দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সত্যিই এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ঠিক তাই, রাশিদ নাক্কাজ নামের এই ব্যক্তি নারীদের বোরকা বা নেকাব পরার অপরাধে যতো জরিমানা হয়, সব দেন রাশিদ!
বোরকা বা নিকাব পরার কারণে জরিমানার আইন করা হয়েছে ডেনমার্কে। চলতি মাসের ১ তারিখ হতে দেশটিতে এই নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে। নিকাব পরার দায়ে ইতিমধ্যে একাধিক নারীকে জরিমানাও করা হয়েছে।
ডেনমার্ক সরকার নিকাবের ওপর জরিমানার এই বিধান করার পর মুসলিম নারীদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন ফ্রান্সের নাগরিক রাশিদ নাক্কাজ। যেসব নারীকে বোরকা বা নেকাব পরার অপরাধে জরিমানা করা হবে তাদের জরিমানার সেই অর্থ পরিশোধ করবেন রাশিদ নাক্কাজ।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা গেছে, রাশিদ নাক্কাজ আলজেরিয়ান বংশোদ্ভুত ফ্রান্সের নাগরিক। তিনি বর্তমানে একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। রাশিদ নাক্কাজ ২০০৭ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে আলোচনায় উঠে আসেন।
রাশিদ নাক্কাজ এই ঘোষণা দেওয়ার পর এই পর্যন্ত ৮ নারীকে জরিমানার তথ্য তিনি পেয়েছেন। তাদের জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে তিনি শীঘ্রই ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে যাওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন।
ডেনমার্কের নতুন এই আইন অনুযায়ী কোনো নারী নিকাব পরার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে ১ হাজার ক্রোনার এবং দ্বিতীয়বার অমান্য করলে ১০ হাজার ক্রোনার জরিমানার বিধান করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে সর্বপ্রথম ফ্রান্সে রাস্তায় বোরকা ও নিকাব পরার ওপর জরিমানার আইন করা হয়। এখন পর্যন্ত বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া, হল্যান্ডসহ বেশকিছু দেশ বোরকা ও নিকাবের ওপর জরিমানা ও কারাদন্ডের বিধান করেছে।
রাশিদ নাক্কাজ ২০১১ সাল হতে অন্তত ৬টি দেশে শাস্তির শিকার অর্ধ সহস্রাধিক নারীর জরিমানা পরিশোধ করেছেন বলে সংবাদ মাধ্যমের খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।
অবশ্য রাশিদ নাক্কাজের এই জরিমানা প্রদানের ঘোষণার সমালোচনা করেছে ডেনমার্ক কর্তৃপক্ষ। ডেনিশ পিপলস পার্টি নেতা মার্টিন হেনরিকসেন বলেছেন, নাক্কাজের এই পরিকল্পনা ডেনমার্কের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোরই শামিল। আমি তার এই পদক্ষেপের নিন্দা জানাচ্ছি।
হেনরিকসেন স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন যে, জরিমানার সঙ্গে নিষেধ অমান্যকারী নারীদের করও দিতে হবে। তবে রাশিদ নাক্কাজ জরিমানার সঙ্গে কর দিতেও রাজি হয়েছেন। শুধু তাই নয়, নিকাব নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হলে সেক্ষেত্রে তিনি আইনি লড়াইয়ে সহযোগিতা করবেন বলেও জানিয়েছেন। প্রয়োজনে তিনি ইউরোপীয় আদালত ও জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার দারস্থ হওয়ারও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
রাশিদ নাক্কাজের দাবি করেছেন যে, তিনি এ বছরের মার্চে ইরান সফরে গিয়েছিলেন সেখানে কারাগারে আটক ২৯ জন নারীকে সহযোগিতার জন্য। ইরান সরকার হিজাব না পরার কারণে তাদের আইন অনুযায়ী ওই নারীদের গ্রেফতার করে। তিনি তাদের মুক্ত করতে ৭৭ হাজার ইউরো খরচ করেছেন বলে দাবি করেছেন রাশিদ।
রাশিদ বলেন, আমি রাস্তায় বোরকা বা নিকাব পরা না পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোর বিরোধী। আমি ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।
উল্লেখ্য, রাশিদ নাক্কাজ ১৯৭২ সালে ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করেন। রাশিদের বাবা মা আলজেরিয়ান। তিনি ফ্রান্স ও আলজেরিয়া দুই দেশেরই নাগরিক। রাশিদ নাক্কাজ একজন ধনী ব্যবসায়ী। সেইসঙ্গে তিনি রাজনীতিও করেন। ২০০৭ সালে রাশিদ নাক্কাজ নিজেকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। তবে নির্বাচনের শর্ত পূরণ করতে না পারায় প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে পারেননি তিনি।
অপরদিকে ২০১৩ সালে রাশিদ নাক্কাজ ফ্রান্সের নাগরিকত্ব অস্বীকার করে আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু আলজেরিয়ার সংবিধান মতে দ্বৈত নাগরিকদের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় তিনি পারেননি প্রার্থী হতে।