দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফিলিস্তিনের মানুষ ৫৬ বছর ধরে শ্বাসরুদ্ধকর দখলদারিত্বের শিকার হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে এই কথা বলেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন যে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে যে হামলা চালিয়েছিল, সেটি ‘শূন্য থেকে’ হয়নি।
গুতেরেস আরও বলেন, আসলে হামাসের হামলা শূন্য থেকে হয়নি। ফিলিস্তিনের মানুষ ৫৬ বছর ধরেই শ্বাসরুদ্ধকর দখলদারিত্বের শিকার হয়েছেন। তারা তাদের ভূখণ্ড বসতিতে পরিণত হতে ও সহিংসতায় জর্জরিত হতে দেখেছেন। তাদের অর্থনীতিও থমকে গেছে। এই মানুষগুলো বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। তাদের দুর্দশার রাজনৈতিক সমাধানের আশাও ধূলিসাৎ হয়ে গেছে।
নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে জাতিসংঘের মহাসচিব আরও বলেছেন, তবে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার কারণে হামাসের ভয়ংকর হামলা ন্যায্যতা পেতে পারে না। আবার ওই ভয়ংকর হামলার কারণে ফিলিস্তিনি মানুষদের সম্মিলিতভাবে যে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, তাও ন্যায্যতা পায় না।
ইসরায়েলের নাম উল্লেখ না করে গুতেরেস বলেন, বেসামরিক লোকজনকে রক্ষা করার অর্থ কিন্তু তাদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা নয়। সুরক্ষা দেওয়ার অর্থ এই নয়, ১০ লাখ মানুষকে দক্ষিণে চলে যেতে বলা, যেখানে কোনো আশ্রয়ও নেই, খাবার নেই, পানি নেই, ওষুধ নেই ও জ্বালানি নেই। মানুষকে দক্ষিণে যেতে বলে সেখানেও বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গাজায় মানবিক আইনের যে সুস্পষ্ট লঙ্ঘন আমরা তা দেখতে পাচ্ছি, তা নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমি স্পষ্টভাবেই বলছি, এমন সংঘাতে কোনো পক্ষই আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ছিলো হামাস। সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল বাহিনী। পুরো উপত্যকাটি অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, ১৮ দিন ধরে চলা হামলায় সেখানে ৫ হাজার ৭৯১ জনের মৃত্যু ঘটেছে। অপরদিকে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি।
এদিকে গুতেরেসের এইসব মন্তব্যের পর তার পদত্যাগ দাবি করেছেন জাতিসংঘের ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলার্ড এরডান। এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে তিনি বলেছেন, যারা ইসরায়েলের নাগরিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সবচেয়ে ভয়ংকর কর্মকাণ্ডের পেছনে যুক্তি দেখাতে চাইছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। আমি অনতিবিলম্বে তার (আন্তোনিও গুতেরেস) পদত্যাগ দাবি করছি।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org