দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাধারণত হিমালয়ের দেশে দুষার পড়তে দেখা যায়। আর এই তুষার নিয়ে মানুষের যেনো আগ্রহের শেষ নেই। এমনই এক রহস্যময় তুষার মানবের কাহিনী রয়েছে আপনাদের জন্য।
এমনই এক হিমালয়ের দুর্গম তুষারাবৃত উঁচু এলাকায় এক ধরনের মানবাকৃতি প্রাণী যাকে বলা হয় ইয়েতি বা তুষার মানব। বিভিন্নভাবে এদের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেলেও বিজ্ঞানীরা আজও এদের প্রকৃত পরিচয় নির্ণয় করতে পারেননি। বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে তুষার মানবেরা এখনও একটি রহস্যাবৃত প্রশ্ন হয়ে রয়েছে। কিন্তু হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তিব্বত, নেপাল ও ভুটান রাজ্যে সরকারিভাবে ইয়েতি বা তুষার মানবের অস্তিত্ব স্বীকৃত একটি বিষয়।
তিব্বত ও ভুটান অঞ্চলে তুষারমানবের নাম মেলোখাংসাই নামে পরিচিত। নেপালে তুষার মানব মেতি বা ইয়েতি নামে পরিচিতি লাভ করেছে। হিমালয়ের দুর্গম অঞ্চলে যারা গিয়েছেন তারা হিমালয়ের উপত্যকা অঞ্চলের পর্বতবাসীদের মুখে ইয়েতির অনেক রকমের অদ্ভুত গল্পও শুনেছেন। এমনকি শেরপাদের সমাজে বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে, ইয়েতি দেখলে মৃত্যু অনিবার্য। দানবাকৃতি ইয়েতিরা নাকি প্রায়ই উচ্চ অঞ্চল থেকে উপত্যকার জনবসতিতে নেমে আসে এবং হানা দিয়ে গৃহপালিত পশু নিয়ে যায়। এজন্য পর্বতবাসীদের কাছে নাকি এই ইয়েতি এক জীবন্ত আতঙ্ক।
১৮৩২ সালে সমতলের মানুষের কাছে এই ইয়েতির বিশ্বাসযোগ্য খবর প্রথম পৌঁছে। নেপালের প্রথম ব্রিটিশ অভিবাসী বিএইচ হডসন হিমালয় অঞ্চলের অজ্ঞাত এক প্রাণীর বর্ণনা দিয়েছেন ঠিক এভাবে- ‘এটি মানুষের মতো সোজা হয়ে হাঁটে, সারা শরীর লম্বা চুলে ঢাকা এবং কোনো লেজ নেই।’ অবশ্য হডসনের ওই বিবরণ তখন খুব একটা সাড়া ফেলতে পারেনি। কিন্তু উনবিংশ শতাব্দির গোড়ার দিকে ইয়েতি সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে ফেলে।
১৯১৩ সালে একদল চৈনিক শিকারি জানায়, তারা হিমালয়ের তুষারাচ্ছাদিত অঞ্চলে বানরের কদাকার থ্যাবড়া মুখাকৃতি, সারা শরীরে কয়েক ইঞ্চি লম্বা রূপালি হলদে চুল, মানুষের মতো হাঁটাচলা করে এবং অসাধারণ শক্তিশালী প্রাণীকে দেখেছেন। কর্নেল সি কে হাওয়ার্ড বেরির অধিনায়কত্বে ১৯২১ সালে তিব্বতের মধ্য দিয়ে এভারেস্ট অভিযান পরিচালিত হয়। তিনি সঙ্গীদের নিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০ হাজার ফুট উপরে খারতা হিমবাহের কাছাকাছি কয়েকটি বিশাল আকৃতির মানুষের পায়ের ছাপের মতো পদচিহ্ন দেখতে পেয়েছিলেন। অপরদিকে ১৯২৩ সালে এভারেস্ট অভিযাত্রী ব্রিটিশ মেজর আলান ক্যামেরন হিমালয়ের হিমরেখার উর্ধ্বে খাড়াই শৈল প্রাচীরের গা ঘেসে সঙ্কীর্ণ পথে সারিবদ্ধ মানবাকৃতি প্রাণীর একটা দলকে মন্থর গতিতে চলতে দেখেন। আবার এমন ঘটনা দেখেছিলেন ১৯৩৭ সালে ব্রিটিশ অভিযাত্রী ফ্রাঙ্ক স্মিদি। তিনি তিব্বত গিয়ে ১৪ হাজার ফুট উঁচুতে এই প্রাণীর অতিকায় পদচিহ্ন দেখতে পান। তিনি পদচিহ্নগুলোর মাপ নিয়ে দেখেছিলেন সেগুলো লম্বায় ছিল প্রায় ১৩ ইঞ্চি আর চওড়ায় ছিল প্রায় ৫ ইঞ্চির মতো।
কিন্তু ১৯৫০ সালে নেপালের প্যাঙবোচি অঞ্চলে একটা মমিকৃত হাতের তর্জনি, বৃদ্ধাঙ্গুলের অস্থিসন্ধি আর খানিকটা চামড়া পাওয়া গেলেও বিজ্ঞানীরা তা পরীক্ষা করে ইয়েতি জাতীয় প্রাণীর সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেন। এর পরের বছর ১৯৫১ সালে হিমালয় অভিযাত্রী এরিক শিপটন ২৩,৪৪০ ফুট উচ্চতায় গৌরীশঙ্কর শৃঙ্গের নিকটবর্তী অঞ্চলে একই ধরনের পদচিহ্ন দেখতে পেয়ে তার ছবি তুলে নিয়ে আসেন এবং সংবাদপত্রে সেই ছবি ছাপা হলে পৃথিবীতে আবার এই কাহিনী নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এই ছবি দেখে বিজ্ঞানীরা নানা যুক্তি দেখালেও তখন তেমন কোনো সিদ্ধান্তে তারা উপনিত হতে পারেন নি।
এই যখন সব কিছুই এমন ধোয়াশা ঠিক তখন ১৯৫৮ সাল নাগাদ পাওয়া গেল ইয়েতি নামক রহস্যজনক তুষার মানবের অস্তিত্বের অকাট্য এক প্রমাণ। ডক্টর নরম্যান ডাইরেনফার্জ নামের একজন আমেরিকান তথ্যানুসন্ধানী ও মার্কিন অভিযাত্রী মি. ম্যাকনিলের কাছ থেকে জানা যায়, ইয়েতি নামের তুষার মানর আসলে নিম্নস্তরের এক ধরনের মানুষ বা মানব সদৃশ প্রাণী। যারা হিমালয়ের নিভৃত গুহায় বসবাস করে থাকে। তাদের আনা বিভিন্ন প্রমাণ থেকে জানা গেলো, ইয়েতিদের মধ্যে দুটো প্রজাতিও নাকি রয়েছে। কিন্তু এতো সব কিছুর পরও কিন্তু বিজ্ঞানীরা সঠিকভাবে এই তুষার মানবের বিজ্ঞান ভিত্তিক কোন উপাত্ত হাজির করেননি। তবে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো জানা যাবে এই ইয়েতি বা তুষার মানবের আরও অনেক কাহিনী। তথ্যসূত্র: দৈনিক যুগান্তর অনলাইন