁড়ো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। গুলির আঘাতে দেয়ালগুলোও ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। চারপাশে রক্তের সাগরের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল ঘরের জিনিসপত্রগুলো। প্রথম তলার সিঁড়ির মাঝখানে নিথর পড়ে ছিলেন চেক লুঙ্গি ও সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেহ। তাঁর তলপেট এবং বুক হয়েছিল বুলেটে ঝাঁঝরা। পাশেই পড়ে ছিল তাঁর ভাঙা চশমা এবং অতিপ্রিয় তামাকের পাইপটি। অভ্যর্থনা কক্ষে শেখ কামাল, মূল বেডরুমের সামনে বেগম মুজিব, বেডরুমে সুলতানা কামাল, শেখ জামাল, রোজী জামাল, নীচতলার সিঁড়িসংলগ্ন বাথরুমে শেখ নাসের এবং মূল বেডরুমে দুই ভাবির ঠিক মাঝখানে বুলেটে ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলের লাশ। লুঙ্গিতে জড়ানো শিশু রাসেলের রক্তভেজা লাশ দেখে খুনিদের প্রতি চরম ঘৃণা-ধিক্কার জানানোর ভাষাও খুঁজে পান না মানবতাবাদী বিশ্বের কোনো মানুষ। এভাবেই নারকীয় পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট।