দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দীর্ঘায়ু পেতে চান পৃথিবীতে বেশির ভাগ মানুষ। তবে শুধু দীর্ঘায়ু পেলেই চলবে না, দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বাঁচাটাও অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, দৈনিক শারীরিক ব্যায়াম এবং মনোচাপ থেকে মুক্তিতেও আয়ু বাড়ে। এর বাইরে আরও কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস রয়েছে যার মাধ্যমে খুব সহজেই স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়।
সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে, কোন কোন খাবার খেলে আয়ু আরও কমে যেতে পারে। সুস্থভাবে বাঁচতে এড়িয়ে চলতে হবে এইসব খাবার।
প্যাকেটজাত খাবার এড়িয়ে চলায় ভালো
বার্গার, পিৎজা কিংবা প্যাকেটে বিক্রি হওয়া রান্না করা মাংসের নানা পদ খেলে খুব ক্ষতি হয় তা কিন্তু নয়। তবে এগুলো নিয়মিত খেলেই ক্ষতি হয়। পরিসংখ্যান বলছে, এই ধরনের খাবার কিংবা ‘প্রসেসড ফুড’ যারা নিয়মিত খান, তাদের মধ্যে যে কোনও ধরনের ক্যান্সারের আশঙ্কা অন্তত ১২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। ১১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি।
অতিরিক্ত চিনি বর্জন করুন
চিনিতে কোনো রকম পুষ্টিগুণ নেই। তবে চিনি পুরোপুরি ক্যালোরিতে ভরপুর। পুষ্টিগুণহীন এই ক্যালোরিটিই নানা রকম রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ক্যান্সার থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস কিংবা কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার মতো নানা জটিল অসুখ দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার কারণে। যে কারণে কমতে পারে আয়ু।
অতিরিক্ত ভাজাভুজি বর্জন করুন
চিপস থেকে শুরু করে খোলা বিক্রি হওয়া অতিরিক্ত তেলের ভাজাভুজি- এ সবকিছুতেই বিপুল পরিমাণে ক্যালোরি রয়েছে। এগুলো কোলেস্টেরলের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। যা নানা রকমের জটিল অসুখের ঝুঁকি বাড়ে।
শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন
শরীরের ওজন বাড়তে দেওয়া যাবে না। উচ্চতার তুলনায় যদি ওজন খুব বেশি বেড়ে যায়, তবে সুস্থ মানুষের চেয়ে ২৯ শতাংশ মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাবে। আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সাময়িকীতে ২০১৩ সালে প্রকাশিত ১০০টিরও বেশি গবেষণা পর্যালোচনা করে গবেষকরা এই তথ্য পেয়েছেন। এ ছাড়াও ওজন বেড়ে গেলে হৃদরোগ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের আশঙ্কাও বেড়ে যায়।
ধূমপান ত্যাগ করুন
আমেরিকার ‘সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’-এর এক সমীক্ষা বলছে যে, যারা নিয়মিত ধূমপান করেন, তাদের আয়ু অন্তত ১০ বছর পর্যন্ত কমে যেতে পারে। সুস্থ ভাবে দীর্ঘায়ু পাওয়ার জন্য ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে- এমনই পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় বর্জন
‘ল্যানসেট’ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া বেশ কয়েকটি সমীক্ষার রিপোর্টে উঠে এসেছে যে, যারা সপ্তাহে ১৪ পেগ মদ্যপান করে থাকেন, তাদের ৬ মাস পর্যন্ত আয়ু কমে যেতে পারে। যারা সপ্তাহে ১৪ হতে ২৫ পেগ পর্যন্ত মদ্যপান করেন, তাদের ক্ষেত্রে আয়ু কমে যেতে পারে অন্তত এক থেকে দু’বছর। বিশেষ করে যারা সপ্তাহে ২৫ পেগের বেশি মদ্যপান করেন, তাদের ক্ষেত্রে আয়ু ৫ বছর পর্যন্ত কমে যেতে পারে। প্রায় ৬ লক্ষ মানুষের উপর সমীক্ষা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা।
থাকুন সবুজ প্রকৃতির সান্নিধ্যে
এক গবেষণায় দেখা যায় যে, সবুজ প্রকৃতির মধ্যে কিছুক্ষণ হেঁটে বেড়ালে মানসিক অবস্থার অনেক উন্নতি হয়। এতে করে রোগমুক্ত দীর্ঘায়ূ হওয়া সম্ভব। বিষণ্নতা দূর করতে হরে, সিজোফ্রেনিয়ার মতো সমস্যা দূর করতেও প্রকৃতির সান্নিধ্য খুব কাজে লাগবে। লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে, প্রতিদিন ৮০০ গ্রাম নানা ধরনের ফল ও সবজি খাওয়া হলে দীর্ঘজীবী হবার সম্ভাবনাও বাড়ে। তবে ৮০০ গ্রাম ফল ও সবজি একবারে না খেয়ে দিনে ১০বারে ভাগ করে খেতে হবে। সে জন্য প্রতিবার ৮০গ্রাম করে বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি খাওয়ার কথা বলেছেন বিষেশজ্ঞরা। গবেষকদের দাবি হলো, এভাবে খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ৮০ লাখ মানুষ অপরিণত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই উপরোক্ত নিয়ম মেনে জীবন যাপন করুন, তাহলে সুস্থ্য সুন্দরভাবে জীবন অতিবাহিত করতে পারবেন।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।