এম. এইচ. সোহেল ॥ নুসরাত জাহান রাফি। একজন নির্যাতিত ও নির্মমতার নাম। শিক্ষক কর্তৃক পাশবিকতা ও নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার একজন নারীর নাম।
জন্ম হলেই মৃত্যু হবে সেটিই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু সেই নিয়মের বাইরে যখন মানুষকে চরমতম নির্মমতার শিকার হতে হয়, তখন মানুষের বিবেকবোধ নিয়ে প্রশ্ন জাগে। মানুষের পশুবৃত্তির যে বিস্তার সেটি যেনো দিনকে দিন আরও বাড়ছে। পারিপার্শ্বিক নানা কারণ হয়তো আমাদেরকে অতল গহ্বরের দিয়েই ধাবিত করছে। নুসরাতকেও সেই নির্মমতার শিকার হতে হয়েছে। আগুনে পুড়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শেষ পর্যন্ত দুনিয়া ছাড়তে হয়েছে।
গতকাল (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তিনি মারা যান নুসরাত।
নুসরাতকে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। নুসরাতের শরীরের ৭৫ শতাংশ আগুনে পুড়ে যায় বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। নুসরাতের ফুসফুসকে সক্রিয় করতে গতে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের পরামর্শে অস্ত্রোপচার করা হয়।
বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন, মৃত্যুর কারণ রক্ত ও ফুসফুসের মারাত্মক সংক্রমণ হতে কার্ডিও রেসপিরেটরি ফেইলিয়র (হৃদ্যন্ত্রে ক্রিয়া বন্ধ) হয়। এতেই মৃত্যু ঘটে তার।
উল্লেখ্য যে, গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা করেন নুসরাতের মা। ছাত্রীর স্বজনদের অভিযোগ ছিলো, মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় অধ্যক্ষের পক্ষের লোকজন নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
গত শনিবার (৬ এপ্রিল) গুরুতর আহত অবস্থায় ওই মাদরাসাছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছিলো।
লাইফ সাপোর্টের যাওয়ার আগে গত রবিবার অগ্নিদগ্ধ নুসরাত চিকিৎসকদের কাছে জবানবন্দি দেন। তিনি বলেন, নেকাব, বোরকা এবং হাতমোজা পরিহিত চারজন তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। ওই চারজনের একজনের নাম ছিল শম্পা।
গতকাল মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি। দেশব্যাপী মানুষের মধ্যে আজ শোক ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। কেনো একজন নিরীহ নিরপরাধ মানুষকে এমন নির্মমভাবে দুনিয়া ছাড়তে হলো?
সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। দেশজুড়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য মিছিল-মিটিং অব্যাহত রয়েছে। এমন জঘন্যতম ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত না হলে দেশে যেমন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে না তেমনি অপরাধের মাত্রাও কমবে না।