ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আজ ২০ আগস্ট পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার পর প্রতিটি মুসলমানের জন্য এই দিনটি অত্যন্ত আনন্দের দিন। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়ে দেশবাসীদের ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
ইতিমধ্যে পবিত্র ঈদুল ফিতরের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানকে ভাবগম্ভির পরিবেশে সাজানো হয়েছে। ঈদ উৎসব উদযাপনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সড়ক সজ্জিতকরণ, আলোকসজ্জা ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ত্রিপল এবং শামিয়ানা দিয়ে ঈদগাহ ময়দানের ছাদ তৈরি করা হয়েছে। পর্যাপ্ত আলো এবং কার্পেট দিয়ে নামাজ আদায়ের সুব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল, কারাগার, শিশু পরিবার ছোট নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, সেফ হোমস, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভি ঈদের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা অনুষ্ঠান ও সেমিনারে বক্তব্য তুলে ধরবে। ঈদের দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য সব শিশু পার্ক খোলা রাখা হবে এবং বিনা টিকিটে ঢাকা জাদুঘরে প্রবেশ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায়ে সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়েছে। এই জামাতে প্রতি বছরের মতো এবারও মহিলাদের নামাজ আদায়ের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অজুর পানি এবং পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক প্রবেশপথ নির্মাণ করা হয়েছে। গাড়ি পার্কিংয়ের সুবন্দোবস্ত করা হয়েছে। মুসল্লিরা যাতে নির্বিঘ্নে ঈদগাহে প্রবেশ করতে পারেন সেজন্য নিরাপত্তা পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
এবারের ঈদুল ফিতরের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায় বায়তুল মোকাররম মসজিদে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল সাড়ে ৮টায়। আবাহওয়া প্রতিকূল থাকলে সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ওই জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া পৃথক বাণী প্রদান করেছেন। বাণীতে তারা বলেন, ঈদ শান্তি, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের অনুপম শিক্ষা দেয়। সাম্য মৈত্রী ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে সব মানুষকে ঈদুল ফিতরের শিক্ষা ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনে প্রতিফলন ঘটানোর জন্য সব প্রতি আহ্বান জানানো হয় বাণীতে। তারা সৌহার্দ্যের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আনন্দকে একত্রে উপভোগ করার আহ্বান জানান।
জাতীয় ঈদগাহ এবং বায়তুল মোকররমসহ রাজধানীর অন্যান্য ঈদের জামাতের স্থানেও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সারাদেশে ঈদের জামাতের নিরাপত্তাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় র্যাবের ৫ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছেন সংস্থার মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান। জাতীয় ঈদগাহে প্রতিবারের মতো এবারও সাধারণ মানুষের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, বিচারপতি ও কূটনীতিকসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নামাজ আদায় করবেন। ইমামতি করবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।
এদিকে সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে ঈদগাহের চারদিকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো থাকবে। যদি কেও নিরাপত্তার পাশ কাটিয়ে মাঠে প্রবেশও করে তবে তাৎক্ষণিকভাবে তা ধরা পড়ে যাবে। এবার জাতীয় ঈদগাহের মূল ফটকে থাকবে তিন ধরনের প্রায় ৭টি ডগ স্কোয়াড। ঈদগাহের মূল ফটকে থাকছে অত্যাধুনিক ডিটেক্টর। মাঠে কেও কোন প্রকার ক্ষতিকর জিনিস নিয়ে ঢুকছে কিনা তা জানা যাবে ওই ডিটেক্টর দিয়ে।
ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের জন্য বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লা ও সংগঠনের মাধ্যমে ঈদের জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়, দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায়, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায়, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায় এবং শেষ ও পঞ্চম জামাত বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঈদের জামাত ও জামাতের স্থান
সকাল সাড়ে ৭টা ডেমরা ডগাইর ঈদগাহ ময়দান, হারুন মোল্লাহ ঈদগাহ মাঠ মিরপুর সেকশন-১২ ও হাজারীবাগ কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত পরিচালনা কমিটির ঈদের জামাত হাজারীবাগ পার্ক মাঠ। সকাল ৭-৪৫ মিনিট- খিলক্ষেত কুর্মিটোলা হাইস্কুল ঈদগাহ ময়দান। সকাল ৮টা- উত্তরা জামে মসজিদ ফাউন্ডেশনের ঈদের জামাত ৩ নম্বর সেক্টরের মসজিদ আলমাগফিরায়, জমিয়তে আহলে হাদিসের ঈদের প্রধান জামাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, ব্রাদার্স ইউনিয়নের ব্যবস্থাপনায় ইউনিয়নের খেলার মাঠ, দেওয়ানবাগ শরীফ (প্রথম জামাত), মিরপুর বায়তুল ফালাহ কমপ্লেক্স মসজিদ, ইব্রাহীমপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, সরকারি মাদরাসা ই আলিয়া-ঢাকার ঈদ জামাত মাদরাসা খেলার মাঠ ও বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদ। সকাল ৮-৩০ মিনিট- মহাখালী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ঈদ জামাত সরকারি তিতুমির কলেজ ময়দান, খিলক্ষেত কুর্মিটোলা হাই স্কুল ঈদগাহ ময়দান, লালবাগ কেল্লা মসজিদ, বায়তুশ শরফ আঞ্জুমানে ইত্তেহাদ বাংলাদেশের ঈদ জামাত ফার্মগেইট বায়তুশ শরফ মসজিদ, ডেমরা ডগাইর ঈদগাহ ময়দান ও হাজারীবাগ কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত পরিচালনা কমিটির ঈদ জমাত হাজারীবাগ পার্ক মাঠ। সকাল ৮-৪৫ মিনিট- বসুগাঁও মীর বাড়ি ঈদগাহ ময়দান। সকাল ৯-০০ মিনিট- মাজুখান ঈদগাহ ময়দান, ঢাকা মহানগর পণ্য পরিবহন এজেন্সি মালিক সমিতির ঈদের জামাত আরমানিটোলা খেলার মাঠ, মাতুয়াইল দরবারে মোজাদ্দেদীয়া যাত্রাবাড়ী ঢাকা, উত্তরা জামে মসজিদ ফাউন্ডেশন ৩ নং সেক্টরের মসজিদ আলমাগফিরায়, মীর বক্স ওয়াকফ স্টেট মসজিদ কমিটি মসজিদ প্রাঙ্গণ, দেওয়ানবাগ শরিফ (দ্বিতীয় জামাত) ও মিরপুর বায়তুল ফালাহ কমপ্লেক্স মসজিদ। সকাল ৯-৩০ মিনিটে দেওয়ান বাগ দরবার শরীফের ৩য় জামাত। সকাল ১০-০০ মিনিট- মাতুয়াইল দরবারে মোজদ্দেদীয়া যাত্রাবাড়ী ঢাকা। সকাল ১০-৩০ মিনিট- বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের ঈদ জামাত বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি মাঠ। এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে মহানগরীর বিভিন্ন মসজিদ ও মাঠে মোট ১৪০টি ঈদের জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া ঈদের জামাত অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন স্থানে ঈদের জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। চট্টগ্রামে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় মসজিদ জমিয়তুল ফালাহ ময়দানে। রাজশাহীর প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৮টায় হজরত শাহ মখদুম (রঃ) কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে।
ঈদের বৃহত্তম জামাত হবে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়
বরাবরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০ টায় এই জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি বছর ঈদুল ফিতরের জামাতে দেশ-বিদেশের তিন লাখেরও বেশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লি এ মাঠে জামাত আদায় করে থাকেন। প্রতি বছর এ মাঠে অনুষ্ঠিত দেশের বৃহত্তম ঈদুল ফিতরের নামাজ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়া ফলাও করে প্রচার করে থাকে। এবারও চ্যানেল-আই সরাসরি (লাইভ) সম্প্রচার করবে। আজ থেকে এ ঈদগাহ প্রাঙ্গণে পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন আইনশৃংখলা রক্ষাবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য গড়ে তুলবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জনশ্রুতি আছে, এ ঐতিহাসিক ঈদগাহ মাঠে পরপর তিনবার ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করতে পারলে এক হজের সমান সওয়াব হয়। আর এজন্য কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানটিকে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান গরিবের মক্কা বলেও বিবেচনা করেন। এবারও এ মাঠে তিন লাখেরও বেশি ধর্মপ্রাণ মুসুল্লি ঈদের জামাত আদায় করবেন বলে আয়োজকরা আশা প্রকাশ করছেন। এরই মধ্যেই শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ ও কিশোরগঞ্জ শহরকে সু-দৃশ্য তোরণ ও বিদ্যুৎ বাতির বর্ণিল আলোকসজ্জায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে। কিশোরগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠে নরসুন্দা নদের তীরে অবস্থিত দু’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায় করার জন্য দেশের দূর-দূরান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের আগমন শুক্রবার ১৭ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে। ঈদের জামাত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত ট্রেন, বাস, মাইক্রো, প্রাইভেটকারযোগে এমনকি হেঁটে এসে হাজার-হাজার মুসল্লি এ মাঠের জামাতে অংশ নিয়ে থাকেন। এছাড়াও মুসল্লিদের কাফেলায় শরিক হন ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, নাইজেরিয়া, সুদান, সিরিয়াসহ বিভিন্ন বিদেশী রাষ্ট্রের ধর্মপ্রাণ মুসলমান। বহিরাগত মুসুল্লিদের থাকা, খাওয়া ও শুশ্রূষার জন্য শহরের মসজিদ, মাদ্রাসার পাশাপাশি অসংখ্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পালন করে থাকে। এছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য বিশেষ মেডিকেল টিম, আইন-শৃংখলা রক্ষার জন্য বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আনসারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করে থাকেন।
বগুড়ায় ঈদগাহ ময়দানে ১৪৪ ধারা জারি
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ঈদগাহ ময়দানে ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বিএনপিসমর্থিত ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া না-পড়াকে কেন্দ্র করে মুসল্লিদের দুই পক্ষে উত্তেজনা দেখা দেয়ায় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে।
সোমবার ২০ আগস্ট ঈদের দিন ভোর ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে।
প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া জেলা বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মো. তোহা আহম্মেদ বুড়ইল ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাতে ইমামতি করে আসছেন। কিন্তু রাজনৈতিক দলের নেতার পেছনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে আপত্তি তোলেন সাধারণ মুসল্লিরা।
তারা নিরপেক্ষ ইমাম নিয়োগের দাবি জানান। এ নিয়ে মুসলিস্নদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। গত বছর একই বিষয় নিয়ে বিভক্তির কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায় প্রশাসন এবার সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. আনারকলি বলেন, “দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়ায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।”