দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যেমন এক দিকে রয়েছে সংসারের দায়িত্ব, অপরদিকে পেশাগত জায়গায় কাজের চাপ— দুই মিলিয়ে মনের উপর যেনো জগদ্দল পাথর চেপে বসে মাঝে-মধ্যে। মন শান্ত রাখা তো দূরে থাক, মনঃসংযোগই নষ্ট হয়ে যায় অনেক সময়। তাহলে উপায় কী?
অফিসে কাজ করতে বসলেই মাথায় গিজগিজ করতে থাকে হাবিজাবি নানা চিন্তা? অল্পেই উদ্বেগও বাড়ে। মন সারাক্ষণই চঞ্চল, অস্থির থাকে। দুশ্চিন্তা মন, মস্তিষ্ক একেবারে কুরে কুরে খায়। প্রবল মানসিক চাপে হিমশিম খেতে হয় তখন। একদিকে সংসারের দায়িত্ব, অপরদিকে পেশাগত জায়গায় কাজের চাপ— দুই মিলিয়ে মনের উপর যেনো জগদ্দল পাথর চেপে বসে মাঝে-মধ্যেই। মন শান্ত রাখা তো দূরে থাক, মনঃসংযোগই নষ্ট হয়ে যায় অনেক সময়।
এই বিষয়ে মনোবিদরা বলেছেন, পাহাড়প্রমাণ চাপের মধ্যেও মন শান্ত রাখলে, সব কাজই সঠিকভাবে করা যেতে পারে। সেজন্য ধৈর্য এবং মনের জোর বাড়াতে হবে। মনের চাপ বাড়লে তা অবসাদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাহলে এইক্ষেত্রে কী করণীয়?
এই বিষয়ে মনোরোগ চিকিৎসক শর্মিলা সরকার বলেছেন, “পারিপার্শ্বিক ঘটনাপ্রবাহ হোক কিংবা পেশাগত ক্ষেত্রের চাপ সামলাতে ও নিজের মনকে শান্ত রাখতে শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজরও দিতে হবে। শরীর ঠিক রাখতে বিভিন্ন রকম ব্যায়াম, মেডিটেশন কিংবা ধ্যান রাখা জরুরি। মন ভালো রাখতে নিজেকে সময় দিতে হবে। যতোটা সম্ভব নেটমাধ্যম থেকে দূরেও থাকতে হবে। নেতিবাচক খবর পড়া, নেটমাধ্যমে সারাদিন অন্যের পোস্ট দেখা ও তা নিয়ে চর্চা করলে নিজের মনের চাপ উত্তরোত্তর আরও বাড়তে থাকবে।”
গত কয়েক দশক ধরে মানসিক চাপ মানুষের ইচ্ছাশক্তি আরও হ্রাস করেছে। আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়িয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। সময়ের তুলনায় ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়া এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতার সঙ্গে নিজেকে খাপ না খাওয়াতে পারার বিষয়টি, এ সবের জন্য থাবা বসাচ্ছে অবসাদ। তবে জীবনকে যদি একটু গুছিয়ে নিয়ে লক্ষ্য স্থির রাখতে পারেন, তাহলে মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় খুব সহজেই। এই বিষয়ে মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের মত হলো, “মাল্টিটাস্কিং কোনও কাজে আদতেও মন দিতে দেয় না। বরং অ্যাড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণ করে মানসিক চাপ আরও বাড়ায়। তাই মাল্টিটাস্কিং ছেড়ে বরং এক একটি কাজকে ‘লক্ষ্য’ করে এগিয়ে যেতে হবে। এতে করে কমবে মানসিক চাপ। প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার পর কিছুটা সময় বরাদ্দ রাখুন শ্বাসের ব্যায়াম এবং মেডিটেশনের জন্য। সারাদিনের কাজ, ব্যস্ততা, হুড়োহুড়িকে সামলাতে এর বিকল্প নেই।”
বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, কেবলমাত্র দায়দায়িত্ব কিংবা কাজকর্ম থেকেই যে মানসিক চাপ তৈরি হয় তা কিন্তু নয়, চারপাশের সম্পর্কগুলো থেকেও প্রচণ্ড অস্থিরতা এবং উদ্বেগ তৈরি হতে পারে। যেমন ধরুন, সহকর্মী কিংবা বসের সঙ্গে সম্পর্ক বা পরিবারের ঘনিষ্ঠ মানুষগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের রসায়ন কেমন সেইসব কিছুও কিন্তু মনের উপর প্রভাব ফেলে। যে কোনও সম্পর্কে সমস্যা তৈরি হলে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সমাধানের চেষ্টাও করুন। প্যারানয়েড ব্যক্তিত্বের মানুষ প্রচুর রয়েছে প্রায় প্রতিটি সংসারে। যারা অন্যদের ব্যঙ্গ–বিদ্রূপ করেই বেশি আনন্দ পান। তেমন মানুষকে এড়িয়ে চলুন কিংবা উপেক্ষা করতে শিখুন। তাই অবশ্যই আপনাকে রাগ পুষে রাখার অভ্যাস ছাড়তে হবে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org