দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শরীরের ভিতরে যে পরিবর্তন শুরু হয়েছে সেটি জানান দেয় ঋতুচক্র। কারও কারও ঋতুস্রাব বেড়ে যায়। কারও আবার ঋতুচক্র কোনও কোনও মাসে সময় মতো হয় না।

চল্লিশের আশেপাশে বয়সের কাঁটা পৌঁছালে মহিলাদের শরীরে খুব ধীরে ধীরে কিছু পরিবর্তন আসতে শুরু করে। বাইরে সেই পরিবর্তনের প্রভাব খুব সহজে চোখে পড়ে না। তবে শরীরের ভিতরে যে পরিবর্তন শুরু হয় তা জানান দেয় এই ঋতুচক্র। কারও ঋতুস্রাব অনেকটা বেড়ে যায়। কারও আবার ঋতুচক্র কোনও কোনও মাসে সময় মতো হয় না, অনিয়মিত হয়ে যায়। কেও কেও আবার ‘হট ফ্লাশ’ কিংবা আচমকা গরম বোধ করে থাকেন। সকলের ক্ষেত্রেই ওই পরিবর্তন একই বয়সে একইভাবে না হলেও চল্লিশের আশপাশে অনেকের এমন অভিজ্ঞতা হওয়া শুরু হয়ে যায়। যাকে বলা হয়ে থাকে ‘প্রিমেনোপজ়’ উপসর্গ। অর্থাৎ মেনোপজ় শুরুর আগের শারীরিক পরিবর্তনসমূহ।
মূলত দু’টি হরমোন- ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের স্তরের ওঠাপড়ার কারণে এমনটি হয়। তবে মুশকিল হলো, অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা একা একা আসে না। সঙ্গে আরও ৫ রকম বাড়তি সমস্যা নিয়ে আসে। কারও ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়, কারও আবার চুলের।
বয়সের সঙ্গে শরীরে আসা ওইসব পরিবর্তন যদিও খুব স্বাভাবিক, তবু হরমোনের ভারসম্যের অভাবে হওয়া ওইসব সমস্যার মোকাবিলা করা সব সময় সহজও হয় না। কেও কেও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
প্রিমেনোপজ় উপসর্গের অস্বস্তি হতে মুক্তির উপায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুষ্টিবিদ মনপ্রীত কালরা। তিনি বলেছেন, “প্রাকৃতিক কিছু উপাদানে ওইসব সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা যেতেই পারে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বহু অসুখের সমাধান করা হয় আয়ুর্বেদিক পানীয়তে।” মনপ্রীত বলেছেন, “জিরা, জোয়ান, আদা, জাফরান ও গুড় দিয়ে তৈরি এক বিশেষ ধরনের পানীয় খেলে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা যেতেই পারে। তাতে প্রিমেনোপজ় উপসর্গ থাকবে নিয়ন্ত্রণে।”
কী কী উপাদান লাগবে?
জিরা
জিরাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। শরীরের ইস্ট্রোজেন হরমোন নিয়ন্ত্রণেও তার উপযোগিতা রয়েছে।
জোয়ান
জোয়ান মহিলাদের ঋতুচক্রজনিত নানা সমস্যার সমাধান করার জন্য জোয়ানের উপর ভরসা করে আয়ুর্বেদ। অনিয়মিত ঋতুস্রাব হতে আচমকা উষ্ণ বোধ করার সমস্যাও দুর করে। শরীরকে উষ্ণ রাখে, যে কারণে রক্ত সঞ্চালনে সুবিধা হয়।
আদা
আদা প্রজননের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। জরায়ুর প্রদাহ রোধও করতে পারে, অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা এটি কমাতে পারে।
জাফরান
জাফরান সেরোটোনিন হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাতে প্রিমেনোপজ় উপসর্গের কারণে মন মেজাজ বিগড়ানো কিংবা উদ্বেগের সমস্যাও থাকে দূরে।
গুড়
ক্লান্তি বোধ দূর করতে সাহায্য করে এই গুড়।
কীভাবে বানাবেন?
একটি সসপ্যানে দু’কাপ পানি দিয়ে তাতে এক চামচ জোয়ান, এক চামচ জিরা, এক চামচ কোরানো আদা দিয়ে ৫-৭ মিনিট ফুটাতে দিন, তারপর এতে এক চিমটে জাফরান দিয়ে মুখ ঢেকে আঁচ কমিয়ে আরও এক মিনিট রাখতে হবে। এখন একটি পাত্রে ছেঁকে নিয়ে তাতে সামান্য গুড় গুলে নিতে হবে। সকালে বা ঘুমোতে যাওয়ার সময় রাতে গরম অবস্থাতেই খান এই পানীয়টি। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org