দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর পরই রাজা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন তারই পুত্র চার্লস। যিনি এখন থেকে রাজা তৃতীয় চার্লস হিসেবে পরিচিত হবেন।
শনিবার লন্ডনের সেন্ট জেমসেস প্যালেসে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তৃতীয় চার্লসকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটেনের রাজা ঘোষণা করা হয়। আর এই দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে তার শাসনকালও শুরু হয়েছে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর এক বক্তৃতায় রাজা তৃতীয় চার্লস রানির উদাহরণ অনুসরণ করে যাওয়ার অঙ্গীকারও করেছেন।
৭০ বছর সিংহাসনে থাকার পর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ গত বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডের ব্যালমোরাল প্রাসাদে মারা গেছেন। সমাজ যখন মৌলিকভাবে পুরোপুরি পরিবর্তিত হয়ে গেছে, তখনও রানি এলিজাবেথ জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবেই তার ভূমিকা পালন করে গেছেন। তার মৃত্যুর পর রাজা তৃতীয় চার্লসের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হবার মধ্যদিয়ে এখন ব্রিটিশ ইতিহাসের এক নতুন যুগের সূচনা হলো। তবে এই নতুন যুগে রাজা চার্লসের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। রয়টার্সের বরাত দিয়ে দ্য হিন্দুর এক খবরে বলা হয়, ছোট ভাই প্রিন্স অ্যান্ড্রুর যৌন দুর্ব্যবহারের অভিযোগ থেকে শুরু করে রাজ পরিবারে বর্ণবৈষম্যের মতো বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে রাজা তৃতীয় চার্লসের সামনে। যুক্তরাষ্ট্রের এক নারী ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা করেছিলেন যে, প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে যৌনকর্ম করার জন্য ১৭ বছর বয়সে তাকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসা হয়।
যে কারণে গত জানুয়ারিতে প্রিন্স অ্যান্ড্রু তার সামরিক পদমর্যাদা ও রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা হারান। এমনকি ‘রয়েল হাইনেস’ টাইটেলও হারিয়েছেন তিনি। তাকে রাজকীয় দায়িত্ব এবং উপাধি ফিরিয়ে দেওয়া হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত রাজা চার্লসকেই নিতে হবে। রাজা চার্লসের ছোট ছেলে প্রিন্স হ্যারি রাজপরিবার ছেড়ে স্ত্রী মেগান মার্কেলকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন। তাদের রাজ প্রাসাদ ছাড়ার পেছনে বর্ণবাদও এক কারণ বলে অভিযোগ উঠেছে। বাবা ও ছেলের সম্পর্ক এখন কঠিন বলে কিছুদিন আগে হ্যারি জানিয়েছিলেন। তবে রাজা হিসেবে জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে চার্লস বলেছেন, আমি প্রিন্স হ্যারি ও মেগানের প্রতি আমার ভালোবাসা প্রকাশ করতে চাই। কারণ তারা বিদেশে তাদের জীবন গড়ে তুলছেন। এর মাধ্যমে ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ করার ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি।
তবে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক খবরে বলা হয়, রাজা তৃতীয় চার্লসের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো রাজতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করা। তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে যে প্রতিষ্ঠানটি পেয়েছেন প্রকৃতিগতভাবে সেটি মূলত অগণতান্ত্রিক, টিকে থাকার জন্যও জনসমর্থন প্রয়োজন। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন-এর অধ্যাপক ও ব্রিটেনের সংবিধান বিশেষজ্ঞ রবার্ট হ্যাজেল বলেছেন, ব্রিটিশ রাজতন্ত্র একটি প্রতিষ্ঠান যা শুধুমাত্র জনগণের সমর্থনে টিকে থাকতে পারে।
ইউগভ পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ব্রিটেনের এক পঞ্চমাংশ মানুষ নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান দেখতে চান। রানি এলিজাবেথ যখন মারা যান তখন তার প্রতি প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষের সমর্থন ছিল। রাজা তৃতীয় চার্লস জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে রানি এলিজাবেথের ধারেকাছেও নেই। একমাত্র রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বে আসার পরই জনপ্রিয়তা বাড়তে পারে। রাজা চার্লসের ক্ষেত্রে এটা নির্ভর করবে তিনি রাজ পরিবারকে কীভাবে পরিচালিত করছেন না করছেন তার ওপর।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ভার্নন বোগদানর মনে করেন যে, এটা পুরো পৃথক ধরনের দায়িত্ব, ভিন্ন নিয়মকানুনের বিষয়। তিনি বিবিসিকে বলেন, একেবারেই শুরু থেকেই রাজা জানেন যে, তার ধরন-ধারণে অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে। জনগণ এমন কোনো রাজাকে কখনও চাইবে না, যিনি নানা বিষয়ে প্রচারণা চালাবেন। রাজা তৃতীয় চার্লস নিশ্চয় বর্তমানে ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন যে, তাকে আগের তুলনায় অবশ্যই অনেক কম কথা বলতে হবে।
চার্লস যে দেশে বর্তমানে রাজত্ব করবেন, সেটি তার মায়ের রাজত্বকালের তুলনায় অনেক বেশিই বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে। অধ্যাপক ভার্নন বোগদানর মনে করেন যে, নতুন রাজা বহু সংস্কৃতি, বহু বিশ্বাসের ব্রিটেনের মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে পারবেন। তিনি আশা করেন, নতুন রাজা একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে কাজ করার চেষ্টাও করবেন, জাতিগত সংখ্যালঘু ও সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য আরও দৃশ্যমান উদ্যোগও নেবেন।
রাজা হওয়ার পর চার্লসের ওপর গণমাধ্যমের কড়া নজরও থাকবে। তাকে অবশ্যই একজন সামাজিক রোল মডেল হতে হবে, রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ হলেও, এক্ষেত্রে আকর্ষণীয় হতে হবে। পরিবর্তনকে মেনে নেওয়ার পাশাপাশি পূর্বসূরীর ক্ষমতার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হবে তার জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। সেগুলো কাটিয়ে উঠে তাকে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেই চ্যালেঞ্জকে সামনে নিয়ে তাকে এগিয়ে যেতে হবে। তবে সময়ই বলে দেবে তিনি কতোটা সফলতা পাবেন রাজা তৃতীয় চার্লস।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকার চেষ্টা করি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।