দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কোন পার্টি নয়, ভারতকে বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলতে হবে। বাংলাদেশ ও বাঙালিদের পক্ষে যায় এমন ভাষায় কথা বলতে হবে ভারতকে। ভারতের খ্যাতিসম্পন্ন দ্য হিন্দু অনলাইনে এমন খবর এসেছে। প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাকে ভারতের সমর্থন দেয়া ও তার পরিণতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে।
ওই খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতকে বিশেষ কোন পার্টির প্রতি নয়, বাংলাদেশ ও বাঙালিদের পক্ষে যায় এমন ভাষায় কথা বলতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে যে নতুন সংসদ নির্বাচিত হলো তা হতে হবে অস্থায়ী। যতক্ষণ পর্যন্ত পুনরেকত্রীকরণ এবং সবাই পরবর্তী একটি নির্বাচনে না যায় ততক্ষণ পর্যন্ত বহাল থাকতে পারে এ সংসদ।
ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত শীর্ষ মন্তব্য ভাষ্যে এমন মন্তব্য করা হয়েছে। সুহাসিনী হায়দারের লেখা ‘ব্যাকিং বাংলাদেশ’ শীর্ষক শিরোনামে এ ভাষ্যটি এসেছে। এতে তিনি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এর গ্রহণযোগ্যতা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের সমর্থন দেয়া ও তার পরিণতি নিয়ে মন্তব্য করেছেন।
ওই প্রতিবেদনে তিনি লিখেছেন, ‘যে কোন অর্থে ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয়েছে তা গণতন্ত্রের মাপকাঠিতে অনেক নিম্নমাত্রার। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু দেশের ভিতর থেকেই নন, আন্তর্জাতিক মহলের কাছ থেকেও তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েছেন। এ নির্বাচনে ভারত খোলাখুলিভাবে সমর্থন দিয়েছে শেখ হাসিনাকে। হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে উঠেছে এটিই।’
তিনি আরও লিখেছেন, অভিযোগ আছে যে, বাংলাদেশের ভিতরে বাংলাদেশী নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সদস্যদের পোশাক পরে বাংলাদেশের ভিতরেই গোপনে অভিযান চালাচ্ছে ভারতীয়রা। বাংলাদেশীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিশেষ টিম বাংলাদেশে পাঠিয়েছে ভারত। ওদিকে শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ নেয়ার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে তদবির করছে ভারত। যদিও এসব অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায় নি। তবে ভারতকে এমন বিষয় এড়িয়ে চলতে হবে, যাতে দেখা যায় তারা মাত্র একটি বিশেষ দল বা নেতার সঙ্গে কাজ করছে।’
সুহাসিনী হায়দার আরও লিখেছেন, ‘নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা যে জাতীয় সংসদে ফিরলেন সেখানে শুধুই তার কণ্ঠ প্রতিধ্বনি তুলবে। সেখানে তার বক্তব্য হবে অন্তঃসারশূন্য, যেমন বিজয় তিনি নিজে পেয়েছেন। জাতীয় সংসদের তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন তিনি। কিন্তু তিন-চতুর্থাংশ ভোটার ভোটই দেন নি। ১৯৯৬ সালে এমন বিজয় অর্জন করেছিলেন হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া। তখন হাসিনা ছিলেন বিরোধী দলে। খালেদা জিয়া ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেবারও দ্বিতীয় দফা নির্বাচন দেয়ার জন্য ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। এবারের নির্বাচনে ভারত সমর্থন দিয়েছে। এটা লক্ষ্য করার মতো বিষয়। তবে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এ নির্বাচনের তীব্র সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা এ নির্বাচনকে হতাশাজনক বলে উল্লেখ করেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আরেকটি নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি রাখার তীব্র সমালোচনা করা হয় শেখ হাসিনার। এমন অবস্থাকে খালেদা জিয়া ‘গণতন্ত্রের মৃত্যু’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় বাংলাদেশকে প্রচণ্ডভাবে চাপে ফেলে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সে পথ অনুসরণ করে। কিন্তু এর মধ্যেও বাংলাদেশের পক্ষ নেয় ভারত। নতুন নির্বাচন না দিয়ে শেখ হাসিনার সামনে কোন বিকল্প নেই। এর অনেকগুলো কারণ আছে। নির্বাচন না হলে বাংলাদেশ সাংবিধানিক সঙ্কটে পড়তো। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াই এমন নির্বাচন অনুমোদন করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আরও দল যদি নির্বাচন বর্জন করতো তার জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করা যেতো না। ১৯৯২ সালে সন্ত্রাসকবলিত পাঞ্জাবে শুধু আকালি দল ছাড়া সব দল নির্বাচন বর্জন করেছিল। তখন শতকরা ৯ ভাগ ভোট পেয়ে কংগ্রেসের বিয়ন্ত সিং নির্বাচিত হন মুখ্যমন্ত্রী।’
সুহাসিনী হায়দার তার প্রতিবেদনে লিখেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে বিবৃতি দিতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে এ উদ্যোগে সমর্থন দেয় বৃটিশ পার্লামেন্ট, মানবাধিকারবিষয়ক গ্রুপ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো সংগঠন। শেখ হাসিনা এ বিচার সম্পন্ন করছেন। এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ফাঁসি কার্যকরের চেষ্টা করছেন। বেশ কিছু এনজিও জামায়াতে ইসলামীর সদস্যদের সহ জিহাদি কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন করে এমন অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নিয়েছেন। এর ফলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দাতা দেশ সৌদি আরবের সহায়তা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন শেখ হাসিনা। এমন পরিস্থিতিতে বলা যায়, ভারতের অনেকেই সাউথ ব্লককে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের জন্য প্রতিরক্ষার একটি ভূমিকা রাখার জন্য বলতে পারেন। শেখ হাসিনা যে চাপ মোকাবিলা করছেন তার ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য ভূমিকা রাখতে বলতে পারেন। এটাও হতে পারে একটি ভুল পদক্ষেপ। প্রতিবেশী দেশটির কাছে ভারত কৌশলগতভাবে এত শক্তিশালী যে, তারা বাংলাদেশের একটি বিশেষ দলের স্বার্থে পক্ষপাতী ভূমিকা পালন করতে পারে।’
সুহাসিনী হায়দার বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারত প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়া, এরশাদকে ফিরিয়ে আনতে ভারতের উদ্যোগসহ এমন আরও অনেক বিষয় নিয়েই লিখেছেন খোলামেলাভাবে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই প্রতিবেদন কিছুটা হলেও প্রভাবিত করতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। তথ্যসূত্র: দ্য হিন্দু