হাসানুজ্জামান ॥ মিডিয়া ঘরে ঘরে খবরটি পৌঁছিয়ে দিয়েছে যে, হাসান আজিজুল হক গুরুতর অসুস্থ। তাঁর বয়স এখন বিরাশি বছর। তিনি ডায়াবেটিকস,হার্ট,কিডনিসহ নানা জটিল রোগে ভুগছেন।
প্রথমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন নিজ বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তাতে তাঁর উন্নতি না হওয়ায় শেষ মেষ এয়ারএ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে রাজশাহীর ফজলে হোসেন বাদশা এমপি তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, সব সময় এই সাহিত্যিকের খোঁজখবর রাখছেন।
তাঁর অনেকগুলো পরিচয় থাকলেও কথা সাহিত্যিক হিসাবেই তাঁর পরিচিতি দুই বাংলায় বিস্তৃত। তিনি ষাটের অধিক গ্রন্থ লিখেছেন। উপন্যাস,নাটক,ছড়া ,অনুবাদ মোট কথা সাহিত্যের এমন কোন স্থান নেই যেখানে তার স্পর্শ পড়েনি। তাঁর উল্লেখিত গ্রন্থের মধ্যে ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ এবং ‘আগুন পাখি’ পাঠকের কাছে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ষাটের দশকে লেখার জগতে প্রবেশ করে আজাবধি তিনি লিখেই চলেছেন। তিনি শুধু একজন লেখকই নন, একজন প্রগতিশীল খাঁটি দেশপ্রেমিক মুক্তমনের মানুষ।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র ধর্মভিত্তিক দেশ বিভাগের সময়ে তিনি ছিলেন কিশোর বয়সের। সাম্প্রদায়িকতার ছোবলে পড়ে ভারতবর্ষে হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গার রক্তাত্ব চিত্র কিছু কিছু তার মনে আছে। তবে ভাষা আন্দোলনের সময়ের ছাত্রদের মাঝে গড়ে ওঠা আন্দোলনের অগ্নিশিখার চিত্র পুরোটাই তার স্মৃতিতে ভা¯^র। বাঙালি জাতির জন্য ভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তী সময়গুলো মানুষের মনে প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার খোরাক জোগায়। বিশেষ করে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয়দফা আন্দোলন পূর্ব পাকিস্থানের জনগণকে বাঙালি মুক্তবুদ্ধির চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। ফলে চল্লিশের দশকে জন্মগ্রহণ করা মানুষগুলো একদিকে দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধ পরবর্তী রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের উথ্বান দেখেছে অপরদিকে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নিজেকে খাঁটি বাঙালি বানানোর একটি বড় সূযোগ পেয়েছে।
হাসান আজিজুল হক তেমনি একজন মানুষ, যিনি শুধু একজন সাহিত্যিক নন। আপাদমস্তক একজন প্রগতিশীল খাঁটি দেশ প্রেমিক মানুষ। জনশ্রæতি রয়েছে যে, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন থেকে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের একটি দাপট রয়েছে। বিশেষ করে নব্বই এর দশকে স্বৈরাচার হোসেন মুহম্মদ এরশাদ সরকার’কে পদত্যাগ করাতে মতিহারের ছাত্র সংগঠনের উজ্জ্বল ভূমিকা অহংকার করার মত। শুধু তাই নয় সাহিত্য-সাংস্কৃতিক শিল্পীদের সংগঠনও এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করে। এর সবকিছুর পিছনে বুদ্ধি ও পরামমর্শ দিয়ে চালিকা শক্তির মত ভূমিকা রেখেছেন যে সকল শিক্ষক তাদের মধ্যে অন্যতম সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে দেশের মধ্যে একটি সন্মানজনক স্থান অধিকার করে নেয় মতিহার সবুজ চত্বর। উনসত্তরের অভ্যুথ্বানে পাকিস্তানী মিলিটারীর হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা এবং উনিশশো বিরাশি সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নিহত জাসদ ছাত্রলীগের নেতা শাজাহান সিরাজের আত্মত্যাগ মতিহারকে করেছে মহিমান্বিত, গৌরবান্বিত।
একবিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে মৌলবাদী ছাত্র সংগঠনের আবির্ভাব ঘটে এই মতিহার ক্যাম্পাসে। তারা টার্গেট করে প্রগতিশীল শিক্ষকদের হত্যার নীল নকশা বাস্তবায়নে উঠেপড়ে লাগে। একাত্তরে বিজয় দিবসের পূর্বপ্রান্তে যে ভাবে দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল ঠিক একই ভাবে মতিহারে বেশ কয়েকজন শিক্ষককে হত্যা করে। সেই সময় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পায় এই মানুষটি। ফলে আজকে মতিহার গর্ব করে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের মত মানুষকে নিয়ে। ফলে তাঁর এই অসুস্থতার কথা জানতে পেরে এই ক্যাম্পাসের প্রাক্তনিদের মাঝে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে। সকলের প্রত্যাশা তিনি সুস্থ হয়ে আবারো সৌন্দর্যের নীল চাদরে ঘেরা মতিহারে ফিরে আসবেন।
# লেখক: গবেষক ও প্রাবন্ধিক।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।