দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গুঁড়া দুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নিউজিল্যান্ডের ফন্টেরার দুধ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে দেশজুড়ে। সামপ্রতিক সময়ে ওই কোম্পানির দুধে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধরা পড়ে।
বাংলাদেশের প্রধান গুঁড়া দুধ বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ফন্টেরা থেকে দুধ আমদানি করায় দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া গুঁড়া দুধ কতটা নিরাপদ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে ফন্টেরা থেকে আমদানি করা সর্বশেষ প্রায় ৬০০ টন দুধ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কাস্টমস সূত্রের বরাত দিয়ে দৈনিক সমকাল এক রিপোর্টে বলেছে, তাদের হিসাব মতে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ফন্টেরা থেকে ২০ হাজার ৭৪১ টন দুধ বাংলাদেশে আসে। সবচেয়ে ভয়াবহ কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে আমদানি করা দুধের যত চালান আসে তার ৮০ শতাংশই ফন্টেরার দুধ! এসব দুধই আমদানিকারকরা বিভিন্ন নামে প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফন্টেরা থেকে আমদানি করা প্রায় ২০ হাজার টন দুধ বর্তমানে প্যাকেটজাত হয়ে বাজারে রয়েছে। পাশাপাশি এর আগে আমদানি করা দুধ বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে বিএসটিআইয়ের পরিচালক কমলপ্রসাদ দাস বলেছেন, এরই মধ্যে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ফন্টেরার দুধের বিষয়টি তাদের অবহিত করেছে। আজ বৃহস্পতিবারই নমুনা সংগ্রহ করে এগুলো পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। বাজারে বিদ্যমান গুঁড়া দুধ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিএসটিআইর তালিকাভুক্ত পণ্য পরীক্ষা ছাড়া বাজারজাত করার সুযোগ নেই। বিদ্যমান পণ্য পরীক্ষা করেই বাজারে ছাড়া হয়েছে। ফন্টেরার দুধের অন্যতম শীর্ষ আমদানিকারক প্রাণ ডেইরির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজর (অব.) আনিসুর রহমান জানান, প্রাণ গত ডিসেম্বর মাসের পর ফন্টেরা থেকে আর কোনো দুধ আমদানি করেনি। বাজারে বিদ্যমান প্রাণের দুধের বেশিরভাগই দেশে উৎপাদন করা।
জানা যায়, গত মে মাসে পরীক্ষায় ফন্টেরার গুঁড়া দুধে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর প্রথম চীন সরকার তাদের দেশে ফন্টেরার গুঁড়া দুধ নিষিদ্ধ করে বাজার থেকে তুলে নেয়। এরপর রাশিয়া, শ্রীলংকা, ভিয়েতনামের বাজার থেকেও ফন্টেরার দুধ আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। গত মে মাসেই ফন্টেরা তাদের দুধ উৎপাদন প্লান্টে অনাকাঙ্খিত ত্রুটির কারণে উৎপাদিত পণ্যে দূষণের কারণে ব্যাকটেরিয়া সংক্রামিত হওয়ায় ক্ষমাপ্রার্থনা করে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ফন্টেরার দুধ নিউজিল্যান্ডে বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান নিউজিল্যান্ড মিল্ক প্রোডাক্টস কোম্পানির পরিচালক গ্যারি রোমানো তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তবে বিবিসি অনলাইন জানিয়েছে, একদিন আগে নিউজিল্যান্ডের প্রাইমারি ইন্ডাস্ট্রি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ফন্টেরার গুঁড়া দুধে যে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে তা মানবদেহের পঙ্গুত্ব সৃষ্টিকারী (বটুলিজম) ব্যাকটেরিয়া নয়। এটা অন্য ধরনের ব্যাকটেরিয়া। এর আগে নিউজিল্যান্ডের আরও একটি গুঁড়া দুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টল্যান্ড মিল্ক প্রোডাক্টসের দুধে বিষাক্ত নাইট্রেট পাওয়ায় এই দুধ আমদানিও বন্ধ করে দেয় চীন। ফন্টেরা কোম্পানির গ্রুপ ডিরেক্টর অব কমিউনিকেশন্সের কেরি আন্ডারহিল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, আগে তাদের পণ্যে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার কথা তারাও জেনেছেন। এ জন্য তারা ক্ষমাপ্রার্থী। পণ্যের মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার যাবতীয় তথ্য আমদানি করা সব দেশেই পাঠানো হয়েছে। তারা তাদের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ফন্টেরা কোম্পানির গুঁড়া দুধ আমদানি করে। এগুলো হচ্ছেথ আবুল খায়ের গ্রুপ, প্রাণ ডেইরি, নেস্লে বাংলাদেশ, সানোয়ারা করপোরেশন ও নিউজিল্যান্ড ডেইরি। বন্দরে আটকে থাকা ৬০০ টন গুঁড়া দুধের চালান এসব প্রতিষ্ঠানেরই। আবার সর্বশেষ অর্থবছরে দেশে আসা ফন্টেরা গুঁড়া দুধের আমদানিকারকও তারা। গত অর্থবছরে (২০১২-১৩) নিউজিল্যান্ডের ফন্টেরা গ্রুপ থেকে আবুল খায়ের গ্রুপ চার কোটি ৭৩ লাখ ডলারের নয় হাজার ১৬৮ টন গুঁড়া দুধ আমদানি করে। নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেড আমদানি করে দুই কোটি ১১ লাখ ডলার মূল্যের পাঁচ হাজার ৯০০ টন দুধ। নিউজিল্যান্ড ডেইরি দুই কোটি ডলারের প্রায় পাঁচ হাজার ৪১ টন, প্রাণ ডেইরি এক হাজার ৫০০ ডলার মূল্যের ৫৩২ টন ও সানোয়ারা করপোরেশন তিন লাখ ৬২ হাজার ডলারের ১০০ টন গুঁড়া দুধ আমদানি করে। তথ্যসূত্র: দৈনিক সমকাল