দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শীতের তীব্রতা যতো বাড়বে ততোই খেজুরের রসও বাড়বে। আর গাছির কর্মও তখন আরও বাড়বে। তবে আজ রয়েছে ২০০ বছরের পেশায় থাকা এক গাছির গল্প!
সকাল হওয়ার পরও সূর্যের দেখা নেই। ঘন কুয়াশার মধ্যেই কিছু মানুষ আড়মোড়া ভেঙে বেরিয়ে পড়েন। শরীরে থাকে প্যাঁচানো দড়ি। আর কোমরে বাঁশের ঝুড়ি, ভেতরে বাটাল-হাঁসুয়া। শরীরে ঝুলিয়ে রাখা মাটির হাঁড়ি নিয়ে বেয়ে ওঠেন খেজুর গাছে। খালি পাত্রটি বেঁধে দিয়ে নামিয়ে আনেন রসে টুইটম্বুর হাঁড়িটি। শীতের সকালে গাছিদের এই দৃশ্য গ্রাম-বাংলার একটি পরিচিত চিত্র।
গাছি গ্রামাঞ্চলের অন্যতম প্রাচীন পেশা। শীত এলেই তাদের কদর বাড়তে থাকে। খেজুরের রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুত করতে থাকেন অগ্রহায়ণেই। গাছের ছাল-বাকল তুলে গাছি হাঁড়ি বাঁধার ব্যবস্থা করেন গাছিরা। শীতের আমেজ যতোই গাঢ় হয়, গাছিদের মাটির হাঁড়ি তখন ততো কম সময়েই ভরে ওঠে খেজুরের রসে।
শীতের সকালে এই খেজুরের রসের স্বাদ নিতে চান প্রতিটি বাঙালি। এই মৌসুম যেনো অনেকটা রস পিঠা ও পিঠাপুলির উৎসব শুরু হয়। বাংলার ঘরে ঘরে এই সময় তৈরি হয় নানা রকম স্বাদের পিঠা। সেই পিঠার অন্যতম উপাদানই হলো খেজুর রসের লালি (হালকা জ্বালানো রস) এবং খেজুরের গুড়।
সারাদেশেই খেজুর গাছ রয়েছে। রাজশাহীর বাঘা ও তুলনামূলকভাবে যশোরে খেজুর গাছের সংখ্যা বেশ ভালো। যশোর জেলার অভয়নগরে এমন কয়েকজন গাছির সঙ্গে কথা হলো যারা ৪০/৪৫ বছর ধরে খেজুর রসের কারবার করে আসছেন।
বৃদ্ধ গাছি আব্দুর রউফ জানিয়েছেন, অগ্রহায়ণের শুরুতে খেজুরের গাছ বানানো হয়। অর্থাৎ, গাছের মাথার দিকের এক পাশের ছাল-বাকল তুলে ফেলা হয়। তারপর কয়েক দিনে ছাল তোলা অংশটি শুকাতে হয়। অগ্রহায়ণের শেষে খেজুরগাছের ছাল তোলা অংশ চেঁছে ওপরের দিকে দু’টি চোখ কাটা (বা নালি) করা হয়। এরপর ছাঁটা যে অংশে রস নিঃসরণ হয় সে অংশেই ৭-৮ ইঞ্চি লম্বা চিকন বাঁশের কঞ্চির আধা ইঞ্চি ঢুকিয়েও দিতে হয়। সর্বশেষ কাঠির মধ্যেদিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় নির্গত রসগুলো গাছে ঝুলানো ছোট-বড় হাঁড়িতে সংগ্রহ করা হয়।
সাধারণভাবে পৌষ-মাঘ (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) এই দু’মাসেই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন গাছিরা। অপর এক গাছি জলিল আহমেদ একটি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, গাছ একবার ছাঁটলে ৩ থেকে ৪ দিন রস সংগ্রহ করা যায়। পরবর্তী সময় ৩ দিন আবার শুকাতে হয়। তারপর আবার হালকা ছেঁটে পুনরায় রস সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে প্রায় ৫ লিটার রস পাওয়া যায়। বর্তমানে এক লিটার রস বিক্রি করে গাছিরা গড়ে সর্বনিম্ন দাম পেয়ে থাকেন ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
খেজুর রসের কারবার এই অঞ্চলের মানুষের অন্তত ২’শ বছরের প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে। যা বেশ কিছু বইয়েও উল্লেখ রয়েছে। ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র মিত্রের যশোহর খুলনার ইতিহাস বইতে দেখা যায়, ১৯০০-০১ সালে পূর্ববঙ্গে খেজুরের গুড় তৈরি হয় প্রায় ২২ লাখ মণ, যেটি প্রায় ৮২ হাজার টনের সমান।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাঢহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org