দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির হাজারিখিল। এ স্থানটি পাখিদের কিচিরমিচিরে মুগ্ধতা ছড়ায় দর্শনার্থীদের মধ্যে। যে কারণে বহু মানুষের আগমণ ঘটে এই স্থানে। একে বলা যায় এক নৈসর্গ।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি এই এলাকাটি-ই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এখানে ‘হাজারিখিল অভয়ারণ্য’ ও গিরিপথ, সুড়ঙ্গ এবং পাহাড়ি ঝর্ণা ভ্রমণ, সেইসঙ্গে চারপাশে চা বাগানঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ যে কোনো ভ্রমণপিপাসুর জন্য বেশ আনন্দের বিষয়। হাজারিখিল অভয়ারণ্য আপনি যদি পাখির রাজত্বে সত্যিই হারিয়ে যেতে চান, তাহলে চোখ বন্ধ করে চলে যান হাজারিখিল। যেখানে প্রতিদিন হাজারও নাম না জানা পাখির আনাগোনা ঘটে। হাজারিখিল অভয়ারণ্য আপনাকে পাখির কলকাকলিমুখর আবেশময় এক জগতে নিয়ে যাবে। এ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি গঠিত হয়েছে ২৯০৮ হেক্টর জমি নিয়ে।
১৮৯৩ সালে এই জায়গাটিকে ‘রামগড়-সীতাকুণ্ড সংরক্ষিত বন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বন্যপ্রাণীতে মুখর হাজারিখিলে দেখা পাওয়া যায় নানা ধরনের জীবজন্তুর। যারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– ভাল্লুক, বনবিড়াল, মেছোবাঘ, শিয়াল, সাম্বার, মায়া হরিণ, বন কুকুর, বনছাগল, বানর এবং হনুমান। আবার মাঝে-মধ্যে দেখা পাওয়া যায় চিতাবাঘের! মোট ৮ প্রজাতির উভচর ও ২৫ প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে এই বনে। তবে পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত এই বনে রয়েছে প্রায় ১২৩ প্রজাতির বেশি পাখি! সেই হিসেবে হাজারিখিল অভয়ারণ্যকে পাখিপ্রেমীদের স্বর্গ বললেও একেবারে ভুল হবে না। বিশেষ করে বিপন্নপ্রায় কাঠময়ূর ও মথুরার দেখা পাওয়া যায় এখানে। রয়েছে কাউ ধনেশ এবং হুতুম পেঁচাও। বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের সমারোহ থাকার কারণে চিরসবুজ এই বনে এমন কিছু প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়, যা অন্য কোনো বনে সচরাচর দেখাই যায় না।
যার মধ্যে রয়েছে হুদহুদ, নীলকান্ত, চোখ গেলো, বেঘবৌ এবং আবাবিল। এসব পাখির আকার-আকৃতি, বর্ণ এবং স্বভাবে বৈচিত্র্যময়। সম্প্রতি বাংলাদেশ বন গবেষণা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে এক গবেষণায় পাখির এইসব প্রজাতির সন্ধান পায় গবেষক দল। এই অভয়ারণ্যে নানা প্রজাতির পাখির সঙ্গে শীতকালে যোগ দেয় বহু অতিথি পাখির দল। এদের বিচরণে চিরসবুজ বন পরিণত হয় পাখির-ই পৃথক এক রাজ্যে। অভয়ারণ্যের ভেতর ঢুকতেই দেখবেন যে, হাতের বামপাশে বিশাল চা বাগান ও ডান পাশে সিঁড়ি বেয়ে উঠেই বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। এখানে আপনি হারিয়ে যাবেন চা বাগানের দৃষ্টিনন্দন এক সৌন্দর্যে। কিছু সময়ের জন্য হলেও আপনার মনে হবে, পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করতে পারলেই বোধহয় ভালো হতো।
তাছাড়াও হাজারিখিলে নানা ধরনের বৃক্ষের সমাহারও উপভোগ করতে পারবেন। তবে চিরহরিৎ গাছ-ই বেশি দেখা যায় এখানে। এ ছাড়াও রয়েছে গর্জন, চাপালিশ, সেগুন, কড়ই, মেহগনি। বিখ্যাত রাঙাপানি চা বাগান এ অভয়ারণ্যের টিক পাশেই অবস্থিত।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা হতে চট্টগ্রাম যেতে পারেন বাসে কিংবা ট্রেনে। তারপর ফটিকছড়ি হয়ে হাজারিখিল যেতে হবে। অক্সিজেন হতে ফটিকছড়ির বাস পাওয়া যাবে। আপনাকে নামতে হবে বিবিরহাট।
বিবিরহাট নেমেই রোডের উল্টা দিকে গিয়ে সিএনজি পাবেন, ওরা হাজারিখিল বাজার পর্যন্ত নিয়ে যাবে। হাজারিখিল বাজার হতে অভয়ারণ্য ১০ মিনিটের রাস্তা। সেখানে গিয়ে গাইড সঙ্গে করে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পাহাড়ের গিরিপথ ট্রেকিং করার পর তখন পাওয়া যাবে ‘কালাপানির ঝর্ণা’। সেখান থেকেই ফিরে এসে চা বাগান পেরিয়ে যেতে পারেন সুড়ঙ্গ দেখতে।
কোথায় খাবেন?
হাজারিখিল অভয়ারণ্যে দুপুরে খাওয়ার জন্য একটা ভাতঘর রয়েছে, যেখানে জনপ্রতি ১৩০ টাকা দিয়ে আপনি প্যাকেজ নিতে পারেন। তাছাড়া ফটিকছড়ি শহরে নানা ধরনের খাবারের হোটেল রয়েছে।
কোথায় থাকবেন?
থাকার জন্য চট্টগ্রাম কিংবা ফটিকছড়ি শহরে নানা মানের হোটেল রয়েছে। অবশ্যই ভাড়া দরদাম করে রুম দেখে তবেই উঠবেন। আপনি আজই ঘুরে আসুন পাখির স্বর্গ হাজারিখিল!
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।