দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ লাদাখের গালওয়ানে চীন ও ভারতের উত্তেজনা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যেই এবার প্রতিবেশী ভুটানের পূর্বাঞ্চলে একটি বিস্তীর্ণ অংশের ওপরও নিজেদের সার্বভৌমত্ব দাবি করলো চীন।
পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন যে, মূলত দিল্লির ওপর আরও চাপ বাড়ানোর লক্ষ্যেই ভুটানের ওই সাকতেং অভয়ারণ্যকে চীন নিজেদের বলেও দাবি করেছে। কারণ হলো ভুটানের অখন্ডতা রক্ষা এবং প্রতিরক্ষার জন্য ভারত অঙ্গীকারবদ্ধ।
চীনের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ভুটান ইতিমধ্যেই দিল্লিতে তাদের দূতাবাস মারফত চীনের কাছে একটি ডিমার্শ কিংবা কূটনৈতিক প্রতিবাদপত্রও পাঠিয়েছে। ভুটানের পূর্বদিকে ত্রাশিগিং জেলার ভারত সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় প্রায় সাড়ে ৬শ’ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে একটি অভয়ারণ্যের নাম সাকতেং, যা বহু বিরল বন্য পশুপাখির আবাসভূমি হিসেবে খ্যাত।
মাসখানেক পূর্বে এই বনভূমির উন্নয়নে একটি প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়ে ‘গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফেসিলিটি’ কিংবা জিইএফ একটি আন্তর্জাতিক অনলাইন বৈঠকের আয়োজনও করেছিল। সেখানেই চীন প্রথম দাবি করে বসে সাকতেং তাদের।
বিশ্ব ব্যাংকে ভারতের অন্যতম প্রতিনিধি অপর্ণা সুব্রামনি ওই বৈঠকে ভারত-ভুটান-বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা-মালদ্বীপের হয়ে অংশ নেন, তিনি তখন চীনের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদও জানান।
সম্প্রতি ওই অনলাইন বৈঠকের মিনিটস বা কার্যবিবরণী সামনে আসার পরই বোঝা যায় যে, ভুটানের সাকতেং-কেও চীন এখন বিরোধপূর্ণ সীমান্ত অঞ্চলের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলতে চাইছে।
তারপর এই সপ্তাহে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের ‘দ্য হিন্দুস্তান টাইমস’ পত্রিকাকে পাঠানো এক বিবৃতিতে সাকতেং-এর ওপর তাদের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে। ভারতকে ইঙ্গিত করে বলেছে যে ‘কোনও তৃতীয় পক্ষ যেনো এখানে নাক না-গলায়’!
কেন সাকতেং-এর ওপর চীনের এই দাবি?
থিম্পুতে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত ইন্দর পাল খোসলা বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন যে, “আমার মতে চীন এখন পুরোপুরি একটা সম্প্রসারণবাদী দেশের মতোই আচরণ করছে। তারা ভুটানের এমন একটা জায়গা দাবি করে বসেছে যেটা নিয়ে আগে কখনও বিতর্কই ছিল না, ওই দুই দেশের মধ্যে চব্বিশ রাউন্ড সীমান্ত বৈঠক হলেও সাকতেং কখনও আলোচনার টেবিলে ওঠেইনি।”
“এখন তো দেখছি তারা কোনও সীমান্ত সমঝোতারই ধারই ধারছে না, এমন কী রাশিয়ার ভ্লাদিভস্টক পর্যন্ত তারা দাবি করছে। আমরা শুধু আশা করতে পারি যে, চীনের এই ধরনের এক্সপেরিমেন্ট খুব বেশিদিন চলবে না ও তারা এই সব বন্ধ করবে”, বলছিলেন সাবেক কূটনীতিবিদ মি খোসলা।
আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি-তে চীন বিশেষজ্ঞ এম টেলর ফ্র্যাভেল জানিয়েছেন, চীনের এই দাবির পেছনে রয়েছে ১৭১৫ সালে তিব্বত এবং ভুটানের মধ্যে হওয়া একটি চুক্তি। ওই চুক্তিতে না কি সাকতেং-এর ওপর তিব্বতের সার্বভৌমত্ব মেনে নেওয়া হলেও ভুটানের মেষপালকদের ওই তৃণভূমিতে গরু-ভেড়া চরানোর অনুমতি দেওয়া হয়।
১৯৪৯ সাল হতে সাকতেং ভুটানের অংশ। তবে এখন চীন বলছে যে, যেহেতু তিব্বত তাদের, সুতরাং সাকতেংয়ের ওপরও তাদেরই অধিকার বর্তায়।
সাকতেং কি স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ?
দিল্লিতে টাইমস অব ইন্ডিয়ার ডিপ্লোম্যাটিক এডিটর ইন্দ্রাণী বাগচীর কাছে এই বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমটি জানতে চেয়েছিলো, এই অভয়ারণ্যের স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব আসলে কোথায় যে চীন এটি কব্জা করতে চাইছে?
তিনি বলেন, “ওই অঞ্চলের মানচিত্রটা দেখলেই বুঝবেন ওই সাকতেং হলো ভারতের অরুণাচল প্রদেশের যে সেলা পাসে ‘৬২-র ভারত-চীন যুদ্ধ হয়েছিল তার ঠিক উত্তর দিকের একটি এলাকা। চীনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো গোটা অরুণাচল প্রদেশটাকেই তাদের কব্জা করে নেওয়া। যে কারণে এটা সেই পরিকল্পনার একটি অংশও হতে পারে।”
“দ্বিতীয়ত:, বিশেষ করে এই সময়টাকে বেছে নেওয়া হয়েছে, কারণ হলো চীন দেখতে পাচ্ছে লাদাখ বা কালাপানি নিয়ে ভারত আগে থেকেই চাপের মধ্যে রয়েছে- যে কারণে দিল্লির ওপর রাজনৈতিক কিংবা কূটনৈতিক চাপ বাড়ানোও এর একটা উদ্দেশ্য হতে পারে।”
“তৃতীয়ত:, চীন ভুটানের ওপর এই চাপটা এমন একটা মাত্রায় নিয়ে যেতে চাইছে যাতে ভুটান ভারতকে বলতে বাধ্য হয় যে আমরা চীনের সঙ্গে পৃথকভাবে বিষয়টা নিয়ে বোঝাপড়া করে নিচ্ছি!”, বিষয়টি সম্পর্কে বলছিলেন ইন্দ্রাণী বাগচী।
চীনের প্রকৃত নিশানা কী তাহলে ভারত?
বস্তুত ভারতের প্রভাব বলয় হতে ভুটানকে যতোটা সম্ভব বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা রয়েছে চীনের দীর্ঘদিনের। তবে তিন বছর পূর্বে ডোকলাম সঙ্কটের সময় যেভাবে ভারতীয় সেনারা ভুটানের হয়ে চীনা বাহিনীর বিরুদ্ধে মুখোমুখি অবস্থান নেয়, চীনকে সেই সময় বেশ অবাকই করেছিল। তার পরেও অবশ্য ভুটানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করার প্রবল চেষ্টা চালিয়ে যায় চীন, থিম্পুতে চীন দূতাবাসও খুলতে চেয়েছে বার বার।
ইন্দ্রাণী বাগচী আরও জানান, “কূটনৈতিক সম্পর্ককে আপগ্রেড করে থিম্পুতে চীন তাদের নিজস্ব দূতাবাস খুলতে চাইছে বহুদিন যাবত। তবে ভুটানের রাজাদের তাতে প্রবল আপত্তি ছিল।”
“আসলে এটা শুধু চীন নয়, বেশির ভাগ দেশেরই থিম্পুতে কোনও দূতাবাসও নেই। দিল্লিতে সেই সব দেশের রাষ্ট্রদূতরাই ভুটানকে কভার করে থাকেন। এটা আমেরিকা কিংবা জাপানের ক্ষেত্রেও সত্যি।”
“তারপরও চীন বারবার ভুটানে নিজেদেরই দূতাবাস চেয়েছে। তবে ভুটানের রাজা, যাকে সে দেশের লোক ‘কে-ফোর’ বা ‘দ্য কিং ফোর’ বলে ডাকেন, তিনি এবং তাঁর পূর্বসূরী কে-থ্রি মিলে অনেক ভেবে চিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে সেটার কোনও দরকার নেই”, সংবাদ মাধ্যম বিবিসিকে বলেন ইন্দ্রাণী বাগচী।
সাকতেং-এর ওপর চীনের দাবিকে নস্যাৎ করে ভুটানের যে কূটনৈতিক প্রতিবাদপত্র কিংবা ডিমার্শ, সেটাও পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে চীনের দূতাবাসে।
ভারত মনে করছে, লাদাখের গালওয়ান বা প্যাংগং লেকে চীনের সঙ্গে ও কালাপানিতে নেপালের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ তো রয়েছেই। এখন সাকতেং-এও ভুটানের বকলমে আসলে ভারতের সঙ্গেই চীন বিরোধের নতুন একটি ফ্রন্ট খুলার পরিকল্পনা করছে। তথ্যসূত্র: বিবিসি অবলম্বনে একুশে টেলিভিশন।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।