দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ওমিক্রনের আক্রমণে মানুষ এখন দিশেহারা। যদিও মৃত্যুঝুঁকি কম। তারপরও দ্রুত সময়ে ছড়িয়ে পড়ছে করোনার বর্তমান ধরণ ওমিক্রন।
বলা হয়েছে, এই ভাইরাসটি স্টিকের ওপরে ৮ দিন এবং মানুষের ত্বকে ২১ ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে। করোনার সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন সম্পর্কে এমনটাই উঠে এসেছে জাপানি বিজ্ঞানীদের নতুন গবেষণায়। জাপানি বিজ্ঞানীদের নতুন এই গবেষণায় আরেও বলা হয়, আগের ডেল্টা ধরনের চেয়ে বেশি দিন বাঁচতে পারে নতুন এই ধরণ ওমিক্রন।
কিয়োটো প্রিফেকচারাল ইউনিভার্সিটি অফ মেডিসিনের এক গবেষক দল বলছে একাধিক পরীক্ষাগার পরীক্ষার পর করোনা ভাইরাসের মূল স্ট্রেনের (উহান) চেয়েও অনেক বেশি সময় বেঁচে ছিল।
বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ানো করোনার নতুন ধরণ ওমিক্রন আগের সব ধরণগুলোর থেকেও বেশিদিন সক্রিয় থাকে। জাপানি গবেষকদের প্রতিবেদন বলছে যে, প্লাস্টিক এবং মানুষের ত্বকের উপরিভাগে ওমিক্রনের সক্রিয়তার হার প্রায় দ্বিগুন। মানুষের ত্বকে ডেল্টা যেখানে ১৬ ঘণ্টা সক্রিয় থাকতো সেখানে ওমিক্রন সক্রিয় থাকে প্রায় ১ দিনের মতো।
প্লাস্টিকের ওপর উহানে শনাক্ত হওয়া ধরণ বেঁচে থাকার সময় ছিলো ৫৬ ঘণ্টা, আলফা ধরণ ১৯১ দশমিক ৩ ঘণ্টা, বিটা ১৫৬ দশমিক ৬ ঘণ্টা, গামা ও ডেল্টা ভেরিয়েন্টের গড় বেঁচে থাকার সময় ছিল যথাক্রমে ৫৯ দশমিক ৩ ঘণ্টা ও ১১৪ ঘণ্টা।
তবে নতুন এই গবেষণায় দেখা যায় যে, ওমিক্রন ১৯৩ দশমিক ৫ ঘণ্টা বা ৮ দিন সক্রিয় থাকে। এমনকি ডেল্টার চেয়েও বেশি দিন বাঁচতে পারে ওমিক্রন। গবেষকরা বলছেন যে, ওমিক্রন করোনার অন্যান্য ধরনের তুলনায় পরিবেশের সঙ্গে খুব দ্রুত খাপ খাওয়ানর সক্ষমতাও বেশি।
এদিকে মৃত মানবদেহের ত্বকের নমুনাগুলোতে, করোনা ভাইরাসের বেঁচে থাকার গড় সময় ছিল উহানের ধরনের জন্য ৮ দশমিক ৬ ঘণ্টা, আলফার জন্য ১৯ দশমিক ৬ ঘণ্টা, বিটার জন্য ১৯ দশমিক ১ ঘণ্টা, গামা ১১ ঘণ্টা, ডেল্টার জন্য ১৬ দশমিক ৮ ঘণ্টা ও ওমিক্রনের জন্য ২১ দশমিক এক ঘণ্টা।
তবে গবেষকরা বলছেন যে, নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলি অ্যালকোহল-ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজারগুলির সংস্পর্শে আসলে ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে ত্বক থেকে সম্পূর্ণরূপে নিষ্ক্রিয় হবে। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মানা, হাত পরিষ্কার রাখা, স্যানিটাইজার ব্যবহার করাসহ মাস্ক পড়ার ওপর জোর দিয়েছেন জাপানের ওই গবেষকরা।
ইউরোপীয় সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল (ইসিডিসি) অনুসারে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রধান উদ্বেগ হিসাবে ওমিক্রন সংক্রমণ উল্লেখ করা হয়, যা ইইউ দেশগুলোতে অব্যাহত রয়েছে ও সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধিও করছে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকার চেষ্টা করি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।