দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আফ্রিকার হিংস্র পশুদের মধ্যে বুনো কুকুর হলো এক রহস্যজনক প্রাণী৷ সেই প্রজাতির অনেক আশ্চর্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ এবার বুনো কুকুর সংরক্ষণে অভিনব এক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে!
বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় জিম্বাবুয়েতে দেখা যায় এইসব বুনো কুকুর। আবহাওয়া ধীরে ধীরে একটু শীতল হলে জিম্বাবুয়ের দক্ষিণ পূর্বে বুশল্যান্ড এলাকায় আবারও জীবনের ছন্দ ফিরে আসে৷ দিনের বেলা উচ্চ তাপমাত্রা এড়ানোর জন্য বুনো কুকুর ছায়ায় পড়ে পড়ে ঘুমায়৷ বিকালের দিকে গোটা দল একত্রিত হয় এবং তারপর সন্ধ্যায় শিকার করতে বেরিয়ে পড়ে একসঙ্গে৷ ওদের জীবনটা অনেকটা এমন গদ বাধা।
এমন একটি মোক্ষম সময় বেছে নিয়ে জেসিকা ওয়াটারমায়ার কুকুরদের দেখতে যান৷ প্রায় ৩ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে সাভে উপত্যাকায় আফ্রিকার বুনো কুকুরদের সুরক্ষার লক্ষ্যে এক প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন তিনি৷ নিজের পেশাগত জীবন জুড়ে তিনি এই প্রাণীদের নিয়েই চর্চা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে৷
জেসিকা বলেন, ‘এদেরকে আমরা ‘ফেস্টিভ প্যাক’ নামেই ডাকি৷ কারণ হলো তাদের শরীরে অত্যন্ত সুন্দর, স্বতন্ত্র এবং রঙিন চিহ্ন বিদ্যমান৷ গোটা অভয়ারণ্যের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় কুকুরের পাল৷ বর্তমানে এদের সংখ্যা ১১৷ শুরুতে ছিলো মাত্র ১২টি৷ তাদের ছিলো ১৪টি শাবক, এখন মাত্র ৭টি অক্ষত রয়েছে৷ তারা দল হিসেবে বেশ সংগঠিত বটে৷ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার লক্ষ্যে তাদের সঙ্গে কাজ করা সত্যিবা খুব সুন্দর একটি অভিজ্ঞতা৷’
আফ্রিকা মহাদেশে যেসব মাংসাশী প্রাণী হুমকির মধ্যে পড়েছে, বুনো কুকুর তাদের মধ্যে একটি৷ গোটা মহাদেশ জুড়ে বর্তমানে বড়জোর ৭ হাজার প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে৷এই শিকারি প্রাণীদের জন্য অন্যতম প্রধান আশ্রয়স্থল সাভে উপত্যকা৷ টিকে থাকার জন্য তাদের অনেক জায়গার প্রয়োজন পড়ে৷ তাদের প্রধান খাদ্যই হলো ইম্পালা অ্যান্টিলোপ প্রজাতির হরিণ৷
জেসিকা ওয়াটারমায়ার বলেছেন, ‘এগুলো প্রকৃতপক্ষে খুব সামাজিক প্রাণী৷ এরা পরস্পরের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদান করে, পরস্পরের দেখাশোনাও করে, শাবকের যত্নও নেয়৷ সিংহের মতো সামাজিক মাংসাশী প্রাণীর তুলনায় তারা খুবই অন্য ধরনের৷ বুনো কুকুররা শিকার করার পর সবার আগে শাবকদেরকে খেতে দেয়৷ কেও আহত হলে তার দেখাশোনাও করে৷ তারা আহত কুকুরের কাছেও মাংস নিয়ে যায়৷’
সাভে অভয়ারণ্য একাধিক বেসরকারি কোম্পানির সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছে৷ বড় মাত্রায় নিয়ন্ত্রিত শিকারের মাধ্যমে আয় করা হয়৷ সেই অর্থ কাজে লাগিয়ে লুপ্তপ্রায় প্রাণীদের সুরক্ষা নিশ্চিতও করা হয়৷ চাষের কাজের জন্য ওই অভয়ারণ্যে কোনো ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি৷
অভয়ারণ্যের বাইরে অনেক এলাকায় কার্যত ঝোপ নাই বললেই চলে৷ জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাষবাস এবং পশুপালনের জন্য জমির ব্যবহারও বাড়ছে সেখানে৷ মানুষ ও বন্য প্রাণীর মধ্যে সংঘাতও তাই বাড়ছে৷ কুকুরের পাল এর মধ্যেওশিকার শুরু করে দিয়েছে৷ বিশাল আকারের কারণে গ্নু অ্যান্টিলোপ সামলাতে তাদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে৷ তবে এক্ষেত্রে তরুণ শাবকদের শিকার শেখাতে এই প্রাণী কাজে লাগছে৷
আসলে এই বুনো কুকুরদের জন্য বিপদের মাত্রা কতোটা বেশি, পরের দিন সেটি বোঝা গেলো৷ রেঞ্জার কাইন কোডদেভু টহল দেওয়ার সময় এক সহকর্মীর পাঠানো বেতার বার্তা পেলেন তিনি৷ সেখানে নাকি একটি বুনো কুকুরের দেহ পাওয়া গেছে৷ রেঞ্জার ঘটনাস্থলে পৌঁছে জানতে পারলেন যে পরিস্থিতি আসলে আরও খুব উদ্বেগজনক৷
জেসিকা মনে করিয়ে দেন যে, ‘একমাত্র আফ্রিকা মহাদেশেই এই কুকুর পাওয়া সম্ভব৷ পশু সংরক্ষণ আফ্রিকাতে সফল হচ্ছে৷ তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই প্রজাতির সংরক্ষণ আমাদের একান্ত কর্তব্য৷ জিনগতভাবে তারা সম্পূর্ণ আলাদা একটা প্রজাতি৷ একবার তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে আর কখনও ফিরে পাওয়া যাবে না৷’
শাবকগুলো বড় হওয়া পর্যন্ত পালের বাকি কুকুরগুলো একইসঙ্গেই থাকবে৷ বছরে একবার বুনো কুকুর বাচ্চা জন্ম দেয়৷ সৌভাগ্যবশত পালের প্রধান মাদি কুকুর প্রাণে বেঁচে গেছে, তা না হলে এই পাল ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়তো৷ তবে তার স্থায়ী সঙ্গী বেঁচে না থাকায় চলতি বছর বংশবৃদ্ধির সম্ভাবনাও অত্যন্ত কমে গেছে৷