দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ধর্ম, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে অর্থনীতিকে অবহেলা করেছেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন অর্থনীতিবিদ স্টিভ হ্যাঙ্ক।
মার্কিন অর্থনীতিবিদ স্টিভ হ্যাঙ্ক এর মতে, কঠিন এবং প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্কারের সদিচ্ছা নেই মোদী সরকারের। যে কারণে ২০২০ সালে জিডিপি বৃদ্ধি ৫ শতাংশে নিয়ে যেতে হিমশিম খেতে হবে দেশটিকে। প্রবৃদ্ধি হ্রাসের কারণ হিসেবে মূলধনের অভাব তথা ঋণ সঙ্কোচনের কথাও উল্লেখ করেছেন স্টিভ হ্যাঙ্ক।
গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নেমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ৬ বছরের মধ্যে ছিলো সর্বনিম্ন। এই ফলাফল আসার পূর্ব থেকেই অবশ্য অর্থনীতির ঝিমুনির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। গাড়ি শিল্পে সঙ্কট, নতুন শিল্প বিনিয়োগে ভাটা, বেকারত্ব বৃদ্ধি তথা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়া, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো বিষয়গুলি নিয়ে ক্রমেই উদ্বেগ বাড়ছিল। ৩ মাস পরেও সেই পরিস্থিতির খুব একটা রদবদল হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে ঘুরে দাঁড়ানোর মতো এমন ইঙ্গিতও নেই শিল্পমহলে। অর্থনীতিবিদদের অনেকেই মনে করেন যে, বড়ো কোনও সংস্কারমুখী দাওয়াই ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া দুষ্কর একটি ব্যাপার।
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের আর্থিক উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হ্যাঙ্ক মনে করেন যে, মোদী সরকারের তেমন কোনো সদিচ্ছাই নেই। দ্বিতীয়বারের মতো বিপুল জনসমর্থন নিয়ে সরকার গড়েছে বিজেপি। সংখ্যার চাপও নেই তাদের। তবে তার পরেও সংস্কারমুখী বড়ো কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি মোদী সরকার। স্টিভ হ্যাঙ্ক মনে করেন, ‘এর পরিবর্তে মোদী সরকার দু’টি বিষয়েই গুরুত্ব দিচ্ছে: ঐতিহ্য ও ধর্ম, যা আসলে ধ্বংসাত্মক এবং বলা যায় বিস্ফোরক।’
জন হপিকন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত অর্থনীতি বিষয়ে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত স্টিভ হ্যাঙ্ক এর মতে, ‘ভারতে আর্থিক মন্দা মূলত ক্রেডিট স্কুইজ ঋণ সঙ্কোচনের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেটি আসলে ধারাবাহিক একটি সমস্যা, আসলে সেটি পরিকাঠামোগত নয়। সেই কারণেই ২০২০ সালে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে নিয়ে যেতে অনেক বড়ো লড়াই করতে হবে দেশটিকে।’
তিনি মনে করেন, এই ঋণ সঙ্কোচনের অর্থই হলো ব্যাংকগুলো শিল্পক্ষেত্রে ঋণ দিতে চাইছে না, কিংবা দিলেও মাত্রাতিরিক্ত সুদ দিতে হচ্ছে। এমনিতেই নন পারফর্মিং অ্যাসেট কিংবা এনপিএ-র ভারে ন্যুব্জ দেশটির ব্যাংকগুলো। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকের অবস্থা খুব খারাপ। সেই এনপিএ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ব্যাংকগুলো শিল্পপতি-বিনিয়োগকারীদের ঋণ দিতে চাইছে না। যে কারণে অবিশ্বাস এবং ভয়ের বাতাবরণ ব্যাংকিং মহলে রয়েই গেছে। যে কারণে ঋণ না পেয়ে মুলধনের অভাবে নতুন শিল্প স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছে না শিল্পমহল। সে কারণে অর্থনীতিতে গতি আসছে না।
ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার এক রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, দেশটির ব্যাংকিং ক্ষেত্রের শঙ্কা এবং অবিশ্বাসের বাতাবরণ কাটাতে সিবিআই তদন্তের দাওয়াই দিয়েছেন নির্মলা সীতারামন। ব্যাংক কর্তাদের আশ্বস্ত করতে সিবিআই কর্তাদের সঙ্গে ব্যাংক কর্তাদের নাকি এক টেবিলে নিয়ে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। স্টিভ হাঙ্কের মতে, এই সব পদক্ষেপে কোনই কাজ হবে না। প্রয়োজন সাহসী ও আমূল সংস্কারমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। মোদী সরকার সেটি মোটেও করছে না বলে তোপ দেগেছেন স্টিভ হ্যাঙ্ক। যদিও বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রণালয় কিংবা সরকারের অন্য কোনও প্রতিনিধির মন্তব্য পাওয়া যায়নি।