ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত ট্রাই-নেশন সিরিজে প্রথম জয় পেলো শ্রীলঙ্কা। অন্যদিকে কিছুদিন আগেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতা ভারত যেনো নিজেদের কক্ষপথ থেকে ছিটকে পড়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে হারের পর আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাদের অসহায় আত্মসম্পর্ন। ১৬১ রানের বিশাল জয় নিয়ে বোনাস সহ শ্রীলঙ্কা’র পয়েন্ট এখন ৫, অন্যদিকে টানা দুটি ম্যাচ জিতে ৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কোনো ম্যাচ না জিতে পয়েন্ট তালিকা এবং রান রেটে খুবই বাজে অবস্থানে আছে ভারত। সামনে আর দুটি মাত্র সুযোগ আছে তাদের। উল্লেখ্য, ইঞ্জুরির ফাঁদে পরে ভারতীয় অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনি ট্রাই-নেশন সিরিজ থেকে বিদায় নিয়েছেন আগেই।
টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। তাতে শাপেবরই হয়ে দাঁড়ায় শ্রীলঙ্কার জন্য। ভারতীয় বোলিং লাইনআপকে পাড়ার বোলারদের পর্যায়ে নামিয়ে আনেন তারা। ৩৮.৪ ওভার পর্যন্ত থারাঙ্গা-জয়াবর্ধনের ২১৩ রানের উদ্বোধনী জুটি ভারতকে ম্যাচ থেকে তখনই ছিটকে দেয়। ১১২ বলে ১০৭ রানের ইনিংস খেলে অশ্বিনের বলে যাদবের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন জয়াবর্ধনে। কিন্তু তাতেও রক্ষা হয়নি, শেষ ১১ ওভারে থারাঙ্গা-ম্যাথুস ১৩৫ রানের জুটি গড়ে তোলেন। ৫০ ওভার শেষে ১ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩৪৮ রান। ছয়মাস পর দলে সুযোগ পেয়ে নিজের ফেরাটাকে ১৫৯ বলে ১৭৪ রান করে উদযাপন করলেন থারাঙ্গা।
পুরো ম্যাচে ভারতীয় বোলারদের কতোটা শাসন করেছেন থারাঙ্গা-জয়াবর্ধনে সেটা স্কোর বোর্ড দেখলেই বোঝা যাবে। শামী আহমেদ-রবি অশ্বিন ১০ ওভারে দিয়েছেন যথাক্রমে ৬৮ এবং ৬৭ রান। ইশান্ত শর্মা-রবীন্দ্র জাদেজা ৯ ওভার বোলিং করে রান দিয়েছেন ৬৮ ও ৫৫। ম্যাচে সবচেয়ে বেশী মার খেয়েছেন যাদব। ৮ ওভার বোলিং করে তার কাছ থেকে এসেছে ৬৮ রান। থারাঙ্গা-জয়াবর্ধনের পাশাপাশি ইনিংসের শেষের দিকে লংকান অধিনায়ক ম্যাথুসের ২৯ বলে ৪৪ রানের ছোট্ট ঝড়টাও বেশ ভুগিয়েছে ভারতকে। অতিরিক্ত আরও ২৩ রান এসেছে ভারতীয় বোলারদের কাছ থেকে।
৩৪৮ রানের বিশাল পাহাড়ে চাপা পড়ে ভারত অনেকটাই কাহিল। রান তাড়া করতে নেমে কোনো প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেনি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাটিংলাইন আপ বলে পরিচিত ভারত। সর্বোচ্চ ৪৯ রান এসেছে রবীন্দ্র জাদেজা’র ব্যাট থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সুরেশ রায়না’র ৩৩ এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ মুরলি বিজয়ের ৩০ রানের ওপর ভর করে ৪৪.৫ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ভারত তুলতে পারে ১৮৭ রান। শ্রীলঙ্কার প্রতিটি বোলারই সাফল্য পেয়েছেন ভারতের বিপক্ষে বোলিং করে। রঙ্গনা হেরাথ সর্বোচ্চ ৩ উইকেট পেয়েছেন। এছাড়াও মালিঙ্গা-সেনানায়েকে ২টি করে উইকেট এবং কুলাসেকারা-ম্যাথুস ১টি করে উইকেট লাভ করেন।
ভারতীয় ইনিংসের ৪.২ ওভারে দলীয় ১২ রানে রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে দেন কুলাসেকারা। বিশাল রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই প্রথম উইকেট হারিয়ে পুরো ম্যাচে আর নিজেদের খেলায় ফিরতে পারেনি ভারত। ধাওয়ান-বিজয় প্রথম ধাক্কা সামাল দিলেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাড়া জাগানো ধাওয়ান অসহায় ভাবে ৪২ রানে ২৪ রানের ইনিংস খেলে আউট হয়ে যান। এরপর নিয়মিত বিরতিতে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন কোহলি-কার্তিক-রায়না। শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত ৪৯ রানে অপরাজিত ছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ ১৭৪ রানের নজড়কাড়া ইনিংসের পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে উপুল থারাঙ্গা বলেন, “ছয়মাস পর দলে ফিরে এমন খেলতে পারায় নিজের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। এর পুরো কৃতিত্বটাই মাহেলা’র। সে আমাকে পুরো ম্যাচে উৎসাহ দিয়েছে, নিজেও সেঞ্চুরি করেছে। সেঞ্চুরি’র পর আমাদের হাতে ছিলো আর মাত্র ১০/১২ ওভার। আমি পিটিয়ে মারতে চাইলাম, সাথে ভাগ্যটাও আমার সাথে ছিলো। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর এমন বড় জয় আমাদের জন্য খুবই সহায়ক হবে।”
মাহেলা’র ভাষায়, “শুরুটা চমৎকারভাবে হয়েছে। তবে প্রথম ১০ ওভার ওরা আমাদের চাপেই রেখেছিলো, ভালো বোলিংও করছিলো, তবে ধীরে ধীরে আমরা ওদের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছি, এবং দেখা যাচ্ছে আমরা বেশ ভালো খেলেছি!”
ম্যাচ হারের পর আপাত অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা কোহলি বলেছেন, “৩৪৯ রান তাড়া করার জন্য যে দ্রুত শুরুর প্রয়োজন ছিলো সেটা আমরা করতে পারিনি, বলতে গেলে এতো ভালো ব্যাটিংয়ের পর লংকান বোলিংও অনেক ভালো হয়েছে। আমরা সুযোগ পাইনি নিজেদের মেলে ধরার। তবে আমাদের সামনে আরও ২ ম্যাচ আছে। ভারত অবশ্যই ফর্মে ফিরে আসবে।”