দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে কাজ করার কারণে পিঠ-কোমরের যন্ত্রণায় অনেকেই ছটফট করেন। তবে চিকিৎসকরা বলেছেন, এই ধরনের অভ্যাস শুধুমাত্র ব্যথা-যন্ত্রণা নয়, বড় কোনও বিপদ ডেকে আনতে পারে।
আপনি অফিসে ঢোকা মাত্রই একগুচ্ছ ফাইল জমা পড়েছে। এক ঘণ্টার মধ্যেই সবকিছু সেরে ফেলতে হবে। এরপর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মিটিং। সেইসব কাজ করতে গিয়ে শৌচাগারে যাওয়ার সময়ও হয় না। যতোক্ষণ না পেট ফেটে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে ততোক্ষণ কাজ করেই যেতে হয়। এরপর চেয়ার ছেড়ে উঠতে গেলে পিঠ-কোমর জানান দেয়। রাতে শুয়েও যেনো শান্তি নেই। পিঠ-কোমরের যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন। দীর্ঘক্ষণ বা টানা চেয়ারে বসে কাজ করার কারণে অনেকেই এমন সমস্যার সম্মুখীন হন। তবে চিকিৎসকরা বলেছেন, এই ধরনের অভ্যাস শুধুমাত্র ব্যথা-যন্ত্রণা নয়, বড় কোনও বিপদ ডেকে আনতে পারে।
দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে থাকলে কী সমস্যা হতে পারে?
পা, পায়ের পাতা ফুলে উঠতে পারে
দীর্ঘক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসে থাকলে অনেকের পায়ের পাতা ফুলেও যেতে পারে। আবার আকারে বড় হয়ে যায়। ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়েটেকনোলজি ইনফরমেশন-এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে যে, দীর্ঘক্ষণ পা ঝুলিয়ে চেয়ারে বসে থাকলে শরীরের যাবতীয় ফ্লুইড পায়ের পাতায় এসে জমা হতে পারে। যে কারণে পা ফুলতে থাকে। কারও কারও আবার পায়ে রক্ত জমাট বাঁধতেও দেখা যায়।
কোমর ও নিতম্বের পেশিতে ব্যথা
দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে থাকলে অনেকের পিঠ, কোমরে ব্যথা হতে পারে। হার্ভার্ড হেল্থ পাবলিশিং-এর দেওয়া তথ্য বলছে যে, এইভাবে টানা চেয়ারে বসে থাকলে কোমরের একেবারে শেষপ্রান্তে থাকা ‘সিট বোন’এর উপর অত্যধিক চাপও পড়ে। যে কারণে সেই সংলগ্ন স্নায়ু, পেশি, নরম হাড় ক্ষতিগ্রস্তও হয়। এই ধরনের ব্যথা খুব একটা সাধারণ নয়, সুদূরপ্রসারী।
ওজন বেড়ে যাওয়া
হয়তো আপনি ওজন বেড়ে যাওয়ার মতো কিছুই খাচ্ছেন না। তা-ও চড়চড় করে ওজন বেড়েই যাচ্ছে। এই বিষয়ে চিকিৎসকরা বলেছেন, মেদ জমতে দেখলে প্রথমে খাবারের উপরে কোপ পড়ে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে মানুষ দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় বসে বসেই ওজন বাড়িয়ে ফেলছেন। নিয়মিত শরীরচর্চা কিংবা বেশি নড়চড়া না করলে এই ধরনের প্রবণতা আরও বেশি দেখা যায়।
অতিরিক্ত ক্লান্ত বোধ করা
শুধুই যে ঘুম পাচ্ছে, তা কিন্তু নয়। আবার অনেক সময় খুব কাজ করে যে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন, তা-ও কিন্তু নয়। কোনও কাজই করতে ভালো লাগছে না আপনার। দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় বসে থাকলে এমনটি হতেই পারে। তাই কাজের মাঝে বিরতি নেওয়া দরকার।
হাড়ের গঠন ও ভঙ্গি সংক্রান্ত সমস্যা
পেট মুড়ে, মেরুদণ্ড বেঁকিয়ে বসার যদি অভ্যাস করে ফেলেন, তাহলে হাড়ের গঠন, ভঙ্গি সংক্রান্ত সমস্যা হতে কিন্তু বাধ্য। যা পরবর্তীকালে স্পন্ডিলাইটিস, ভার্টিগো-র মতো রোগও ডেকে আনতে পারে। আবার ঘাড় বা কাঁধের পেশির নমনীয়তাও নষ্ট করতে পারে।
বেশি করে হাঁটুন
দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে কাজ না থেকে যদি সম্ভব হয়, এক ঘণ্টা অন্তর অন্তর হেঁটে আসুন। তাতে শরীরের সমস্ত পেশিই সচল থাকবে।
স্ট্রেচিং করুন
কাজ ছেড়েও হাঁটতে যেতে পারছেন না? তাতে ক্ষতি নেই, স্ট্রেচিং করুন। পিঠ, কোমর, পায়ের স্ট্রেচিং করার বিশেষ কিছু ভঙ্গিও রয়েছে। কাজের মধ্যে সেগুলো করতে পারলে ব্যথা-বেদনা এড়ানো যেতেই পারে।
কিছুক্ষণ অন্তর বিরতি নেওয়া
কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ, সময়ের অভাব তো থাকতেই পারে। তবু পিঠ-কোমরের সমস্যা এড়িয়ে যেতে মাঝে-মধ্যে বিরতি নিতে হবে। তাতে শুধু ব্যথা-বেদনায় নয়, চোখ ও মাথারও বিশ্রামও হবে খুব সহজেই। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org